৫৮২ কোটি টাকার সার গেল কোথায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ২৩:৩২

* বিসিআইসি চেয়ারম্যানের কাছে ব্যাখ্যা তলব হাইকোর্টের

* দুদককে তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

সরকারিভাবে আমদানি করা ৫৮২ কোটি টাকা মূল্যের ৭২ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সার আত্মসাতের ঘটনায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যানের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। ২০ জানুয়ারির মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বিসিআইসি এই সারের আমদানিকারক।

একই সঙ্গে আত্মসাতের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের দ্বৈত বেঞ্চ। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনকে এ বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি।

সম্প্রতি একাধিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সরকারিভাবে আমদানি করা ৭২ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সার বন্দর থেকে খালাসের পর গুদামে পৌঁছে না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে পরিবহনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্স। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৫৮২ কোটি টাকা।

মেসার্স পোটন ট্রেডার্স সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। কামরুল আশরাফ খান সার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, তিনিই মূলত দেশে সারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়, জাহাজ থেকে খালাস হলেও সরকারি গুদামে পৌঁছেনি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) আমদানি করা ৭২ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন ইউরিয়া। প্রায় ৫৮২ কোটি টাকার এই সার সরিয়ে নিয়েছে পরিবহন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পোটন ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটির মালিক নরসিংদী-২ আসনের সাবেক এমপি কামরুল আশরাফ খান পোটন। সরকারকে ফাঁকি দিয়ে তিনি এই বিপুল পরিমাণ সার খোলাবাজারে বিক্রি করে টাকা লুটে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

খবরে বলা হয়, বিদেশ থেকে জাহাজে করে ব্যাগড ইউরিয়া সার আনার পর বন্দর থেকে সরাসরি গুদামে নিয়ে যাওয়া হয়। আর আমদানি করা বাল্ক ইউরিয়া নেওয়া হয় বিভিন্ন সার কারখানায়। দুই ক্ষেত্রেই সার স্থানান্তরের দায়িত্ব পরিবহন ঠিকাদারের। স্থানীয় পরিবহন চুক্তির ৪(বি) ধারা অনুযায়ী ডেলিভারি চালান ইস্যুর পর ৫০ দিনের মধ্যে বাল্ক ইউরিয়া ও ৪০ দিনের মধ্যে ব্যাগড ইউরিয়া সার সংশ্লিষ্ট গুদাম বা কারখানায় সরবরাহ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সূত্র মতে, দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে পোটন ট্রেডার্স বিসিআইসির বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত এবং আমদানি করা সার পরিবহনে ঠিকাদারির কাজ করে আসছে। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে এ বছর মে মাস পর্যন্ত মোট ৮টি চালানে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯০০ টন সার পরিবহনের দায়িত্ব পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিটি চালানেই জাহাজ থেকে নামানো পরিমাণের তুলনায় গুদামে পৌঁছেছে ২৯ শতাংশ কম সার। সব মিলিয়ে ৭২ হাজার ৬৮০ টন সার কম পেয়েছে সরকার, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫৮২ কোটি টাকা।

প্রকাশিত খবরে আরও বলা হয়, ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর জাহাজ থেকে ৩১ হাজার ৭৪১ টন সার খালাস করে ২৭ হাজার ৬৩৩ টন গুদামে সরবরাহ করে পোটন ট্রেডার্স। বাকি ৪ হাজার ১০৮ টন সারের হদিস নেই। একই বছরের ২৭ নভেম্বর ৩৩ হাজার টন খালাস করে ২২ হাজার ১৫২ টন সার সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। বাকি ১০ হাজার ৮৪৮ টনের হদিস মেলেনি। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি ২৮ হাজার ৮৯১ টন খালাসের পর গুদামে সার দিয়েছে ১৯ হাজার ৯১ টন। বাকি ৯ হাজার ৮০০ টন সার দেওয়া হয়নি। ১২ জানুয়ারি খালাস করা সারের মধ্যে ২৮ টন সরবরাহ করা হয়নি। ২৬ জানুয়ারি ৩৩ হাজার টন সার জাহাজ থেকে খালাসের পর মাত্র ১৩ হাজার ৯৬৬ টন সরবরাহ করা হয়। বাকি ১৯ হাজার ৩৪ টন সরিয়ে নেওয়া হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২৯ হাজার ৮৬৭ টন সার খালাস হলেও পোটন ট্রেডার্স ৩ হাজার ৬৪৯ টন সার কম সরবরাহ করে। সর্বশেষ ১৫ মে ২৯ হাজার ৮২৮ টন সার খালাসের পর বিসিআইসির গুদামে সরবরাহ করে ১৭ হাজার ৬৮৯ টন। বাকি ১২ হাজার ১৩৯ টন সরবরাহ করেনি পোটন ট্রেডার্স।

এদিকে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও বিপুল পরিমাণ এই সার বিসিআইসির গুদামে সরবরাহ করেনি পোটন ট্রেডার্স। দেশে সার সংকটের আশঙ্কা করে দ্রুত পাওনা সার গুদামে পৌঁছানোর তাগিদ দিয়ে ১৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠি দিয়েছে বিসিআইসি। এতে বলা হয়, ‘বর্তমানে মিনি পিক সিজন চলছে। গুদামগুলোতে দ্রুত সার পরিবহন করা সম্ভব না হলে মজুত কমে সারের সংকট হতে পারে। অধিকাংশ গুদামে সারের মজুত কমে গেছে। সব গুদামে সার গ্রহণের পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। এ ছাড়া বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ বাফার গুদামের খালি জায়গা সার দিয়ে পূর্ণ করার নির্দেশনা দিয়েছে; কিন্তু পোটন ট্রেডার্সকে বারবার দ্রুত সার সরবরাহের জন্য বলা হলেও বাফার গুদামগুলোতে সার সরবরাহ সন্তোষজনক নয়।’ এ অবস্থায় অতিদ্রুত ৭২ হাজার ৬৮০ টন সার সরবরাহ করে চলমান মিনি পিক সিজনে নিরবচ্ছিন্নভাবে ইউরিয়া সারের সাপ্লাই চেইন চলমান রাখতে অনুরোধ জানানো হয়।

(ঢাকাটাইমস/০৫জানুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :