'এই শীতে মইরা গেলে একটা কম্বল পেচায়া দাফন দিও'

প্রকাশ | ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:০১

আহমাদ সোহান সিরাজী, সাভার (ঢাকা)

সারাদেশে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। শৈত্য প্রবাহের আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজধানীর নিকটবর্তী শিল্পাঞ্চল সাভার উপজেলাবাসীর জনজীবন।

তীব্র শীতে জনগণের স্বাভাবিক চলাচল হ্রাস পাওয়ায় বিপাকে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। কমতে শুরু করেছে তাদের আয়।

মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাভারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।

সাভারের রেডিও কলোনী বাসস্ট্যান্ডের ওভারব্রিজের নিচে গিয়ে চোখে পরে ফজর আলী নামে সত্তরঊর্ধ্ব এক বৃদ্ধ গায়ে গামছা পেঁচিয়ে শীতে কাঁপছে। তার কাছে গিয়ে কথা বলতেই তিনি বলে উঠেন 'বাবা এত জার আর সইয্য হয়না। এই শীতে মইরা গেলে আমারে একটা কম্বল পেচায়া দাফন কইরো।'

তার সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, 'আমাগো গেরামের বাড়ি পদ্মার পাড়ে, সর্বনাশা নদী ঘরবাড়ি, জমি জিরাত বেবাক কিছু ভাইঙ্গা নিছে। বউ মরছে আইজ ৩ বছর। দুই পোলা বিয়া কইরা শ্বশুর বাইত্তে থাকে। তাই আমি একলা ঘুড়তে ঘুড়তে এহানে আইসা পরছি ভিক্ষা কইরা খাই। আমার হাপানী রোগ আছে নিঃশ্বাস টানতে কষ্ট হয়, শীত আইলে গ্যাস লওয়া লাগে। এই একলা জীবন আর সইয্য হয়না এখন মরতে পারলেই মুক্তি।'

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উপজেলা মডেল মসজিদের সামনে গিয়ে চোখে পরে কাগজ, খড়কুটো ও গাছের ডালপালা পুড়িয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় বেশ কিছু পরিবহন শ্রমিকদের।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুয়াশার কারণে রাস্তায় পরিবহন কিছুটা কম অনেক চালক দেরি করে রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছে। তাই এখানে বসে অলস সময় পার করছেন তারা।

গেন্ডা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ভাসমান পান-সিগারেট  বিক্রেতা শহিদ মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, দুইদিন যাবৎ চারিদিকে এত কুয়াশা যে রাস্তায় মানুষই নাই। আমার বেচাকেনাও খারাপ যাচ্ছে। অন্য সময় আমার বিক্রি হতো দুই থেকে তিন হাজার টাকা। শীতের কারণে এখন বিক্রি হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা।

সাভার থানা রোড এলাকার চা বিক্রেতা রহিম কাজী ঢাকা টাইমসকে বলেন, শীতকালে চায়ের দোকানে বেচাকেনা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু গত দুদিনে হঠাৎ করে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষজন ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেনা। এতে আমার বেচাকেনা খুবই কমে গেছে। আগে প্রতিদিন দোকানে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার বেচাকেনা করতাম। এখন বিক্রি হয় দুই থেকে তিন হাজারের মতো। 

সাভার থানা বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় রিকশাচালক শুক্কুর আলীর সঙ্গে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, বাবা আমরা দিন আনি দিন খাই। আমাদের রোদ, বৃষ্টি, শীত বা গরম বলে কিছু নেই। তাই যত কষ্টই হোক প্রতিদিনই রিকশা নিয়ে বের হতে হয়। না হলে পরিবারের লোকজনকে না খেয়ে বসে থাকতে হবে তার উপর আছে কিস্তির প্রেশার। কিন্তু শীতের কারণে রাস্তায় লোকজন কম তাই বেশি ভাড়া মারতে পারিনাই। এখন বাজে দুপুর ১টা অন্যদিনে সকাল থেকে এখন পর্যন্ত মুটামুটি ২০০/৩০০ টাকার ভাড়া মারতাম কিন্তু আজকে এখন পর্যন্ত কেবল ১২০ টাকার ভাড়া মারছি।

নামা বাজার এলাকায় কথা হয় জুতা সেলাই কর্মী হারানাত কর্মকারের সঙ্গে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, এখন আর মানুষ আগের মতো ছেড়া জুতা মেরামত করে না তাই ইনকামও নাই। তবুও এই শীতের মধ্যেও পরিবারের আহার জুটাতে আমাদের বসে যেতে হয় পথে। 

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান (এমপি) জানান, ইতোমধ্যে সারাদেশে ২৬ লাখ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে শীতার্তদের জন্য আরও ৩২ কোটি টাকার কম্বল কেনা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে দেশের শীতপ্রবণ এলাকায় এসব কম্বল বিতরণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৪জানুয়ারি/এসএ)