যেসব খাবার শরীরের জন্য বিষ

প্রকাশ | ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:১৬ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:২৬

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

মানুষের সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য খাবার গ্রহণ করা জরুরি। দৈনন্দিন জীবনে শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সবারই ক্ষেত্রে কিছু খাবারের অভ্যাস ভালো খাবারের পুষ্টিগুণ থেকে আমাদের বঞ্চিত করে। সেই সঙ্গে শরীরে তা কাজ করে ধীরগতির বিষের মতো। তাই ভালো খাবারের পুষ্টিগুণগুলো পেতে এবং শরীরে ধীরগতির বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করতে অবশ্যই অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস থেকে নিজ ও পরিবারকে দূরে রাখা উচিত।

কোনো কোনো খাবার রয়েছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের মৃত্যুও ঘটাতে পারে। আবার কোনো কোনো খাবারের কারণে ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা না গেলেও তা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ক্ষতি করে থাকে। ত্বকের যত্ন ও সুরক্ষার জন্য যতই রূপচর্চা করুন না কেনো, ডায়েট লিস্টে যদি ক্ষতিকর খাবারকে প্রাধান্য দেন তবে তা আপনার ত্বকের ক্ষতির পাশাপাশি সুস্বাস্থ্যকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে।

স্কিন বিশেষজ্ঞ ও ডায়েটেশিয়ানের মতে, নিয়মিত এই বিষাক্ত খাবারকে প্রাধান্য দিতে থাকলে আপনার ত্বকে বলিরেখা, ব্রণের মতো সমস্যা তো দেখা দেবেই, সঙ্গে রক্তের বিশুদ্ধতা নষ্ট হয়ে নানান রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করবেন আপনি।

শরীরে মেদ জমার পাশাপাশি রক্তে শর্করা আর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এসব মারাত্মক খাবার। বিষ হলেও খেতে ভীষণ সুস্বাদু এই খাবারগুলোকে আমরা হরহামেশাই খেয়ে ফেলি।

বেশি তেল জাতীয় খাবার আমাদের শরীর এবং ত্বকের জন্য একদমই ভালো নয়। এতে ত্বকের ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। আমাদের জানতে হবে কোন খাবার গুলো ত্বকের যত্নে পুষ্টিকর আর কোনগুলো ত্বকের জন্য ভালো নয়। তাই আসুন আজ আমরা জেনে নেই ত্বকের যত্নে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন-

 

ফাস্টফুড এবং ভাজাপোড়া

স্বাদে লোভনীয় হলেও অতিরিক্ত ক্যালোরিসম্পন্ন এসব খাবার শরীরে মুটিয়ে যাওয়ার ভাব নিয়ে আসে। আর অতিরিক্ত ওজনের জালে ফেঁসে আপনার জীবনকে আরও নানা রোগে বেঁধে ফেলতে থাকে এসব খাবার। তাই বিষের মতো তাৎক্ষণিক মৃত্যু না হলেও, কিছু বুঝে ওঠার আগেই এই খাবারের কারণে ধীরে ধীরে হঠাৎ মৃত্যুর ফাঁদে জীবন হারাবেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

তেল, মশলা ও ঝালযুক্ত খাবার

রান্নায় তেল, মশলা ও ঝালকে প্রাধান্য দিলে ত্বকের পাশাপাশি শরীরে মারাত্মক ক্ষতি করে। নিয়মিত এই ধরনের খাবার খাওয়ার অভ্যাস নানা জটিল রোগে আক্রান্ত করার পাশাপাশি ত্বকে ব্রণ, র‌্যাশের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে।

 

কোল্ড ড্রিংকস ও অ্যালকোহল

 

কোল্ড ড্রিংকস ও অ্যালকোহল এই দুই ধরনের পানীয়ই শরীরকে মারাত্মকভাবে ড্রিহাইড্রেট করে তোলে। যা ধীরে ধীরে আপনার ত্বকের ঔজ্জ্বল্য কেড়ে নেয়। পাশাপাশি অকালে ডেকে আনে বার্ধক্যও। ত্বকে ব্রন, বলিরেখা সহ নানান রকম সমস্যা দেখা দিবে। তাই অ্যালকোহল খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

 

কার্বোহাইড্রেট

অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন পাউরুটি, চকলেট, পাস্তা, সোডা ইত্যাদি খাবার শরীর ও ত্বকের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। এসমস্ত খাবার খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলুন।

 

চিনি

চিনি শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। খুব বেশি পরিমাণে চিনি খেলে শরীরে কোষের ক্ষতি হয়। চিনি বেশি পরিমাণে খেলে শরীরে গ্লাইকেশন নামের একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হয়। এটিই মূলত ত্বকের ক্ষতির জন্য দায়ী। চিনি রক্তপ্রবাহে প্রোটিনের সঙ্গে খুব সহজে মিশে গিয়ে, অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন অ্যান্ড প্রোডাক্টস নামক ক্ষতিকর ফ্রি র্যা ডিক্যাল উৎপাদন করে। এছাড়া চিনি ওজন বাড়িয়ে দেয় অনেক। তাই যতটা সম্ভব চিনি কম খাওয়ায়র চেষ্টা করুন।

 

লবণ

খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া একদমই উচিৎ নয়। এতে ত্বকের ক্ষতি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে চোখের নিচে কালি পড়ে যায়। অনেকের মুখের ফোলা ভাব চলে আসে। অনেক সময় দেখা যায় ঘুম পর্যাপ্ত হলেও চোখের নিচে কালো দাগ থেকেই যায়। তাই ত্বকের যত্নে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

 

আপেলের বিচি

আপেলের বিচির ভেতর খানিকটা পরিমাণে সায়ানাইড থাকে। ফলে কারো শরীরের ভেতর যদি বেশি পরিমাণে আপেল বিচি বা বিচির নির্যাস প্রবেশ করে, তাহলে তা তাকে মেরে ফেলার মতো সায়ানাইড তৈরি করতে পারে। আর সায়ানাইড হলো একটি মারাত্মক ধরনের বিষ।

 

বুনো মাশরুম

মাশরুমের ১০ হাজার জাতের মধ্যে বাংলাদেশে চাষ হয়ে থাকে ৮-১০টি জাতের। কিন্তু বাংলাদেশেই পাওয়া যায় মাশরুমের এমন অনেক জাত, বিশেষ করে বুনো মাশরুম, যা অনেক সময় শরীরের জন্য বিষাক্ত ও ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হতে পারে।

 

ধুতরা ফুল ও ফল

 

একসময় বাংলাদেশি বিভিন্ন কবিরাজি ওষুধে এই ফলের ব্যবহার হতো। কিন্তু এটি অত্যন্ত বিষাক্ত একটি ফল এবং এর পাতাও বিষাক্ত হয়ে থাকে। শরীরের ও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।

 

শেকড় জন্মানো আলু

আলুতে শেকড়ের জন্ম হলে সেখানে গ্লাইকোঅ্যালকালোইড নামের এক ধরনের উপাদান তৈরি হয়। বিশেষ করে, দীর্ঘদিন যাবৎ আলু পড়ে থাকলে এই ধরনের উপাদানের জন্ম হয়। অনেক সময় গাছের পাতায় বা কাণ্ডেও এই উপাদান থাকে। বিশেষ করে, আলুর গায়ে শেকড় জন্মালে যে লাল রঙের গাদ তৈরি হয়, সেখানে এই উপাদান বেশি থাকে। পুষ্টিবিদের মতে, এই গ্লাইকোঅ্যালকালোইড শরীরে প্রবেশ করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া ডায়ারিয়া, মাথাব্যথা, এমনকি মানুষ কোমায়ও চলে যেতে পারেন।

 

খেসারি ডাল

বাংলাদেশে মসুর ও মুগডালের পাশাপাশি অনেকের খাদ্য তালিকায় খেসারি ডালও থাকে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ডালে বোয়া নামের এক প্রকার অ্যালানাইন অ্যামিনো অ্যাসিড থাকতে পারে, যা বিষাক্ত নিউরোটক্সিন তৈরি করে। ত্বক ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এই অ্যাসিড 'নিউরো-ল্যাথারিজম' বা স্নায়ুবিক পঙ্গুতা তৈরি করতে পারে। এই রোগের লক্ষণ অনেক সময় হঠাৎ করেই দেখা দেয়। এতে করে হাঁটতে গিয়ে অসুবিধা এবং অসহ্য যন্ত্রণা হওয়া কিংবা পা অবশ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পরে।

 

টমেটো গাছের পাতা

টমেটো গাছের পাতা এবং কাণ্ডে অ্যালকালাই থাকে, যা পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কাঁচা টমেটোর ভেতর এই উপাদান থাকে বলে মনে করা হয়। এই কারণে ভালো করে রান্না না করে কাঁচা টমেটো খাওয়া উচিত নয়। কারণ, বেশি পরিমাণে কাঁচা টমেটো খেলে যে কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।

ঢাকাটাইমস/২৯ ডিসেম্বর/আরজেড)