ভোটের মাঠে জোটের খেলা

এমএস নাঈম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:৩৮ | প্রকাশিত : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৩০

জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেখা যায় জোট গঠনের তোড়জোড়। এসব জোটে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়া ৩৯টি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি শতাধিক নিবন্ধনহীন এবং ব্যক্তিনির্ভর দল অংশ নেয়।

যদিও নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি ছাড়া আর কারও তেমন ভোট নেই। তবে নিবন্ধন বাতিল হওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কিছু ভোট রয়েছে। এই চারটি দলই বেশির ভাগ ভোট পেয়ে থাকে। এছাড়া দুয়েকটি ইসলামভিত্তিক দলেরও নির্ধারিত কিছু ভোট রয়েছে।

বাকি দলগুলোর তেমন একটা ভোট না থাকলেও দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিশাল বিশাল সাইনবোর্ড রয়েছে। এ দলগুলোর নেতাদের রাজধানীর পল্টন, প্রেসক্লাব এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এদের তৎপরতা দেখা যায় শুধুমাত্র নির্বাচন মৌসুম এলেই। নির্বাচনের আগে এ দলগুলোর কদর বেড়ে যায়। বড় দলগুলোর সঙ্গে জোটভুক্ত হওয়া, নির্বাচনে মনোনয়ন এবং ক্ষমতা ভাগাভাগির দর কষাকষি চলে।

ভোটের মাঠে তেমন একটা প্রভাব ফেলতে না পারা এই দলগুলো কেউ ১১ দলীয় জোট, কেউ ৭ দলীয় জোট, কেউবা ১৭ দলীয় জোটের হয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়ে থাকেন মাঝেমধ্যেই।

তবে রাজনৈতিক দলগুলোর জোট গঠন করা দেশীয় রাজনীতিতে পুরনো প্রথা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠনের মাত্র ৭ বছরের মাথায় যুক্তফ্রন্ট গঠন করে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল তখনকার বিরোধী দলগুলো। তারপর থেকে বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিতে জোট হয়েছে, জোট ভেঙেছে, দল বদল হয়েছে। নব্বই দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে প্রথমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দল এবং বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দল জোট গঠন করে মাঠে ছিল। পরে অবশ্য ১৫ দল ভেঙে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দলীয় জোট হয়। আর বাম দলগুলো মিলে ৫ দলীয় জোট গঠন করে। এই ত্রিজোটের যুগপৎ আন্দোলনেই পতন ঘটেছিল এরশাদের। আবার ’৮৮ সালের নির্বাচনের আগে ৭২ দলের সমন্বয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল-কপ গঠন করেই বিরোধী দলের নেতা হতে পেরেছিলেন আ স ম রব।

২০০১ সালে জোট গঠনের ফলেই আওয়ামী লীগকে হটিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসতে পেরেছিল। পরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট কাছে টেনে নিয়েছিল জাতীয় পার্টিকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বড় জয়ের পেছনে জাতীয় পার্টির ভোট ব্যাংকের বড় অবদান ছিল।

২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে আবারও শুরু হয়েছে নানান খেলা। জোট গঠনসহ চলছে নানা মেরুকরণ। নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৪ দলীয় জোট ছাড়াও প্রকাশ্যে-গোপনে বিভিন্ন ইসলামী দলের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বৈঠকের পর রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

নির্বাচনের আগে সাত দলীয় জোটের সমন্বয়ে গত বছরের ৮ আগস্ট আত্মপ্রকাশ করে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব এই মঞ্চের ঘোষণা দেন। জোটভুক্ত দলগুলো হলো- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

গেল ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে ১১টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এই জোটের ঘোষণা দেন। ১১ দলীয় জোটের শরিকরা হলেন- ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ডেমোক্রেটিক লীগ, পিপলস লীগ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ন্যাপ, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, সাম্যবাদী দল, গণদল, ন্যাপ ভাসানী এবং বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি।

এদিকে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) নেতৃত্বে ১৭টি দল নিয়ে নতুন নির্বাচনী জোট ‘গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ’ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয় আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে।

১৭ দলীয় জোটের দলগুলো হলো- ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ ভাসানী, ডেমোক্রেটিক পার্টি বাংলাদেশ (ডিপিবি), বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য ফ্রন্ট, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন-বিজিএ, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন, বাংলাদেশ নাগরিক কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ কনজারভেটিভ পার্টি (বিসিপি), গণমুক্তি পার্টি, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন পার্টি, বাংলাদেশ ন্যায় বিচার পার্টি, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ আইডিয়াল পার্টি এবং বাংলাদেশ জনকল্যাণ পার্টি। এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু গতকাল রাতে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ভোটের মাঠে দেশের রাজনীতিতে দুটি ধারার বাইরে কেউ নেই। একদল ক্ষমতায় থাকে, অন্যদল ক্ষমতায় বাইরে। আমরা জোট গঠন করেছি তৃতীয় একটি শক্তি হওয়ার জন্যই।

ভোটে না থাকলে দল হারিয়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জোট গঠন করেছি আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে ভোট করার লক্ষ্যে। আমাদের এই জোটের প্রার্থী থাকলে দেশের সবাই আমাদের সম্পর্কে আরও বেশি করে জানবে।’ 'বড় দুটি দল থেকে আমন্ত্রণ পেলে যাবেন কি না' এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনই এমন কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা এমন অফার পেলে জোটের সবাইকে নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’

ঢাকাটাইমস/০৮জানুয়ারি/

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :