রোগপ্রতিরোধে অব্যর্থ ঔষধ ডার্ক চকলেট! যেভাবে বানাবেন

প্রকাশ | ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:৩২

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ডার্ক চকলেটের রয়েছে জাদুকরী গুণ যা সবাইকে আকর্ষণ করে। ডার্ক চকোলেট ভালোবাসেন না, এরকম মানুষ কমই দেখা যায়। এক টুকরো চকলেট মুখে দিলেই আমরা বেশ ফুরফুরে বোধ করি৷ উপহার হিসাবেও ডার্ক চকোলেট দারুণ প্রিয়। নিজের জন্যেও বাড়িতে বানিয়ে রাখতে পারেন ডার্ক চকোলেট। কারণ ডার্ক চকোলেটের রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা।

গবেষণা বলছে সকালে উঠে অল্প পরিমাণে ডার্ক বা কনসেনট্রেটেড চকলেট খেতেই পারেন। তাতে রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। ক্ষুধাও কম পাবে। ডার্ক চকলেটের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। ডার্ক চকলেটে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান, শরীরে প্রবেশ করা মাত্র টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ডার্ক চকলেট খেলে ক্যানসারও দূরেও থাকে।

ভালো মানের কালো বা ডার্ক চকলেটে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান। ৭০-৮৫ ভাগ কোকোয়াসমৃদ্ধ চকলেটকেই বলে ডার্ক চকলেট। এতে আছে আঁশ, লোহা, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ম্যাংগানিজ, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম। দিনে অল্প পরিমাণ ডার্ক চকলেট খেলেও ৫০ ভাগ পর্যন্ত হৃদ্রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়। নিয়মিত চকলেট খেলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও শারীরিক প্রদাহ রোধেও ডার্ক চকলেট সহায়তা করে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, শুক্রাণুর কর্মক্ষমতা বাড়ায় ডার্ক চকলেট! ডার্ক চকলেটে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড, এল-আর্জিনিন এইচসিএল যা শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ায়। এ ছাড়া পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করতে ডার্ক চকলেট বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা যৌন উদ্দিপনা বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখে।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে সবপুরুষ নিয়মিত সামান্য পরিমাণে হলেও ডার্ক চকলেট খান, তাদের যৌন ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে বেশি। বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি কমাতে, শুক্রাণুর সংখ্যা আর কর্মক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত খান ডার্ক চকলেট।

দৈনিক ২৫ গ্রাম চিনি ছাড়া ডার্ক চকলেট খেলে ৮ সপ্তাহ পর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে। ডার্ক চকলেটে থাকা পলিফেনল ও থিওব্রোমিন নামক যৌগ রক্তের লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন অর্থাৎ এলডিএল নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি এইচডিএল অর্থাৎ ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে হার্ট ভাল রাখতে সাহায্য করে। এই খাবারটির আর এক গুণ শরীরের ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। এর ফলে আর্থ্রাইটিস, টাইপ টু ডায়াবিটিস ও কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। এক সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে ডার্ক চকলেটে থাকা ফ্ল্যাভ্যোনলস নিউরোডিজেনারেটিভ পদ্ধতির গতি কমিয়ে দিয়ে অ্যালজাইমার্স ও পার্কিনসন্স অসুখ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

তবে সম্প্রতি কনজিউমার রিপোর্টের এক গবেষণা অনুযায়ী, বেশ কিছু নামী সংস্থার ডার্ক চকোলেট বারে ক্যাডমিয়াম ও সীসা থাকে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ভাল নয়।

বিজ্ঞানীরা ২৮টি সংস্থার ডার্ক চকোলেট বার পরীক্ষা করে দেখেছেন, সব ক'টিতেই ভাল মাত্রায় ক্যাডমিয়াম ও সীসা আছে। নানা পরীক্ষা করে, দেখা গিয়েছে ২৩টি সংস্থার ডার্ক চকোলেটের মাত্র ২৪ গ্রাম সারা দিনে খেলেই শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। মাত্র ৫টি সংস্থার ডার্ক চকোলেট বারেই ক্যাডমিয়াম ও সীসার মাত্রা খাওয়ার যোগ্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ দিন ধরে সামান্য মাত্রায় এই সব ধাতু শরীরে ঢুকলে মস্তিষ্কের বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। শিশুদের শরীরে উপর এর প্রভাব মারাত্মক।

কনজিউমার রিপোর্টের খাদ্য সুরক্ষা গবেষক টুন্ডে একিনলে বলেছেন, ‘‘এই সব ডার্ক চকোলেট বার যে কোনও বয়সি মানুষের শরীরেই খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে, প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে বেশি মাত্রায় সীসা জমতে থাকলে স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, কিডনির ক্ষতি এবং গর্ভধারণেও সমস্যাও হতে পারে।’’

কনজিউমার রিপোর্টের গবেষণা অনুযায়ী, হার্শে’জ-এর স্পেশাল ডার্ক মাইল্ডলি সুইট চকোলেটের ২৮ গ্রামে সুরক্ষামাত্রার ২৬৫ শতাংশ বেশি সীসা মিলেছে এবং ট্রেডার জো’স-এর ডার্ক চকোলেট ৭২ শতাংশ বেশি এবং কাকাও-এর চকোলেটে ১৯২ শতাংশ বেশি সীসা মিলেছে।

ডার্ক চকলেটের মূল উপাদান হলো কোকো পাউডার। কোকো বীজ থেকে তৈরি হয় কোকো পাউডার। কোকো বীজ শুকিয়ে তাকে ফারমেনটেশন করে তারপর বীজগুলো রোস্ট করে গুঁড়া করতে হয় যা, কোকো পাউডার নাম পরিচিত। কোকো গাছের বীজের তীব্র তেতো স্বাদ রয়েছে। পাউডারে যেসব পুষ্টি উপাদান থাকে সেগুলো হলো – ক্যালোরি: ৪৯, কার্বোহাইড্রেট: ১২ গ্রাম, ফাইবার: ৭ গ্রাম, প্রোটিন: ৪ গ্রাম, ফ্যাট: ৩ গ্রাম।

বাজারে অনেক ধরনের ডার্ক চকোলেট পাওয়া যায়৷ ১০০ গ্রাম একটি চকোলেট বারে ৭০ শতাংশ বা তার বেশি পরিমাণে কোকো থাকলে সেটি ডার্ক চকলেট। তবে বাজারজাত চকোলেট শরীরের জন্য ভাল হয় না, অনেক ক্ষেত্রেই। তাই দোকান থেকে না কিনে, বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন চকোলেট। এর গুণমান যেমন ভাল হবে, তেমন অফুরান আনন্দ দিতে পারবেন সেই বিশেষ মানুষটিকে। দেখে নিন বাড়িতে তৈরি ডার্ক চকোলেটের সহজ রেসিপি

 

উপকরণ (৪ জনের পরিমাণের)

কোকো পাউডার: ৫ টেবিল চামচ

গুঁড়া দুধ: ৩-৪ টেবিল চামচ

ময়দা: পরিমাণ মতো

মাখন: ১০০ গ্রাম

চিনি: ২/৩ কাপ

ভ্যানিলা এসেন্স: পরিমাণ মতো

 

প্রণালী

মিক্সার গ্রাইন্ডারে কোকো পাউডার ও মাখন একসঙ্গে মিশিয়ে নিন ভাল করে। চুলায় একটি পাত্র বসিয়ে এক চতুর্থাংশ পানি দিয়ে, অন্য একটি তুলনামূলক ছোট পাত্রে মিশ্রণটি ঢেলে বসিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে, মিশ্রণটি অনবরত নাড়াচাড়া করতে থাকুন। খেয়াল রাখতে হবে, তা পোড়া না লেগে যায়। কিছুক্ষণ গরম করার পর মিশ্রণটি ফের মিক্সার গ্রাইন্ডারে পেস্ট করে নিন। এবার সেই মিশ্রণটি অন্য পাত্রে ঢেলে ভাল করে চিনি মিশিয়ে নিন। এরপর সামান্য ময়দা ও গুঁড়া দুধ মিশিয়ে একটা ঘন ব্যাটার তৈরি করে ফের মিক্সার গ্রাইন্ডারে পেস্ট করে নিন। কিছুক্ষণ বাইরে রেখে, চকোলেট মোল্ডে ঢেলে ফ্রিজে রাখুন। এই মিশ্রণের মধ্যে চাইলে ড্রাই ফ্রুটসও দিতে পারেন, তাহলে তৈরি হবে ফ্রুট অ্যান্ড নাট চকোলেট। ফ্রিজ থেকে বের করে সুন্দর করে সাজিয়ে উপহার দিন ডার্ক চকোলেট।

ঢাকাটাইমস/২৮ ডিসেম্বর/আরজেড)