রাজবাড়ীতে পিঁয়াজের বাম্পার ফলনেও লোকসানে চাষিরা

প্রকাশ | ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:২৮ | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৩৪

এম মনিরুজ্জজামান, রাজবাড়ী

চলতি মৌসুমে রাজবাড়ী জেলায় মুড়িকাটা পিঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে এবার নতুন মুড়িকাটা পিঁয়াজের দরপতনে উৎপাদন খরচও উঠছে না বলে চাষিদের দাবি। ফলে আসন্ন রবি মৌসুমে হালি পিঁয়াজ চাষে চাষিদের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আর তাতে হালি পিঁয়াজের সংকট হবে।

কৃষি সমৃদ্ধ রাজবাড়ী জেলা পিঁয়াজ উৎপাদনে দেশের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে। দেশে উৎপাদিত মোট পিঁয়াজের ১৪ শতাংশ উৎপাদন হয় এ জেলায়। এ বছর বিঘা প্রতি মুড়িকাটা পিঁয়াজ আবাদে চাষিদের সার, বীজ, কীটনাশক, জমি চাষ ও দিনমজুরসহ খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা করে। বিঘা প্রতি উৎপাদন হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ মণ। মান ভেদে প্রতি মণ পিঁয়াজের বর্তমান পাইকারী বাজার দর ১০০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। সেই হিসেবে বিঘা প্রতি উৎপাদিত পিঁয়াজ বিক্রি করে খরচ উঠছে না। যার ফলে চাষিদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরে জেলার পাঁচটি উপজেলায় এ বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ হয়েছে চার হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের চেয়ে এক হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে কম চাষ হয়েছে।

বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের ঘিকমলা এলাকার পিঁয়াজ চাষি হাবিবুর সরদার বলেন, ‘আমি এ বছর এক একর জমিতে মুড়িকাটা পিঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। বীজ কিনেছি দুই হাজার ৫০০ টাকা মণ। সব মিলে খরচ পড়েছে বিঘাপ্রতি ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। বর্তমানে পিঁয়াজের যে বাজার দর তাতে আমার বিঘাপ্রতি পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা করে লোকসান হবে। এত কষ্ট করে টাকা খরচ করে পিঁয়াজ লাগিয়ে যদি দামটাই না পাই তাহলে আমরা চলবো কীভাবে?’

মুকুল সরদার নামে আরেক পিঁয়াজ চাষি বলেন, ‘আমি ৩০ শতক জমিতে পিঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। আমার প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে পিঁয়াজের যে বাজার দর তাতে খরচ উঠতে পারে। আমাদের পিঁয়াজ নাবি তাই উঠতে আরও সময় লাগবে। তত দিনে মনে হয় এই দাম থাকবে না। দুশ্চিন্তায় আছি।’

পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের পিঁয়াজ চাষি রহমান মণ্ডল বলেন, ‘এ বছর শুরু থেকেই মুড়িকাটা পিঁয়াজের দাম ভালো। প্রতি মণ ১৪০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে শুরুতে। তবে এখন সেটি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় নেমে এসেছে। তারপর আবার পাইকারী বাজারে পিঁয়াজ বেচতে গেলে ধলতার জন্য মণ প্রতি ৪ কেজি করে বাদ যাওয়ায় আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। অর্থাৎ এক মণ পিঁয়াজ বিক্রি করলে ৩৬ কেজির দাম পাচ্ছি।’

আরেক পিঁয়াজ চাষি ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘সরকার আমাদের সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রদান করলে এবং পিঁয়াজ আমদানি বন্ধ করলে আমরা সাধারণ চাষিরা পিঁয়াজের ভালো দাম পাবো। অন্তত উৎপাদন খরচটা তো ওঠাতে পারবো।’

রাজবাড়ীর বড় বাজারে পাইকারী পিঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছে, মৌসুমের শুরুতে মুড়িকাটা পিঁয়াজ বাজার ভালো ছিলো। তবে সময়ের সঙ্গে কিছুটা কমেছে পিঁয়াজের দাম। বর্তমানে পাইকারী বাজারে ১১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পিঁয়াজ আসলে মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস.এম শহীদ নূর আকবর বলেন, চলতি বছর এ জেলায় পাঁচ হাজার হেক্টরের ওপরে মুড়িকাটা পিঁয়াজের চাষ হয়। এর বেশির ভাগই উৎপাদন হয় গোয়ালন্দ ও বালিয়াকান্দি উপজেলাতে।

(ঢাকাটাইমস/০৪জানুয়ারি/এসএ)