এফএমসি ডকইয়ার্ড এমডির আর্থিক প্রতারণা তদন্তের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:৫৮

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ইয়াসিন চৌধুরী বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যাংকের কাছ থেকে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে যথাযথ তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট এবং পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ-সিআইডিকে তদন্ত করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে ইয়াসিন চৌধুরীর আর্থিক প্রতারণার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর তা নিয়ে হইচই শুরু হয়।

তারই জেরে রবিবার (৮ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন।

আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। আগামী ৯ মার্চ পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।

গত ৫ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘দেড় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে বিদেশে ইয়াসিন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তা আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইয়াসিন চৌধুরী। গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামে তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও তিনি দুবাইয়ে বিলাসী জীবন কাটাচ্ছেন।

ইয়াসিন চৌধুরী বিদেশে অবস্থান নিয়ে সরকারবিরোধী নানা তৎপরতাও শুরু করেছেন। তিনি সরকারবিরোধী সবাইকে আন্দোলনে মদদ ও অর্থের জোগান দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের সঙ্গেও তার যোগাযোগ হয়েছে। নুরের দল পরিচালনা ও বিভিন্ন আন্দোলনে অর্থের জোগান দিচ্ছেন ইয়াসিন চৌধুরী।

অভিযোগ আছে, জাহাজ নির্মাণের চুক্তি করে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম হিসেবে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়েছেন ইয়াসিন চৌধুরী। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও ঋণ নিয়েছেন জাহাজ নির্মাণ শিল্পের এ উদ্যোক্তা। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী জাহাজ নির্মাণ ও হস্তান্তর করেনি তার প্রতিষ্ঠান এফএমসি ডকইয়ার্ড। গ্রাহক ও ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া পুরো টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

এফএমসি ডকইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াসিন চৌধুরী বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। সেখানে নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আমিরাতে টি-টেন ক্রিকেট লিগের দল বাংলা টাইগার্সের অন্যতম মালিক তিনি। পাচার করা বিপুল পরিমাণ টাকা বৈধ করতেই ইয়াসিনের ক্রীড়া সংগঠক বনে যাওয়ার এ চেষ্টা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ইয়াসিন চৌধুরীর কাছে শুধু একটি ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ২৪৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ফান্ডেড বা নগদ ঋণ ৯১৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং নন-ফান্ডেড (এলসি ও ব্যাংক গ্যারান্টি) ৩২৫ কোটি টাকা।

এফএমসির এমডি ইয়াসিনের কাছে মোট ১১৩ কোটি ৮৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬০ টাকা পাবে দ্য বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিসেস নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিসেসের সঙ্গেই নয়, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েও পরিশোধ করেনি এফএমসি ডকইয়ার্ড। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮/১৪০ ধারায় এফএমসি ডকইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াসিন চৌধুরী, তার স্ত্রী খাতুনে জান্নাত ও হামিদা খাতুনের নামে চট্টগ্রাম আদালতে সিআর মামলা করা হয়েছে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ঋণ সুবিধায় আসামিরা বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স থেকে ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পাঁচ কোটি টাকার ঋণ নেন।

২০১৯ সালে এসে ঋণ রিশিডিউল করা হয়। পরে আসামিরা বিভিন্ন চেকে ঋণ দিলেও ৫৪ লাখ ৬০ হাজার ১২ টাকার একটি চেক ডিজঅনার হয়। আসামিরা চেক পাসের ব্যবস্থা না করে নেগোশিয়বল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮/১৪০ ধারায় অপরাধ করেছেন। এছাড়া প্রাইম ফাইন্যান্স ও ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডও ইয়াসিনের বিরুদ্ধে আদালতে চেক প্রতারণা মামলা করেছে।

(ঢাকাটাইমস/০৮জানুয়ারি/এজে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :