নাঙ্গলকোটে ইউপি নির্বাচন: সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কিত ভোটার ও প্রার্থীরা

নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ২০:৩৯

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর)। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা, সংঘর্ষ, হুমকিসহ পেশিশক্তির তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ নিয়ে শঙ্কিত ভোটার ও প্রার্থীরা।

উপজেলার রায়কোট উত্তর, রায়কোট দক্ষিণ, বটতলী, দৌলখাঁড়, জোড্ডা পূর্ব, জোড্ডা পশ্চিম, আদ্রা উত্তর ও আদ্রা দক্ষিণ ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮ থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।

এ সব ইউপির পাশাপাশি আশপাশের চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম, মনোহরগন্জ এবং নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী, সেনবাগ উপজেলার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন। কারণ সন্ত্রাসীরা এখন থেকেই এলাকায় হুমকি-ধামকি দেওয়া শুরু করেছে।

তারা বলছেন, গত ইউপি নির্বাচনের দিন এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিদ্বন্দ্বী সাধারণ প্রার্থী ও ভোটারদের মাঝে ভীতি কাজ করছে।

গত শনিবার দুপুরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম ও পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান মত বিনিময়ের সময় অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ভয়ভীতি ও হুমকি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। এ সময় ডিসি ও এসপি একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন।

এদিকে রায়কোট উত্তর ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা জাফর আহমদ গত ২৪ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে সন্ত্রাসীদের তৎপরতায় সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। একইভাবে রায়কোট দক্ষিন ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজ খন্দকারও সংবাদ সম্মেলনে ইউপি নির্বাচনে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে প্রতিপক্ষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র দখলসহ সহিংস ঘটনা ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া আদ্রা উত্তর ইউপি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছির উদ্দীন রতন অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বহিরাগত সন্ত্রাসী দ্বারা তার ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা ও কেন্দ্র দখলের প্রস্তুতি নিয়েছে। জোড্ডা পশ্চিম ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মাসুদ রানা ভূইয়া, ডা. শাহজাহান ভূইয়া, জোড্ডা পূর্ব ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল আওয়াল ফিরোজ, রায়কোট উত্তর ইউপি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী শাহআলম, জাফর আহাম্মদ মজুমদার ও রায়কোট দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলাম ভূইয়া মিনু সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

তবে সবগুলোর মধ্যে রায়কোট ইউনিয়নের দুটি অংশই বেশি ঝুকিপূর্ণ বলে জানা গেছে। মূলত এ দুই ইউপিতে আ.লীগের প্রার্থী থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভালো অবস্থানে রয়েছেন বলে ভোটাররা মনে করছেন। সেজন্য এ ইউপিতে যেকোনো মূল্যে জিততে মরিয়া সরকার দলীয় নেতা কর্মীরা। জয় পেতে তারা স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। তারা পুলিশকে দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা নেতা কর্মীদের।

ওসি ফারুক হোসেন নিজেকে আ.লীগের বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড বলে পরিচয় দিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়েই কোনো রকম মামলা না থাকা সত্বেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নেতাকর্মীদের ধরতে রাত বিরাতে তাদের বাড়িঘরে যাচ্ছেন।

মঙ্গলবার রাতে রায়কোট দক্ষিণ ইউপির বিটের দায়িত্বে নিয়োজিত এসআই পলাশ বড়ুয়ার নেতৃত্বে ঝাটিয়াপাড়া বাজার ও বাসন্ডা গ্রাম থেকে ৪ জনকে আটকের পর ছেড়ে দেয়া হয়। তারা সবাই চশমা মার্কার কর্মী বলে দাবি করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খন্দকার মাহফুজুল হক। এতে চশমা ও ঘোড়া মার্কার নেতাকর্মী ও স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাত থেকেই প্রচার প্রচারণা বন্ধের সময় হলেও নাঙ্গলকোট উপজেলা আ.লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন কালু বিভিন্ন জায়গায় নৌকা প্রতীকের পক্ষে সভা সমাবেশ করেন।

বুধবার সকালও তিনি রায়কোট ইউপির মাহিনী বাজার ও দক্ষিনের মন্তলী, বাসন্ডা ও ঝাটিয়াপাড়াতে পথ সমাবেশ করে বক্তৃতা দেন। এ সময় তিনি বলেন, 'আমরা পুলিশ প্রশাসনকে বলে দিয়েছি সরকার বিরোধী কোনো প্রার্থী যেন নির্বাচনের নামে মাঠে থাকতে না পারে। আশা করি পুলিশও সে হিসেবেই কাজ করবে'।

তিনি এ সময় আরো বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট আদায়ের জন্য যা যা করা দরকার আমরা সব ব্যবস্থাই নেবো। আপনারাও নৌকা ছাড়া অযথা অন্য কোনো মার্কায় ভোট দিয়ে সেটা নষ্ট করবেন না।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগ, উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেই নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করে চলছেন প্রতিনিয়ত। তিনি আইন লঙ্গন করে সভা সমাবেশে ভোটারদেরকে হুমকি-ধমকি ও ভয়-ভীতি দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রাথী নজরুল ইসলাম মিনু। উপজেলা চেয়ারম্যান ও পুলিশের অভিযানে ভোটাররা আতংকে রয়েছেন।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, এ নির্বাচনে কোনো প্রার্থী পেশি শক্তি ব্যবহার করতে চাই পুলিশ তাঁদের প্রতিহত করবে। প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে।

এদিকে গত ১২ ডিসেম্বর রাতে জোড্ডা পশ্চিম ইউপির মান্দ্রা বাজারে নৌকার সমর্থক ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৭ জন আহত হন। ২০ ডিসেম্বর দৌলখাঁড় ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ এহতেশাম হায়দারের গাড়ি ভাঙচুর ও কর্মীদের মারধরের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

২১ ডিসেম্বর জোড্ডা পূর্ব ইউপি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মিয়াজির পক্ষে টিপু নামের এক যুবক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রার্থী নুরুল আফসারের মামাতো ভাই মিজান মিয়ার বাজারে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেন।

(ঢাকাটাইমস/২৭ডিসেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :