হ্যারির ‘স্পেয়ার’: প্রকাশ্যে আসছে বোমা ফাটানো সব তথ্য

প্রকাশ | ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ২৩:২৭

সাইখ আল তমাল, ঢাকাটাইমস

ব্রিটেনের রাজ পরিবারকে ঘিরে বিতর্ক বহুকাল পুরনো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পরিবার সম্পর্কে প্রকাশ পেয়েছে জানা-অজানা আর চমকপ্রদ সব তথ্য। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী সব সংবাদমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে ডিউক অব সাসেক্স প্রিন্স হ্যারির আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’ নিয়ে। বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পূর্ণ প্রকাশিত না হলেও বইটির উদ্বৃতি দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু খবর।

নিজের পিতা রাজা তৃতীয় চার্লস, মা প্রিন্সেস ডায়ানা, তার ভাই উইলিয়াম, মেঘানের সঙ্গে বিবাহ থেকে শুরু করে আফগানিস্তানে তালেবান হত্যা— এমনসব গোপন আর চাঞ্চল্যকর তথ্য একে একে আলোচনার ঝড় তুলেছে বিশ্ব মিডিয়ায়। আগামী ১০ জানুয়ারি বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হবে।

ডেইলি মেইল জানায়, আত্মজীবনীতে প্রিন্স হ্যারি দাবি করেছেন, বাবা রাজা তৃতীয় চার্লস তাঁর পিতৃত্ব নিয়ে ‘তেতো স্বাদের’ কৌতুক করেছিলেন। মানসিকভাবে অসুস্থ এক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি এমন কৌতুক করেছিলেন। ওই ব্যক্তি নিজেকে প্রিন্স অব ওয়েলস দাবি করতেন। বাবার গল্পের স্মৃতিচারণা করে হ্যারি আত্মজীবনীতে লেখেন, ‘(চার্লস বলেন) এমনকি আমি যে তোমার আসল বাবা কি না, কে জানে? প্রিয় বৎস্য, সম্ভবত তোমার বাবা আসলে ব্রডমুরেই আছেন!’

রয়টার্স জানিয়েছে হ্যারির বহুল প্রতীক্ষিত স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’ এর একটি স্প্যানিশ-ভাষার সংস্করণ, এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিন আগে বৃহস্পতিবার স্পেনের বইয়ের দোকানে বিক্রি হয়েছে৷ বইটিতে বর্ণিত কিছু মূল বিবরণ রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে-

ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া

ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী তার ভাই উইলিয়াম সম্পর্কে হ্যারি বলেছেন, ২০১৯ সালে হ্যারির আমেরিকান স্ত্রী মেঘানকে নিয়ে লন্ডনের বাড়িতে তর্কের সময় উইলিয়ামকে কলার ধরে ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে দিয়েছিলেন। কারণ সে মেঘানকে ‘রুঢ়, অভদ্র এবং ধ্বংসকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি উইলিয়ামের চ্যালেঞ্জকে পাল্টা আঘাত করার জন্য প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং তার ভাই পরে এই ঘটনার জন্য ক্ষমাও চেয়েছিলেন।

ক্যামিলা

হ্যারির মতে, তিনি এবং প্রিন্স উইলিয়াম তাদের বাবাকে বর্তমান রাণি ক্যামিলা পার্কার-বোলসকে বিয়ে না করার জন্য বলেছিলেন। বিয়েতে মত না দিলেও তারা দুজন পরবর্তীতে বাবাকে বিবাহের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন এবং তাদের সম্পর্কের জন্য কিছুটা সহানুভূতি পেয়েছিলেন।

হ্যারি বলেন, ‘আমাদের মায়ের ইতিহাসে আরেকটি লুপ বন্ধ করার সময় আমরা যে তিক্ততা এবং দুঃখ অনুভব করেছি তা সত্ত্বেও, আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে এটি অপ্রাসঙ্গিক ছিল।’

হ্যারি আরও বলেন, প্রিন্স উইলিয়াম এবং তার স্ত্রী কেট ক্যামিলাকে ২০০৫ সালে একটি অভিনব ড্রেস পার্টিতে নাৎসি পোশাক পরে যেতে উত্সাহিত করেছিলেন। ঘটনাকে হ্যারি তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলগুলির মধ্যে একটি বলেও স্বীকার করে নেন।

মেজর হিউইট গুজব

মেজর জেমস হিউইট এবং প্রিন্সেস ডায়ানার অবৈধ সম্পর্কের ফলাফল ছিলেন প্রিন্স হ্যারি— মিডিয়াতে প্রচারিত এ গুজবটিকে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। হ্যারি বলেন, আমার বাবা প্রায়শই সঠিক তথ্য না জেনে মজা করে পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, কারণ আমার জন্মের বেশ কিছুদিন পরেও মায়ের সঙ্গে দেখা করেননি হিউইট।

বিবাহের ভেন্যু নিয়ে লড়াই

হ্যারি-মেঘানের বিয়ের তারিখ এবং স্থান নিয়ে রাজপরিবারে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল। হ্যারির লেখা অনুযায়ী, যখন তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে বা সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালে বিয়ের সম্ভাবনার বিষয়ে পরামর্শ করেছিলেন তখন উইলিয়াম বলেছিলেন, তিনি সেখানে বিয়ে করতে পারবেন না কারণ সেটি যথাক্রমে চার্লস এবং ডায়ানা, উইলিয়াম এবং কেটের বিবাহের স্থান ছিল। পরিবর্তে, উইলিয়াম দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের হাইগ্রোভ হাউসে চার্লসের বাড়ির নিকটস্থ একটি গ্রামের চ্যাপেলে বিয়ের আয়োজন করার প্রস্তাব করেছিলেন। হ্যারি এবং মেঘান অবশেষে ২০১৮ সালের মে মাসে উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে বিয়ে করেন।

মাদক গ্রহণ

হ্যারির বয়স যখন ১৭, তখন কোনো একজনের বাড়িতে তাকে কোকেন সেবনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি মাদক সেবন করতেন। কিন্তু মিডিয়াতে তাকে মাদকাসক্ত হিসেবে উপস্থাপন করার বিষয়টিতে তিনি মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন।

হ্যারির মতে, ‘এটি খুব মজার ছিল না এবং এটি আমাকে বিশেষভাবে আনন্দিত করেনি যেমনটি অন্য সবার কাছে মনে হয়েছিল, তবে এটি আমাকে আলাদা অনুভব করিয়েছে এবং এটিই ছিল আমার প্রধান উদ্দেশ্য৷ ১৭ বছর বয়সী আমি নতুন অভিজ্ঞতার জন্য মুখিয়ে ছিলাম।’

এছাড়াও ইটন কলেজের ছাত্র হিসেবে বাড়ির একটি বাথরুমে একচেটিয়া গাঁজা সেবন করার কথাও উল্লেখ করেছেন হ্যারি।

আধ্যাতিক মহিলার সঙ্গে সাক্ষাৎ

নিজের জীবনে আধ্যাতিক ক্ষমতাসম্পন্ন এক নারীর সঙ্গে পরিচয়ের কথা বর্ণনা করেছেন হ্যারি। মহিলাটি তার মা ডায়ানার আত্মাকে অনুভব করতে পারতেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। বন্ধুরাই হ্যারিকে সেই মহিলার সন্ধান দিয়েছিলেন।

উত্তর মেরু ভ্রমণ

উত্তর মেরু ভ্রমণের সময় তীব্র বরফে জমে যাওয়ার ভায়ানক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন হ্যারি। এমনকি ঠাণ্ডায় তার পুরুষাঙ্গও নাকি জমে গিয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও উইলিয়ামের বিয়ের প্রাক্কালে একটি নৈশভোজে তার বাবাকে আঘাত করার কথাও স্বীকার করেছেন।

হ্যারি বলেন, ‘আমার বাবা আমার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিলেন যখন আমি উল্লেখ করেছি যে ঠান্ডার কারণে আমার কান এবং গাল পুড়ে গেছে। আমি খুব বেশি কথা না বলার জন্য এবং তাকে বলেছিলাম যে আমার লিঙ্গও আক্রান্ত হয়েছে...’

আফগানিস্তান অভিযান

আফগানিস্তানে হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবে কাজ করার সময় ২৫ জন তালেবানকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন হ্যারি। তার মতে, তিনি ছয়টি মিশনে অংশ নিয়েছিলেন, যার সবকটিতেই মৃত্যু জড়িত ছিল। কিন্তু তালেবান বিদ্রোহীরা তার কমরেডদের হত্যা করতে চেয়েছিল বলে তিনি তাদের হত্যা করাটাকে ন্যায়সঙ্গত মনে করছেন।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, প্রিন্স হ্যারির বইটি প্রকাশিত হওয়ার আগেই বাজারে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে। এরকম চাঞ্চল্যকার তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর অবশ্য এমনটি হওয়ার কথা।

(ঢাকাটাইমস/০৭জানুয়ারি/এসএটি/কেএম)