কুষ্টিয়ার গ্রামে গ্রামে ‘কুমড়ো বড়ি’ তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা

এইচএমসাইফ উদ্দীন আল-আজাদ, কুষ্টিয়া
 | প্রকাশিত : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:১৭

কুমড়ো বড়ি। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতে তার চেয়ে বেশি সুস্বাদু। খুব সহজেই গ্রামের নারীরা তৈরি করে থাকেন। প্রায় প্রতিটি সবজি বা মাছ রান্নায় দিলে বেড়ে যায় স্বাদ।

পৌষের শুরুতেই শীত জেকে বসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে কুমড়ো বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়ার গ্রামাঞ্চলের নারীরা। কুমড়ো বড়ি তৈরি ও তা বাজারে বিক্রয় করে কুষ্টিয়াতে এখন অনেক পরিবার স্বাবলম্বীও হচ্ছেন।

সোমবার সাতসকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী, খোকসা, মিরপুর, ভেড়ামারা ও দৌলতপুরসহ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কুমড়ো বড়ি তৈরি করতে বেশ ব্যস্ত গ্রামীণ নারীরা। যারা এই কুমড়ো বড়ি তৈরি করছেন তাদের মধ্যে কেউ বা তৈরি করছেন বাজারে বিক্রির জন্য আবার অনেকেই বাজারের কুমড়ো বড়ি পছন্দ নয় তাই বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে বাড়তি সুস্বাদু আনতে নিজ হাতে কুমড়ো বড়ি তৈরি করছেন এবং তা বছর জুড়েই খাবেন।

কুমড়ো বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত কয়েক জন গ্রামীণ মহিলারা জানান, আগের দিনে মেয়েরা ডাউল শিল পাটায় বেটে সারা রাত ভর গুঁড়া করে তা সারা দিন রোদ্রে শুকানোর পর কুমড়ো বড়ি তৈরি করতো। এখন আর রাতভর শিলপাটায় ডাউল গুড়ো করতে হয় না। ডাল গুঁড়ো করার মেশিনের সাহায্যে ঘণ্টার মধ্যেই অনেক ডাল গুঁড়ো করে বড়ি তৈরি করা যায়। তবে একে বারে পরিশ্রম কমও নয়। এই বড়ি সারা বছর তৈরি করা গেলেও এটা শীতকালে বেশি তৈরি হয় এবং শীত মৌসুমের তৈরি বড়ি বেশি সুস্বাদু হয়। যে কারণে এই সময়ে বিক্রয়কারীসহ নিজ বাড়িতে খাওয়ার জন্য এই কুমড়ো তৈরি করেন। বলেন কুমারখালী উপজেলার ছেঁউরিয়া মোল্লা পাড়া এলাকার গৃহবধূ হিরা খাতুন।

জানা গেল কিভাবে কুমড়ো বড়ি তৈরি করতে হয়। উপকরণ: মাষকলাইয়ের ডাল ২ কে‌জি (খোসা ছাড়া)। চালকুমড়া বড় ২টি। পদ্ধতি: যদি বড়ি রোদে শুকিয়ে নেয়ার জন্য বড় চাটাই বা পাটি এবং পাতলা সুতি কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে রাখতে হবে। ওভেনে শুকাতে চাইলে এগুলোর দরকার নেই। তবে ওভেনের চেয়ে রোদে শুকানো বড়ি সুস্বাদু বেশি হবে বলে রোদে শুকানোই ভালো।

বড়ি তৈরির আগের দিন বিকালে ডাল ঝেড়ে, ধুয়ে ভিজিয়ে রাখুন। সন্ধ্যায় চালকুমড়া ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহিকুচি করে রাখতে হবে। এবার কুমড়া খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে, যেন এর টক ভাব না থাকে। ধোয়া হলে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে সারারাত ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এতে কুমড়ার সব পানি বেরিয়ে ঝরঝরে হয়ে যাবে অথবা কাপড়ে বেঁধে ভাড়ি কিছু দিয়ে চাপা দিয়ে রাখলেও পানি বেরিয়ে যাবে। পরের দিন ভোরে ডালের পানি ছেঁকে, শিল-পাটায় বেটে নিতে হবে অথবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। যেন ডাল খুব মিহি হয়ে যায়। এবার ডালের সঙ্গে কুমড়া মেশাতে হবে। খুব ভালো করে হাত দিয়ে মেশাতে হবে যতক্ষণ না ডাল-কুমড়ার মিশ্রণ হালকা হয়।

তারপর একটি বাটিতে পানি নিয়ে তাতে বড়ির আকারে একটু ফেলে পরীক্ষা করে নিতে হবে। যদি বড়ি ভেসে উঠছে এবং পানিতে ছড়িয়ে যাচ্ছে না তাহলে বুঝতে হবে আর ফেটতে হবে না। আর ডুবে গেলে কিংবা ছড়িয়ে গেলে আরও করে মাখাতে হবে। চড়া রোদে চাটি বা কাপড় বিছিয়ে বড়ির আকার দিয়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে রাখতে হবে। বড়ি তিন থেকে চার দিন এভাবে রোদে শুকানোর পর শেষ দিন বড়ি উঠিয়ে কাপড়ে ঝুলিয়ে শুকানোই ভাল। ভালোভাবে বড়ি শুকানো হলে পরিষ্কার এয়ারটাইট বয়ামে ভরে রাখলে প্রয়োজনের সারা বছর রান্নায় ব্যবহার করা যাবে। তবে পৌষ-মাঘ মাসে নতুন ডাল ও গাছপাকা চালকুমড়া দিয়ে বড়ি ভালো হয়। গরমের সময় কিংবা চালকুমড়া পুরানো হলে কিংবা গাছপাকা বাত্তি না হলে বড়ি টক হয় এবং ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া সে বড়িগুলো বেশি দিন রাখা সম্ভব হয় না।

(ঢাকাটাইমস/৯জানুয়ারি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :