যুগপৎ আন্দোলন: সমমনা ‘ছোট’ দলের চার জোট বিএনপির ‘বড়’ কৌশল!

প্রকাশ | ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:২৭

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকাটাইমস

সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপি। দুই দশক পর ভেঙেছে দলটির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। তবে সম্প্রতি বিএনপির আন্দোলনে একাত্ম হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে কয়েকটি রাজনৈতিক জোট।

প্রশ্ন উঠেছে, এসব জোটের ছোট ছোট দলগুলো নিয়ে। রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে দলগুলো বিএনপির গায়ে চড়ে ফায়দা লুটতে চায় বলেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা। বিএনপি এবং সদ্য বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোটের শরিক নেতাদের মধ্যেই অসন্তোষ রয়েছে মাঠের রাজনীতিতে অস্তিত্বহীন এসব দল নিয়ে।

তবে জানা গেছে, ছোট দলগুলোর জোট গঠন বিএনপির একটা কৌশল। ২০ দলীয় জোট ভাঙা এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কার্যকর না থাকায় একা হয়ে যাওয়া ছোট দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির পক্ষে আলাদা বৈঠক করা বা যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়ে সমন্বয় করাও কিছুটা কঠিন। বরং দলগুলো পৃথক জোটভুক্ত হলে তাদের সঙ্গে বিএনপির সমন্বয় করা সহজ হবে।

অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপির আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে সমমনা দলগুলো। যুগপৎ আন্দোলনে তারা নানা কর্মসূচিও পালন করছে।

এতদিন ধরে ২০ দলীয় জোটের নেতারা রাজপথে বিএনপির দুই দশকের সঙ্গী ছিলেন। সম্প্রতি সেই জোট বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিএনপি। এরপরই অনেক দল যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হওয়ার নাম করে নতুন নতুন জোট সৃষ্টি করছেন।

অভিযোগ উঠেছে, এসব জোটের ছায়ায় অনেক অরাজনৈতিক দলও নিজেদের রাজনৈতিক দল পরিচয় দিয়ে ফায়দা লুটতে চায়। সমমনা দলগুলোর রাজনৈতিক অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ বিএনপি এবং সদ্য বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোটের শরিকরা। তারা অরাজনৈতিক সংগঠনকে রাজনৈতিক দল পরিচয় দিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চ ঘোষণা দেয়ায় বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেন।

তারা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা সংগঠনগুলো নিজেদের রাজনৈতিক দল পরিচয় দিয়ে জোট গঠন করে জোটভিত্তিক রাজনীতিকেই কলংকিত করছে। এসব অস্তিত্বহীন দলগুলো নিয়ে মাঠে নামায় ‘পরগাছা নির্ভরশীল’ হয়ে পড়ছে বিএনপি।

ছোট ছোট দল নিয়ে জোটের আত্মপ্রকাশের সময় উপস্থিত থাকছেন বিএনপির শীর্ষনেতারাও। সবশেষ গত রবিবার বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে ১৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘সমমনা গণতান্ত্রিক জোট’। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান উপস্থিত ছিলেন।

বিলুপ্ত হওয়া ২০ দলীয় জোটের এক শীর্ষনেতা এবং ১১ দলীয় জোট নেতা নাম প্রকাশ করার না শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, জোট রাজনীতির যে ঐতিহাসিক গুরুত্ব তা আজ বিলীন হতে চলেছে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মাধ্যমে এ উপমহাদেশে জোট রাজনীতি শুরু হয়েছিলো তা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিএনপি সমমনা গণতান্ত্রিক জোট নিয়ে যাদের বৈধতা দিয়েছে এরা ছিন্নমূল ও ভূঁইফোড় সংগঠন। এদের নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন হাস্যকর।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও জোটের আরেক শীর্ষনেতা ঢাকা টাইমসকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সতীন হিসেবে সতীনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতে পারছি না। তবে, আমার প্রশ্ন, বিএনপি কি রাস্তায় পড়ে গেছে? এগুলো করে বিএনপি নিজেদের দেউলিয়াত্বের প্রমাণ দিচ্ছে।

২০ দলীয় জোট বিলুপ্তি হওয়ার পর ১২ দলীয় জোট, ১১ দলীয় জোট (জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট), ৭ দল নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ, ৪ দল নিয়ে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ছাড়াও এলডিপি, গণফোরাম, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিএনপির দেয়া ১০ দাবিতে ইতোমধ্যে রাজপথে নেমেছে।

১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের এক শীর্ষনেতা বলেন, নতুন গঠিত জোটে কারা আছেন? কি তাদের পরিচয়? আন্দোলন সংগ্রামে তারা কবে, কোথায় রাজপথে ছিলো? এগুলো করে কেউ কেউ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। এ বিষয়ে বিএনপির শীর্ষনেতাদের সতর্ক হতে হবে।

জানা গেছে, ১৫ দলের সমন্বয় হয়েছে তারা কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এ সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নস্থানে মানববন্ধন ও সেমিনারের আয়োজন করতো। আর সেখানে বিএনপি নেতা, জোট নেতা ও জাতীয়তাবাদীপন্থী বুদ্ধিজীবীরা বক্তব্য দিতেন।

প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগেই ছোটখাটো দলগুলো নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে বড় দলগুলোর সাথে জোট করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। বড় দলগুলোও নিজেদের পাল্লা ভারি করতে এসব নাম সর্বস্ব দল নিয়ে জোট গঠনে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

তবে, দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিতে অতি তৎপর দেখা যাচ্ছে ওয়ানম্যান শো রাজনৈতিক দলগুলোকে। যার ধারাবাহিকতায় ১৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে নয়া রাজনৈতিক মঞ্চ ‘সমমনা গণতান্ত্রিক জোট’। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ জোটের ঘোষণা দেওয়া হয়।

যা বলছেন বিএনপি নেতারা:

নতুন এ জোট প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এরা প্রেসক্লাবকেন্দ্রিক কিছু সংগঠন। এরা কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এ সংগঠনগুলো প্রেসক্লাব ও ডিআরইউতে বিভিন্ন ব্যানারে সভা-সমাবেশ করে থাকে।

এ জোট গঠনের প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য। তবে আমানকে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।

অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাক টাইমসকে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যাদের নিবন্ধন আছে অথবা রাজনৈতিক গ্লামার আছে তাদেরই জোট বা যুগপৎ আন্দোলনে শরিক করা উচিত।’

(ঢাকাটাইমস/১০জানুয়ারি/জেবি/ডিএম)