কেরানীগঞ্জে থামছেই না মাটিদস্যুদের তাণ্ডব, ঝুঁকিতে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ লাইন
প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:৩৩ | আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:৫০

বুড়িগঙ্গা নদীর কোলঘেঁষা ঢাকার কেরানীগঞ্জের কোণ্ডা ইউনিয়নে মাটিদস্যুতা থামছেই না। মাটি খেকোদের লোভের থাবায় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে প্রায় সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা। বসতবাড়ি ও ফসলি জমির পাশাপাশি পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ লাইনও পড়েছে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে। এর ফলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
পদ্মা সেতু ঘিরে চলছে ঢাকা-যশোর রেলপথ নির্মাণকাজ। বিভিন্ন এলাকায় এর নির্মাণশৈলীও দৃষ্টি কাড়ছে। কিন্তু মাটিখেকোদের খননযন্ত্রে কেরানীগঞ্জ অংশে প্রায় চার কিলোমিটার রেলপথের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গা নদীর পারে বন্যাপ্রবণ কোণ্ডা ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে রেলপথের উভয় প্রান্তে মাটি সরিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। উভয় দিক থেকে গভীর খাদ সৃষ্টি হওয়ায় রেলপথটি ঝুঁকিতে পড়েছে।
কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাটিখেকোদের খননযন্ত্র পৌঁছে গেছে পদ্মা সেতু রেলপথের খুব কাছে। খুঁটির দুই পাশে ২০-৩০ ফুট গভীর খাদ সৃষ্টি হওয়ায় ঝুঁকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রায় এক দশক ধরে মাটিখেকোদের থাবায় কোণ্ডা ইউনিয়নের প্রায় সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার বেশির ভাগ বসতভিটা ও ফসলি জমি পরিণত হয়েছে বিরানভূমিতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গা নদী পেরিয়ে ঢাকা-মাওয়া রেলপথটি পড়েছে কেরানীগঞ্জের কান্দাপাড়া গ্রামে। নদীর কোলঘেঁষা এলাকাটি নিচু হওয়ায় রেলপথ বানানো হয়েছে পিলার দিয়ে মাটি থেকে কিছুটা ওপরে।
কান্দাপাড়ার অদূরেই ব্রাহ্মণপাড়া গ্রাম। ব্রাহ্মণপাড়া স্কুল পেরিয়ে মসজিদের ঢাল হয়ে একটু এগোলেই বড় বড় খাদ। খাদগুলো ২০ থেকে ৩০ ফুট গভীর। মাটিদস্যুদের খননযন্ত্র পৌঁছে গেছে রেলপথের ৫০ গজের মধ্যে। রেলপথের অন্য প্রান্তেও দেখা গেছে একই চিত্র। এভাবে দুই ধারের মাটি সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা কান্দাপাড়া থেকে সিরাজদিখানের সীমানা পর্যন্ত।
জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, রেলপথের পাশ থেকে মাটি কেটে নিলে অবশ্যই ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। তবে আমরা এ ধরনের ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। কারা এটি করছে অবশ্যই খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পদ্মা সেতু ঘিরে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন রেলপথটি ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। আগামী জুনে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে রেল চলাচল শুরুর কথাও বলছেন রেলমন্ত্রী।
এ অবস্থায় রেলপথের কাছাকাছি খনন চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক (পিবিআরএলপি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘রেলপথটি টেকসই করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি খুঁটির একেবারে কাছাকাছি থেকে মাটি খনন করে সেটি ঝুঁকির বিষয়। আমরা সরেজমিনে পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাটিখেকোরা কাউকে তোয়াক্কা করছে না। তারা প্রকাশ্যেই অন্যের জমি থেকে মাটি লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। রেলপথের উভয় পাশে মাটি কাটা বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তাদের।
কোণ্ডা ইউনিয়নের বাসিন্দারা বলছেন, প্রায় এক দশক ধরে দিন-রাত সমান তালে মাটি লুট করে সংঘবদ্ধ চক্রটি। নির্বিচারে মাটি উত্তোলন করার ফলে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক মানুষ বসতবাড়ি ছাড়তেও বাধ্য হয়েছে।
মাটিদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় থানায় অভিযোগ দেওয়ার সাহস নেই ভুক্তভোগীদের। এই পরিস্থিতিতেও গত তিন বছরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ২০টির বেশি জিডি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘পরিবেশ আইনে কৃষিজমির মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি নিজের মালিকানাধীন কৃষিজমি থেকে মাটি কাটতে চায়, তারও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতির বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’
সামগ্রিকভাবে মাটি কাটার ঘটনা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এ জন্য আমরা ইটভাটা বন্ধের দিকে জোর দিচ্ছি। কেরানীগঞ্জে কৃষিজমির মাটি লুটের ঘটনা নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কৃষিজমির উর্বর মাটি কাটার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘অন্যের জমিতে মাটি কাটা এমনিতেই অপরাধ। সেটি যদি ফসলি জমি হয়ে থাকে, তা আরো বড় দণ্ডনীয় অপরাধ।’
‘যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি ইঞ্চি জমিতে চাষাবাদের প্রতি জোর দিচ্ছেন, সেখানে কেরানীগঞ্জের উর্বর জমি লুট করে নেওয়ার ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয়। আমরা অবশ্যই দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেব।’
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু পার হলে কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ মোড়। এখান থেকে একটু বাম দিকে এগিয়ে কোণ্ডায় ঢুকলেই মনে হবে সমতল ভূমি কিংবা কৃষিজমি আর বাকি নেই। ফসলি জমি, বসতভিটা হয়ে গেছে পুকুর, ডোবা কিংবা বড় আকৃতির দিঘি।
ব্রাহ্মণগাঁও, নোয়ার্দা ও কান্দাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, রেললাইনের খুব কাছে চলে গেছে মাটিখেকোদের খননযন্ত্র। রেললাইনের খুব কাছে ২০ থেকে ৩০ ফুট গভীরতার খানাখন্দ সৃষ্টি করা হয়েছে।
স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য বসতভিটা ও স্থাপনাও ঝুঁকিতে রয়েছে। পারজোয়ার ব্রাহ্মণগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি পাঁচতলা ভবনসহ ছয়টি ভবনেরও খুব কাছাকাছি মাটি কাটার ঘটনা ঘটছে।
বছরে অর্ধশত কোটি টাকার মাটি লুট:
বর্তমানে কান্দাপাড়া, ব্রাহ্মণগাঁও, পূর্ব বাঘৈর, বীর বাঘৈর ও আড়াকুল—এই পাঁচটি স্পট থেকে মাটি চুরি হচ্ছে। মাটি কাটা হচ্ছে ১০ থেকে ১২টি এক্সকাভেটরে। মাটি সরবরাহে চলাচল করছে ৬০ থেকে ৭০টি ট্রাক্টর ও মিনি ডাম্পার।
এখান থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই হাজার গাড়ি মাটি যায়। এ মাটির মূল গন্তব্য স্থানীয় ইটভাটা। বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং জমি ভরাটেও লাগে মাটি। এক গাড়ি মাটির দাম ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। সেই হিসাবে পাঁচটি স্পট থেকে দিনে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মাটি চুরি হচ্ছে। বছরের হিসাবে যা অর্ধশত কোটি টাকার বেশি।
স্থানীয়দের দাবি, গত ১০ বছরে কোণ্ডাসহ এর আশপাশের এলাকা থেকে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার মাটি লুট হয়ে গেছে। বীর বাঘৈর এলাকার একটি স্পট থেকে লুট করা মাটি সরবরাহের সময় একটি ট্রাক্টরের পিছু নিয়ে খোঁজ মিলল একটি ইটভাটার। মালিক স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি মোখলেস। সেখানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে সদ্য কেটে আনা মাটি।
ব্রাহ্মণগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রেললাইন থেকে মাত্র ৫০ গজের মধ্যেই বেশ গভীর করে মাটি কেটে নিয়েছে চক্রটি। সমতল ভূমি থেকে অন্তত ২০-৩০ ফুট গভীর করে মাটি কাটা হয়েছে, যা রেললাইনটির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সংঘবদ্ধ চক্রের দৌরাত্ম্য:
এলাকাবাসী বলছেন, সব জেনেও কেউ ভয়ে থানায় যায় না। গত মঙ্গলবার সাংবাদিকের সরেজমিন উপস্থিতি টের পেয়ে প্রায় সব স্থান থেকেই লুটেরারা সটকে পড়ে। আগের দিন কাউটাইলে দেখা গিয়েছিল মাটি লুটের দৃশ্য।
স্থানীয় এক চা দোকানি কথায় কথায় বলেন, ‘সুজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলেই উত্তর পাবেন। তার খবর দিতে পারবে ভাতিজা রবিন।’ একটু খুঁজতেই পাওয়া গেল রবিনকে। তার কথায়ও বোঝা গেল মাটি লুটের সঙ্গে সুজন জড়িত!
অনুসন্ধানে মেলে আরো অনেক নাম। একজনের নেতৃত্বে কাজ করে ১০ থেকে ১৫ জন। এমন চক্রের মূল হোতা হিসেবে পাঁচজনের নাম উঠে এসেছে। তাদেরই একজন কাউটাইল মৌজার সুজন মিয়া ওরফে সুজন মাঝি। তার নেতৃত্বে কাজ করছেন সাদ্দাম, মামুন, কামাল মেম্বার, কাশেম বেপারীসহ বেশ কয়েকজন।
সুজন একই সঙ্গে ব্রাহ্মণগাঁও এলাকার মাটি কাটাও নিয়ন্ত্রণ করেন। সেখানে তার নেতৃত্বে আছেন বাবু, শহীদ, পারভেজ। পূর্ব বাঘৈরে জাফর ইকবাল বাপ্পীর নেতৃত্বে আছেন জুয়েল আহাম্মেদ ডন, কাওছার, পলাশ, মোয়াজ্জেম, বাবু, রাহাত, আবজাল সিকদার, মাসুম। বীর বাঘৈরে রোমান আহমেদের নেতৃত্বে চলেন অন্তর, হিমেল ও ভেলু। আড়াকুলে সোহাগ মিয়ার নেতৃত্বে আছেন পারভেজ, টিক্কা মিয়া, জয়নালসহ অনেকে। চক্রের আরেকজন হোতা জরিপ উদ্দিন।
আড়াকুলে গিয়ে দেখা যায়, বিঘার পর বিঘা জমির মাটি উধাও। একটি এক্সকাভেটর পড়ে আছে। স্থানীয়রা বলছেন, আগের দিন মাটি চুরির সময় জমির মালিক বাধা দেওয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। তাই আপাতত মাটি কাটা বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা আঙুল উঁচিয়ে পাশের একটি তিনতলা ভবন দেখিয়ে বলেন, মানুষের জমি থেকে মাটি চুরি করে এই দালান তুলেছেন সোহাগ মিয়া।
বীর বাঘৈর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি এক্সকাভেটর দিয়ে নদীর পাশের মাটি কাটা চলছে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিদিন এখানে মাটি কাটা চলে। কথা বলার জন্য এগিয়ে গেলে সাংবাদিক বুঝেই সটকে পড়েন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পূর্ব বীর বাঘৈরেও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে সটকে পড়েন মাটিদস্যুরা। দেখা যায়, দুটি এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছিল। রাখা ছিল মাটিভর্তি চারটি গাড়ি। পাশেই ঘুমাচ্ছিলেন মনির হোসেন (৪০) নামের এক ব্যক্তি। তিনি পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক। ১০ মিটার দূরে ৩ শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি। এখানকার মাটি দিয়ে তার জমিটিও ভরাট করা হচ্ছিল। মনির জানান, তার জমি ভরাটের জন্য ৬৫ হাজার টাকায় চুক্তি করেছেন মোয়াজ্জেমের সঙ্গে। কাজটি দেখাশোনা করছেন ডন, পলাশ ও কাউসার।
নিঃস্ব, উদ্বাস্তু অনেক মানুষ:
আড়াকুলের নোয়ার্দা এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, ধলেশ্বরী নদীর একটি শাখা গ্রামের পাশ দিয়ে গেছে। এর দুই পাশের মাটি লুট চলছেই। এর আগে লুট হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের জমির মাটি।
পূর্ব বীর বাঘৈরের ভুক্তভোগী হাওয়া বেগম বড় আকৃতির এক গর্ত দেখিয়ে বলেন, ‘ওইখানে আমার স্বামীর বাড়ি ছিল। মাটিদস্যুরা আমাদের উচ্ছেদ করে মাটি নিয়ে গেছে। এখন বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। এখন ওরা মাটি কাটতে কাটতে এই বাড়ির পাশে চলে এসেছে। জানি না, এখানে কত দিন টিকতে পারব।’
হাওয়া বেগমের বড় ভাই তসলিমও (৫৯) জানান একই কথা। তিনি বলেন, ‘মাটিদস্যুদের কারণে বহু মানুষকে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারাতে হয়েছে। বিভিন্ন ইটভাটায় এই মাটি সরবরাহ করা হয়।’
ব্রাহ্মণগাঁও গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটির অবস্থা সবচেয়ে করুণ। যত্রতত্র মাটি লুটের দৃশ্য। মসজিদের পাশে বিলটির যেন অস্তিত্বই নেই। আছে বিশাল আকৃতির চারটি গর্ত। গভীরতা হবে ৫০ থেকে ৬০ ফুট। আর একেকটির আয়তন হবে কমপক্ষে ২০ হাজার বর্গফুট। মাটি লুট করতে গিয়ে ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে রেললাইনটিও। পাশে স্কুল ভবনও ঝুঁকিতে।
স্থানীয় এক গৃহবধূ সাংবাদিকদের একটি গর্তের পাশে নিয়ে গিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে বিলাপ শুরু করেন। তিনি বলেন, এখানে তাদের বসতভিটা ছিল। কিছু জমিতে চাষাবাদও করতেন। কয়েক মাস আগে দস্যুরা মাটি কেটে এতটাই গভীর করেছে যে ভরাট করাও দুঃসাধ্য। অন্যের জমিতে পরিবার নিয়ে তার উদ্বাস্তুজীবন কাটছে। তিনি বলেন, ‘মাটি লুটেরারা এতটাই শক্তিশালী যে থানায় গেলেও কোনো প্রতিকার মেলে না।’
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেক সাইনবোর্ড পড়ে রয়েছে। একটি সাইনবোর্ডে লেখা—এই জমির মালিক ড. মো. হুমায়ুন কবির, জমির পরিমাণ ৪.৫ শতাংশ। সাইনবোর্ডে উল্লিখিত মোবাইল নম্বরে কল দিলে কথা হয় হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে।
সাইনবোর্ড ভেঙে পড়ে রয়েছে—এ খবর শুনেই বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি। পেশায় চিকিৎসক হুমায়ুন জানান, কয়েক মাস আগে সাড়ে ৪ শতাংশ জমিটি কিনে বাউন্ডারি দিয়ে রেখেছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় মানুষের জমি থেকে মাটি লুট হয় বলে এলাকায় সতর্ক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু রাতারাতি তার জমির মাটিও যে লুট হয়ে গেছে, সে খবর জানতেন না।
প্রশাসনের ভাষ্য:
কেরানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সল বিন করিম বলেন, ‘শুনেছি সেখানে কিছু ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। জমির মাটি লুটের ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’ তিনি জানান, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফসলি জমির মাটি কাটার কোনো নিয়ম নেই।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি শাহ জামান বলেন, ‘ওসব এলাকায় এর আগেও মাটি কাটার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সময় প্রশাসন ব্যবস্থাও নিয়েছে। এবার কেউ অভিযোগ দেয়নি। আমরা এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেব।’
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমানও বলেন, ‘এর আগেও মাটি লুটের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভূমি অফিস থেকে কোনো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলে আমরা তাদের সহযোগিতা করে থাকি। তবে সম্প্রতি কেউ মাটি লুটের বিষয়ে অভিযোগ দেয়নি। তবু আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’
(ঢাকাটাইমস/০৯জানুয়ারি/এআরডি/ডিএম)