শীতের ঠান্ডায় শরীর গরম রাখবে যেসব খাবার খেলে

প্রকাশ | ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:০৮

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

চারিদিকে জেঁকে বসেছে শীত। শীতকালে আমাদের শরীরের তাপমাত্রার তুলনায় পরিবেশের তাপমাত্রা কম থাকে, তাই তাপ আমাদের শরীর থেকে পরিবেশে প্রবাহিত হয়, এবং আমরা ঠান্ডা অনুভব করি। শীতের হাত থেকে বাঁচতে গরম কাপড়ের পাশাপাশি এমন কিছু খাবার খাওয়া উচিত, যা শরীরকে ভেতর থেকে গরম রাখে ও আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরের সচলতা অনেকাংশেই নির্ভর করে খাবারের ওপর। অর্থাৎ ঠিক ঠিক খাবার খেলে শরীর ঠিক থাকবে, আর যদি ঠিক মতো খাবার না খাওয়া হয়, তবে বিভিন্ন রোগ চেপে বসবে। সেই কারণেই তো শীতকালে সুস্থ-সবল থাকতে নিজের ডায়েট প্ল্যানের দিকে একবার নজর দিতে হবে। এখানে জানুন এমন কিছু খাদ্যবস্তু সম্পর্কে যা ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচাতে পারে এবং শরীর গরম রাখতে সাহায্য করবে।

 

মধু

মিষ্টি পছন্দ করলে চিনির স্থানে মধু খান। সর্দি, কাশির হাত থেকে মধু রক্ষা করে। প্রাকৃতিকভাবেই মধু নানা গুণের অধিকারী। এর রয়েছে একাধিক রোগ নিরাময়ের ক্ষমতাও। আর শীতে শরীরের উষ্ণতা বাড়াতে বিশেষভাবে সহায়তা করে মধু। কেননা মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী একটি খাদ্য। দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে উষ্ণতা বাড়ায় মধু। তাই মধু খেলে শীত আপনাকে কাবু করতে পারবে না।

 

গরম পানীয়

শরীরের ঠান্ডা কমানোর জন্য গরম কোন পানীয় খাওয়ার অন্য কোন বিকল্প নেই। শীতটা একটু বেশী লাগলেই চা, কফি বা পান করতে পারেন হট চকলেট কিংবা হট চকলেট মিল্ক। উপকার পাবেন সাথে সাথেই।

 

বাদাম ও খেজুর

এতে ক্যালশিয়াম ও আয়রন বিদ্যমান, যা শরীরকে প্রাকৃতিক উপায়ে গরম রাখতে সাহায্য করে। এগুলো শরীরে শক্তি ও ফুর্তির সঞ্চার করে। খাওয়ার পরে মিষ্টি কিছু খেতে চাইলে চকলেট বা অন্যান্য মিষ্টির বদলে খেজুর খান। এটা লৌহ সমৃদ্ধ যা ওজন কমাতে ও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সহায়তা করে। বাদাম অনেকক্ষণ পেটভরা অনুভূতি দেয় বলে খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমে। আবার হজমে বেশি শক্তি লাগে বলে ক্যালরিও খরচ হয়। অন্যদিকে খেজুর মিষ্টিজাতীয় ফল, যা চকলেট খাওয়ার ইচ্ছা দমন করতে পারে।

 

গাজর

শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় দ্রুত। গাজর খেলে ত্বকে পটাশিয়ামের অভাব দূর হবে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। গাজরে উপস্থিত মিনারেল ও ভিটামিন শরীর সুস্থ রাখে। গাজরের থাকা বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন ‘এ’-তে রূপান্তরিত হয়। ভিটামিন ‘এ’ দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে এই সবজি। তাই শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়।

 

মুলা

ফাইবারে সমৃদ্ধ এই সবজিটি পাচন প্রণালীকে শক্তিশালী করে। শীতকালে মুলা খেলে শীতের হাত থেকে বাঁচা যায়। মুলাতে রয়েছে ভিটামিন সি। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মুলায় রয়েছে ক্যারোটিনয়েডস, যা চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে এবং ওরাল, পাকস্থলী, বৃহদন্ত্র, কিডনি ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে।

 

আদা

শীতে সর্দি-কাশিকে দূরে রাখতে খেতে পারেন আদা। আদা আপনার শরীরের বিভিন্ন রোগকে দূরে রাখবে। রান্নায় স্বাদ বাড়াতে আদা যেমন কাজে লাগে তেমনি অসুখ সারাতে আদার জুড়ি নেই। নিয়মিত আদা খেলে খুশখুশে কাশি, জ্বর, হজম শক্তি বাড়ে। আদায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। শীতের সকালে আদার চা পান করতে পারেন। আদা শরীরের বাজে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে৷ ফলে হার্ট সুস্থ রাখতে অত্যন্ত উপকারী আদা৷

 

মশলা

মশলা খাবারের স্বাদ বাড়ায়। কিন্তু এমন কিছু মশলাও আছে, যা শীতকালে শরীর গরম রাখে। লবঙ্গ, দারুচিনি, গোলমরিচ খেলে উপকার পাওয়া যায়।

 

রসুন

সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে কার্যকরী রসুন। পাশাপাশি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রতিদিন তিন, চার কোয়া রসুন সরাসরি বা রান্নায় ব্যবহার করে খেতে পারেন।

 

মিষ্টি আলু

শীতকালের এই সবজিটিরও রয়েছে শীত দূর করার ক্ষমতা। ফাইবার, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুকে বলা হয় সুপারফুড, যার রয়েছে দেহকে নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্ত রাখার পাশাপাশি শীত তাড়ানোর বিশেষ ক্ষমতা।

 

লাল মাংস

খাসি ও গরুর মাংস শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে তা বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।

 

স্যুপ জাতীয় খাবার

শীত দূর করার জন্য খেতে পারেন স্যুপ বা স্টু। শীতের সন্ধ্যায় গরম গরম স্যুপের বাটি নিয়ে মজা নিন স্যুপের। এতে শরীর গরম হবে। ঠাণ্ডা দূর হবে নিমেষেই। স্যুপে একটু ঝাল যোগ করতেও ভুলবেন না যেন। এছাড়া স্যুপ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি ভালো।

 

কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার

যে সব খাবারে কার্বোহাইড্রেট বেশি পরিমাণে বিদ্যমান সেসব খাবার ঠাণ্ডা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। কার্বোহাইড্রেট শরীরের থাইরয়েড ও অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি গুলোতে পৌঁছে শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। রক্ত সঞ্চালন করে। এতে করে ঠাণ্ডা অনেকাংশে কমে যায়। আটার রুটি, ভাত, চিনি, ডাল এই সবই কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার।

 

তেল

তেল বা চর্বি বরাবরই ঠাণ্ডা দূর করতে বেশ কাজে লাগে। শীতের খাবারে ঘি, সরিষার তেল ও অলিভ অয়েল ব্যবহার করে দেখুন। শরীরকে গরম রেখে ঠাণ্ডা দূর করবে এবং খাবারের স্বাদে নতুনত্ব আসবে। সকালের নাস্তায় ঘিয়ে ভাজা পরোটা, ভাতের সাথে সরিষার তেলের আলুভর্তা, সালাদে অলিভ অয়েলের জাদু- দেখবেন শীত কোথায় পালিয়ে গেছে!

 

ডিম

ডিম শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে। ডিম পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি খাবার। ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড। এছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি৫, বি১২, বি৬, ডি, ই, কে, ফোলেট, ফসফরাস, সেলিনিয়াম, ক্যালিয়াম ও জিংক। প্রতিটি ডিমের মধ্যে রয়েছে পাঁচ গ্রাম প্রোটিন।

 

মরিচ

মরিচের মধ্যে ক্যাপসাসিন নামে এক ধরনের উপাদান থাকে যা ত্বকে জ্বালা অনুভূতি দেয় ও শরীরকে শীতকালে গরম রাখে।

 

পেঁয়াজ

আপনাকে ঘামিয়ে দিতে পেঁয়াজের বড় ভূমিকা রয়েছে। পেঁয়াজ শরীরকে গরম রাখার পাশাপাশি শীতজনিত অনেক রোগ থেকে মুক্তি দেয়।

 

আপেল

আপেলে রয়েছে প্রায় ৪.৪ গ্রাম ফাইবার। আপেলের স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার দুটোই আমাদের দেহের উষ্ণতা ধরে রাখতে সক্ষম। এ ছাড়াও আপেলে রয়েছে ৮৬% পানি যার ফলে আমরা শীতে কম পানি পান করলেও আমাদের দেহকে সঠিকভাবে হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করবে।

 

তুলসি

আয়ুর্বেদিক গ্রন্থ থেকে জানতে পারা যায়, শীতকালে শরীরকে সুস্থ এবং কর্মক্ষম রাখতে তুলসি এবং আদার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ এই দুই প্রাকৃতিক উপাদানের শরীরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিভাইরাল প্রপার্টিজ, যা শীতের কামড় থেকে বাঁচাতে সব দিক থেকে সাহায্য করে থাকে।

ঢাকাটাইমস/৩১ ডিসেম্বর/আরজেড)