দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল রাখার তাগিদ

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:০০ | প্রকাশিত : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:২৬

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে কোনোভাবেই যেন রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল না হয়, সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। কারণ সবার আগে দেশের স্থিতিশীলতা। দেশের স্বার্থে দশের স্বার্থে দেশের বড়দলগুলোকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপের আয়োজন করা হতে পারে। কারণ দিনকে দিন দুই দলের কর্মসূচিকে ঘিরে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। যদিও দুই দলের পক্ষ থেকেই জনগণের কল্যাণে কর্মসূচি পালন করা হয় বলে বার্তা দেওয়া হয়। বিএনপি বলছে, তারা দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন করছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি যেন রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতা করতে না পারে- সেজন্য তারাও রাজপথে সোচ্চার রয়েছে।

সর্বশেষ গতকালও দুই দলের মহড়া ছিল সড়ক-মহাসড়কে। বিএনপি গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পাল্টা কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ। এতে সাধারণ মানুষ নিজেদের নিয়ে শঙ্কায় পড়েন। শাহজাহানপুরে দুই সন্তান নিয়ে থাকেন সামিয়া ইসলাম। কয়েক দিন আগে তার দশম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে গিয়েছিল কোচিংয়ে। বের হওয়ার পরপরই সে মালিবাগ এলাকায় একটি দলের মিছিলের মুখে পড়ে। সংঘর্ষ বাধে পুলিশের সঙ্গে তাদের। মাঝখানে পড়ে যান ওই শিক্ষার্থী। দিশেহারা হয়ে পড়ে সে। স্কুল ব্যাগ ছিল তার কাঁধে। কিন্তু পুলিশ ভাবছে সে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করেছে। তাকে এক পুলিশ ইশারা দেয়। সে ভয়ে একটি দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। গতকালও গণসমাবেশ কর্মসূচি উপলক্ষে সাধারণ মানুষ পথে পথে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। যদিও গতকাল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা ছিল। কিন্তু রাজধানীতে বড় ধরনের কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল সকাল থেকে বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচি এবং আওয়ামী লীগের সতর্ক পাহারা ঘিরে জনমনে উৎকণ্ঠার অবসান হয় সন্ধ্যায়। কিন্তু আবার কখন কোন কর্মসূচি তাদের স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতন ঘটায়- সে শঙ্কা সব সময় তাদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ স্বস্তি চায়। তারা আর মারামারি কাটাকাটি দেখতে চায় না। তাদের স্বার্থে যদি রাজনীতি হয়ে থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। তারা মনে করেন, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি রাজনীতিকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। সংঘাত অনিবার্য করে তুলতে পারে। এই রাজনৈতিক সংকট নিরসন শক্তি প্রদর্শন করে সম্ভব নয়। এর জন্য সংকট উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে সংলাপের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে বিরাজমান সংকট নিরসনে বৃহত্তর দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে এগিয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকায় তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে মনে করেন তাদের অনেকেই।

এদিকে কয়েক মাস ধরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। বিএনপির কর্মসূচির দিনে একাধিকবার শান্তি রক্ষার কারণ দেখিয়ে সতর্ক পাহারায় থাকার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। গতকালও এর ব্যত্যয় ঘটায়নি দল দুটি। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য রক্ষা এবং জাতীয় নির্বাচনপূর্ব শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার পথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে বড় বাধা ও শঙ্কাময় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের পথ বের করতে হবে। সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।’

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ দখল বা শক্তি প্রদর্শনে সমস্যার সমাধান হবে না বলেও মনে করেন সুজন সম্পাদক।

সাবেক সিনিয়র সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ আবু আলম মো. শহীদ খান এ বিষয়ে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলকে পরামর্শ দেওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। তবে একই দিনে কর্মসূচি পালন সংঘাতময় পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। এ জন্য তাদের উচিত হবে, তারা যখন কর্মসূচি দেবেন একে অপরের কর্মসূচির প্রতি খেয়াল রাখবেন। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেওয়া রাজনৈতিক সংঘাতের পথ সৃষ্টি করে এবং এটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিরও পরিপন্থী। এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি যখন একটি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়, তখন তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা এটাকে সেভাবেই নেন যে, এটা এমন কর্মসূচি যেখানে আমাদের শোডাউন করতে হবে। এই শোডাউন করতে গিয়ে সংঘাত হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যারা নাগরিক সমাজ, যারা শান্তি চাই, দেশের গণতন্ত্র বিকশিত হোক এটা চাই, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। যে কারণে আমরা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি দেশ অর্জন করেছি- সেই লক্ষ্যের প্রতি খেয়াল রেখে আমরা মনে করি, এ ধরনের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেওয়ার যে প্রবণতা সেটা অবশ্যই বাদ দিতে হবে। সেটা থাকা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সাথে যায় না।’

এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই সিনিয়র সচিব বলেন, ‘সংকট সমাধানের প্রথম পথ তো সংলাপ। সেই পথটা ভালো পথ, শান্তিপূর্ণ পথ। সেই পথেই সংকটের উত্তরণ ঘটতে হবে। সংকট উত্তরণ না হলে পৃথিবীর দেশে দেশে এমনকি বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময়ে অনেক কিছু ঘটেছে- যেটা আমাদের নজরে আছে, আমরা সবাই জানি কি কি ঘটেছে। যেমন- জনঅসন্তোষ তীব্র হতে পারে, গণঅভ্যুত্থান ঘটতে পারে, জরুরি অবস্থা জারি করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে, দেশে অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা রদবদল হতে পারে। এসব যদি আমরা না চাই, যেটা আমরা আসলেই চাই না- সেটাকে যদি অ্যাভোয়েড করতে হয়, তাহলে তো সংলাপ ছাড়া শান্তিপূর্ণ কোনো পথ খোলা নেই সামনে।’

আবু আলম মো. শহীদ খান আরও বলেন, ‘নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, রাজনৈতিক সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে সংলাপই সর্বোত্তম পন্থা । তবে সেটাই একমাত্র পন্থা হবে কি না সেটা নির্ভর করে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। এই সর্বোত্তম পন্থা যদি রাজনৈতিক দলগুলো গ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে তো সংকট ঘনীভূত হবে। আরও সংঘাতময় হবে পরিস্থিতি এবং সেই পরিস্থিতিতে অতীতের মতো অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। সেই ব্যাপারে আমাদের সাবধান থাকতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো সে ব্যাপারে গভীরভাবে বিবেচনা করবে- এটাই প্রত্যাশা। বিশেষত সরকার, যারা ক্ষমতায় আছেন- তাদের জন্য এটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারে যারাই থাকেন, যখন যারা ছিলেন- তাদের জন্যই এমন পরিস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। যদি এই চ্যালেঞ্জ উত্তরণ ঘটাতে না পারে, তাহলে তো অন্য কিছু ঘটে যেতে পারে। এই ঘটনা তো আমরা কেউ চাই না।’

অন্যদিকে এই রাজনৈতিক সংকটের বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সংঘাত-সহিংসতাময় বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রধানতম উপায় হচ্ছে, একে অপরের প্রতি গণতান্ত্রিক আচার-আচরণ দেখানো এবং পরমতসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করা। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের প্রতিও প্রত্যেককে শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।’

এদিকে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গেল বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই রাজপথ দখলের লড়াই চলছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। বিরোধী দলকে এককভাবে রাজপথে কোনো শোডাউনের সুযোগ দিতে নারাজ ক্ষমতাসীনরা। বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির জবাবে একই দিন পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। গতকালও ঢাকাসহ দেশের ১০ বিভাগীয় শহরে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটের গণঅবস্থান কর্মসূচির দিন 'সতর্ক পাহারায়' থাকার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও। সম্ভাব্য সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ঠেকাতে 'শান্তি সমাবেশ' কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকছেন দলটির নেতাকর্মীরা। প্রধান দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতি। দুপক্ষের এ মুখোমুখি অবস্থানে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল বিএনপি। সেই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।

(ঢাকাটাইমস/১২জানুয়ারি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :