'আল্লাহ এই বয়সে একটু শান্তি দেও, নাইলে মরণ দাও'

প্রকাশ | ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:০১

আহমাদ সোহান সিরাজী, সাভার (ঢাকা)

পৌষের তীব্র শীত চারিদিকে ঘন কুয়াশার মাঝে বইছে হিমেল হাওয়া। বেলা গড়িয়ে দুপুর তবুও দেখা নেই সূর্যের। এমন আবহাওয়ায় যেখানে মানুষের ঘর থেকে বেরোনোই দায় সেখানে এই কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে একমুঠো আহারের খোঁজে গায়ে পাতলা একটা ওড়না পেঁচিয়ে খালি পায়ে ক্রাচে ভর করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রাস্তায় নেমেছেন ষাটোর্ধ এক অসহায় নারী।

বলছিলাম সাভার পৌর এলাকার বনপুকুর মহল্লার মেরিনা খাতুনের (৬২) কথা। যার এই কূলে একমাত্র মেয়ে ছাড়া এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই। স্ট্রোক করে স্বামী মারা গেছে আজ প্রায় ৩ বছর। বিয়ের পর মেয়েও থাকে নওগাঁয় শ্বশুরবাড়িতে। মেয়ের জামাই তাকে সহ্য করতে পারে না, সেজন্য মেয়ের সাথেও যোগাযোগ নেই বহুদিন। তাই এই ভুবনে মেরিনার আপন বলতে সবাই এখন পর।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় তার সঙ্গে দেখা হয় সাভারের জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ইনিস্টিউটের প্রধান ফটকের সামনে। এসময় কাছে গিয়ে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই অঝোরে কেঁদে ফেলেন তিনি।

অশ্রুসিক্ত চোখে ঢাকা টাইমস প্রতিবেদককে বলেন, 'বাবা আমার এই কষ্টের জীবন আর সইতে পারি না, আল্লাহ যেন আমারে মরণ দেয়। আমার থাকার কোন জায়গা নেই। স্বামীটা মারা গেছে আজ তিন বছর। একমাত্র মেয়ে থাকে নওগাঁয় মেয়ের জামাইটাও ভালোনা আমারে দেখতে পারেনা।'

এই শীতে খালি পায়ে হাটার কারণ জানতে চাইলে বলেন, 'পেটে খাবার নেই, গায়ে কাপড় জুটে না জুতা কিনবো কি দিয়া? আজ তিনমাস হলো অটোরিকশার ধাক্কায় ডান পা টা ভেঙে গেছে ঠিকমতো অসুধও খাইতে পারি নাই।’ অনেক কষ্টে এই লাঠিটা (ক্রাচ) কিনছি এখন এইটায় ভর দিয়াই হাটি। কতজন কত মানুষরে কতভাবে সাহায্য করে কই আমারে তো বাবা কেও কিছু দেয়না। এই শরীর নিয়া নিজের খাওনটাও নিজেরই যোগাড় কইরা খাইতে হয়। অনেকদিন খালি দুইটা বিস্কুট খাইয়াও দিন পার করছি। তাই এখন আল্লাহরে কই হয় এই বয়সে একটু শান্তি দেও, নাইলে মরন দাও।'

এ বিষয়ে সাভার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শিবলীজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, মেরিনা খাতুন যদি সাভারের নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে তিনি আমাদের অফিসে আবেদন করলে উনার জন্য বয়স্ক বা বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে অসহায় এই নারীকে সহযোগিতা করার আশ্বাস ব্যক্ত করেছেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/০৫জানুয়ারি/এসএ)