শীতে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখে ডিম

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৫৫ | প্রকাশিত : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫২

শীতে আমাদের শরীর খারাপ হওয়ার আশঙ্কা সব থেকে বেশি থাকে। কারণ শীতের সময়ই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে নানাবিধ জীবাণুর আক্রমণ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে করোনার উপদ্রোপ তো আছেই। ঠান্ডা-সর্দি, ফ্লু ও করোনার যে ভাইরাসগুলো সেগুলো শ্বাসযন্ত্রকে অসুস্থ করে। শীতকালে শরীর সুস্থ রাখার জন্য উপযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরী। প্রতিদিনের খাবারে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট এবং ভিটামিনসের যোগান যদি ঠিকঠাক না থাকে তাহলেই সহজে বিভিন্ন রোগ জাঁকিয়ে ধরে শরীরকে। এমতাবস্থায় সুস্থ থাকতে বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন বিশেষ পরামর্শ। আমাদের আশেপাশে প্রতিনিয়ত ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ারা ঘোরাঘুরি করছে। চোখে দেখা যায় না এমন ক্ষতিকারক এই ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াই শরীরের বেশিরভাগ রোগের পেছনে দায়ী। এদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শরীরে শক্ত-সামর্থ্য রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দরকার।

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিনের জন্য চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ, সকলেই প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন। বেশিরভাগ পুষ্টিকর উপাদান প্রাকৃতিকভাবে যেসব খাবারে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো ডিম। যেমন- ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, বি এবং বি-টুয়েলভ্। এছাড়াও ডিমে আছে লুটেইন ও যিয়াস্যানথিন নাম দুটি প্রয়োজনীয় উপাদান যা বৃদ্ধ বয়সে চোখের ক্ষতি ঠেকাতে সাহায্য করে।

এছাড়া মিনারেল, ফসফরাস, আয়রন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজসহ সব উন্নত পুষ্টি উপাদান থাকায় ডিমের গুরুত্ব অনেক। পেশির গঠনের জন্য ডিম অত্যন্ত উপযোগী। পেশি সুস্থ সবল রাখতে হলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন প্রয়োজন শরীরে। সুপারফুড ডিম মস্তিষ্কের টিস্যু গঠন ও মেধা বিকাশে সহায়তা করে।

শীতে সিদ্ধ ডিম বেশি খান। কারণ, শরীরের জন্য উপকারী মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড চর্বি আছে সেদ্ধ ডিমে। এগুলো স্যাচুরেটেড ফ্যাটকে সরিয়ে দিয়ে তার স্থান দখল করে এবং রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে। ফলে হৃৎপিণ্ড ভালো থাকে। হার্টের জন্য উপকারী এই চর্বিগুলো ইনসুলিনও নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তের চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়বেটিসের জন্য এ ধরনের ফ্যাটগুলো খুবই উপকারী। সেদ্ধ ডিমের দুই তৃতীয়াংশই এ ধরণের উপকারী ফ্যাট দিয়ে গঠিত। সেদ্ধ ডিমে প্রাকৃতিকভাবেই প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে। ব্রেকফাস্টে একটি সেদ্ধ ডিম খেলে ৬ গ্রামের বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়।

চিকিৎসকরা বলছেন, একজন দিনে কতগুলো করে ডিম খেতে পারবেন, তা নির্ভর করবে তার শারীরিক কী জটিলতা আছে, তার উপর। এক জন সুস্থ মানুষ সপ্তাহে সাত দিনই ডিম খেতে পারেন। কিন্তু যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে, তাদের জন্য ডিম ক্ষতিকারক। কারণ, ডিমের কুসুম খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। এ ছাড়াও হজমের গোলমাল, গ্যাস, রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদেরও বেশি ডিম খাওয়া উচিত নয়।

ডিমের জনপ্রিয়তা যেমন আছে, তেমনই ডিমের বদনামও কম নেই। এই বদনাম অবশ্য কুসুমের জন্য। কারণ বেশি কুসুম খেলে আর্থরাইটিস, কোলেস্টেরল হওয়ার একটা আশঙ্কা থাকে। তবে চিকিৎসকদের মতে, ডিমের কুসুমে মাত্র ১০০-৩০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। সেটুকু শরীরে ভাল কোলেস্টেরল তৈরির কাজে লাগে। আর ডিমের সাদা অংশে কোনও কোলেস্টেরল থাকে না।

ডিম খেলে শরীরের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে দিনে কতগুলি ডিম খাওয়া যায়, সে বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া জরুরি। পুষ্টিবিদদের মতে, সপ্তাহে ৩-৪টির বেশি ডিম খাওয়া ঠিক নয়। ডিমে রয়েছে ‘অ্যাভিডিন’ নামক গ্লাইকোপ্রোটিন, যা শরীরের ভিতরে বায়োটিন শোষণে বাধা দেয়।

ওজন কমিয়ে যারা রোগা হতে চাইছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ডায়েট হল ‘বয়েলড এগ ডায়েট’। এই ডায়েট অনেক প্রকারের হয়। যার মধ্যে একটিতে সারা দিন ধরে শুধুই ডিম সিদ্ধ খেয়ে থাকার নিয়ম। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এক দিনে ৬টি ডিম। পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, যারা প্রতি দিন খুব বেশি শরীরচর্চা বা কায়িক পরিশ্রম করেন না, তাদের কখনও একসঙ্গে এতগুলি করে ডিম খাওয়া ঠিক নয়।

সুস্থ মানুষের পক্ষে দিনে একটি ও সপ্তাহে ৪টির বেশি ডিম খাওয়া ঠিক নয়। প্রোটিন ডায়েটে থাকা মানুষের জন্যও দিনে ১টি ও সপ্তাহে ৪টির বেশি ডিম পাতে না রাখলেই ভাল। সে ক্ষেত্রে প্রোটিনের জোগান বাড়াতে হবে মাছ-মাংস ও উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে।

শিশু এবং তরুণদের জন্য অতিরিক্ত ভিটামিন এবং প্রোটিনযুক্ত ডিমও পাওয়া যায়। তাই কোলেস্টেরলের ভয়ে ডিম না খাওয়ার পুরনো চিন্তা এখন অনেকটাই কমেছে বলেও দাবি করছে কিছু কিছু সংস্থা। কিন্তু শারীরিক সমস্যা থাকলে ডিম খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া জরুরি বলে মত ডাক্তারদের একাংশের।

পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, ১০০ গ্রাম মুরগির ডিমে ২৫৫ মিলিগ্রাম আর হাঁসের ডিমে ৩৫৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টরল থাকে। তাদের মতে, দু-একটা হাঁস-মুরগির ডিম খেলে এতে থাকা কোলেস্টরল স্বাভাবিকভাবে আমাদের রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রাকে খুব একটা প্রভাবিত করে না।

পুষ্টিবিদদের মতে, ডায়াবেটিস কোনো মানুষ বা যার কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা রয়েছে অথবা যার স্থুলতার সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ডিমের কুসুম খাওয়ার ফলে সমস্যা বাড়তে পারে। তবে কোনো শিশু বা তরুণের ক্ষেত্রে দুটা ডিম বা ডিমের কুসুম খেলে কোনো সমস্যই হবে না।

সর্দিজ্বর থেকে বাঁচাতে অত্যন্ত উপকারী একটি খনিজ উপাদান দস্তা। যা ডিম থেকে পেতে পারেন। সর্দিজ্বরের বেশিরভাগ ওষুধে এই দস্তা থাকে। ভিটামিন বি সিক্স ও বি টুয়েলভ এই দুটি ভিটামিনও প্রচুর পরিমাণে থাকে ডিমে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে জরুরি। সেদ্ধ ডিমের ৬০ শতাংশ ক্যালোরি আসে চর্বি থেকে। মোট ক্যালরি থাকে প্রায় ৮০ ভাগ। ফলে সকালে একটি মাত্র সেদ্ধ ডিম খেলে সারাদিন শক্তি পাওয়া যায় এবং দুর্বলতা হ্রাস পায়।

শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়াটা হার্টের পক্ষে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কোলেস্টেরলের মধ্যে আবার ভাল-খারাপের ভাগ আছে। যদি শরীরে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে চান তাহলে নির্ভয়ে প্রতিদিন ২ টো করে ডিম খান। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

স্বাস্থ্যকর মাত্রায় চর্বি থাকে ডিমে। তবে এটা আপনাকে মোটা বানাবে না। শীতকালে এই চর্বি শরীরের জন্য উপকারী। ডিমের একটি প্রধান খাদ্য উপাদান হলো ভিটামিন এ। ভিটামিন এ রেটিনায় আলো শুষে নিতে সহায়তা করে, কর্নিয়ার পাশের মেমব্রেনকে রক্ষা করে এবং রাতকানার ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন সকালে একটি সিদ্ধ ডিম খেলে খাবার তালিকায় ৭৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ যুক্ত হয়।

ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, বায়োটিন, থিয়ামিন এবং আরও অনেক উপযোগী উপাদান। এই সমস্ত উপাদান ত্বক, চুল এবং নখের যত্ন নেয়। তাই সুস্থ সবল থাকার পাশাপাশি চির যৌবন লাভের জন্য বিশেষত ত্বকের যত্নে, চুলের যত্নের কথা ভেবেও ডিম রাখুন ডায়েটে। যাদের নখ বিনা কারণেই ভেঙে যায় ডিম খেলে তাদের সেই সমস্যা দূর হতে পারে।

আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটা খুব ভালো। প্রতিটি ডিমে দশমিক ৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য দারুণ কার্যকরী। ডিমে থাকা পটাশিয়াম রক্তে সোডিয়াম, বায়োটিনের মাত্রা ঠিক রাখে। ফলে শরীরে ভালো পরিমাণে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়। এতে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায়। সেই সঙ্গে হৃৎপিণ্ডও ভালো থাকে। এছাড়া এতে কম ক্যালরি থাকে এবং বহুমুখী পুষ্টি উপাদানের দিক থেকেও এটি বেশ সমৃদ্ধ।

শীতকালে যেহেতু সূর্যের দেখা পাওয়া যায় কম তাই ডিম খেলে আপনি সেই উপকার পাবেন। প্রতিদিনের ভিটামিন ‘ডি’য়ের চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করতে পারে একটি ডিম। সিদ্ধ ডিমে আছে ভিটামিন ডি, যা হাড় ও দাঁত শক্ত করে। ভিটামিন ডি খাবার থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে সহায়তা করে এবং রক্তের ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে শরীরের হাড়ের কাঠামো মজবুত ও শক্ত হয় এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ হয়।

ঢাকাটাইমস/১৪ জানুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

কিডনি রোগ বাড়ছে শিশুদেরও! যেসব লক্ষণ দেখলেই সতর্কতা জরুরি

সস্তার পেয়ারার গুণে বশে থাকে ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :