ডলার প্রবাহ বৃদ্ধিতে স্বস্তির আশা
প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:১৪
রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সসহ বিভিন্ন উৎস থেকে দেশে ডলারের প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে স্বস্তির আশা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ডিসেম্বর মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৫৩৭ কোটি ডলার রপ্তানি আয় এসেছে। পাশাপাশি ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারিতে বাড়তি যোগ হবে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তির প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের দাম। ফলে পণ্য আমদানি ব্যয়ও কমে রিজার্ভ আরও সংহত হবে, যা স্বস্তিদায়ক।
যদিও সবশেষ গত রবিবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর আমদানি দায় হিসেবে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার শোধ করার পর রিজার্ভ দাঁড়িয়ছে ৩২ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারে। তবে রপ্তানি তহবিল ও অন্যান্য হিসাবে থাকা প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এই মুহূর্তে ২৪ বিলিয়ন ডলার। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চললেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানির লাগাম টানা ও ডলার আসার প্রবাহ বাড়তে থাকায় সামনে আরও স্বস্তি ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এখন যে রিজার্ভ আছে সেটি দিয়ে আগামী সাত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পাঁচ মাস আমদানি করার মতো রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা আছে। আমাদের মুদ্রাস্ফীতি ৯-এর ওপর চলে গিয়েছিল। এখন ৮ এর নিচে নেমে গেছে। আইএমএফের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। আমাদের মাথাপিছু আয় ও জিডিপি বাড়বে-এমন আভাসও পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি খাতও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে, গত ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫৩৭ কোটি ডলার, যা এক মাসের রপ্তানি আয়ের হিসাবে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অক্টোবর শেষে সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। নভেম্বর শেষে সেটি বেড়ে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ হয়েছে। ডিসেম্বরে রেমিট্যান্সেও ইতিবাচক ধারা ফিরেছে। এসময়ে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। চলতি জানুয়ারি মাসে তা আরও বাড়তে পারে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের(আইএমএফ) দেওয়া ঋণের প্রথম কিস্তির প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে যোগ হবে। বিশ্ববাজারেও পণ্যের দাম নিম্নগতিতে আছে, সেটি অব্যাহত থাকলে আমদানি ব্যয়ও কমবে।
ডলারের সংকটের কারণে গত বছর আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার হয়। বিলাসী ও কম গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়। শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতেও ঋণপত্র খোলায় সংকট দেখা দেয়। এতে কমবেশি সব ধরনের পণ্য আমদানির প্রবাহ কমে যায়। এতে সাময়িক সময়ের জন্য ডলার খরচে রাশ টানা সম্ভব হয়।
এদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রধান মুদ্রা ইউরোর বিপরীতে ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে মার্কিন মুদ্রার মূল্য। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাতে পারে। ফলে ডলারের দরপতন ঘটছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিরুদ্ধে ব্যাপক শক্তিশালী হয়েছে জাপানি ইয়েন। গত ৬ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। এক প্রতিবেদনে তা জানিয়েছে ব্যাংক অব জাপান (বিওজে)। ডলারের মান কমলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘ডলার সংকটে রিজার্ভে কিছুটা চাপ থাকলেও শঙ্কার কিছু নেই। গত মাসে আমদানি বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন। সে হিসেবে ৩২ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে সাড়ে সাত থেকে আট মাসের আমদানি বিল পরিশোধ করা সম্ভব। এছাড়া আমরা আমরা আশা করছি রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স বাড়বে। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে স্বস্তির আশা আমাদের।’
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় আমদানি ব্যয় কমেছে। আবার রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়ছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সামনে রিজার্ভ বাড়বে।
তবে সার্বিক স্বার্থে আমদানি বাড়ানোর ওপর তাগিদ দেন তিনি। বলেন, আমদানি না বাড়ালে উৎপাদন কমে আসবে। সেটি আবার নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
(ঢাকাটাইমস/১৪জানুয়ারি/এমএইচ/ইএস)