একনেকে উঠছে ইভিএম প্রকল্প

এমএস নাঈম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:২৪ | প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:১৩

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী মঙ্গলবারের বৈঠকে এজেন্ডায় না থাকলেও বিষয়টি উত্থাপন হতে পারে বলে জানা গেছে।

একনেক বৈঠকে এই প্রকল্প পাস হলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড়শ’ আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা কেটে যাবে। ইসির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হতে পারে।

নির্বাচন কমিশন ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী মঙ্গলবার একনেক সভায় তোলার জন্য অনেকটা তড়িঘড়ি চলছে। গত বুধবার ইসির প্রস্তাবনা পাওয়ার পর পরবর্তী একনেক সভায় উত্থাপনের জন্য পরিকল্পনা কমিশন অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছে।

ইতোমধ্যে জারি হওয়া মঙ্গলবারের একনেক সভার নোটিশ সূত্রে জানা গেছে, সেখানে আটটি প্রকল্প উপস্থাপন হবে। ওই প্রকল্পগুলোর মধ্যে 'নির্বাচন ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা' তথা ইসির ইভিএম কেনার প্রকল্পটি নেই।

তবে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, কোনো বিষয় এজেন্ডায় না থাকলেও টেবিলে উত্থাপনের সুযোগ রয়েছে। কমিশন চাইলে যেকোনও প্রকল্প বৈঠকের টেবিলে তুলতে পারে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এবারের একনেক বৈঠকে সম্পূরক এজেন্ডা হিসেবে টেবিলে ইভিএম প্রকল্প উঠবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ইসির হাতে থাকা ইভিএম দিয়ে ৬০ থেকে ৭০টি আসনে ভোট করার সক্ষমতা থাকলেও কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড়শ’ (সর্বোচ্চ) আসনে ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ফলে বাকি আসনগুলোর জন্য নতুন করে ইভিএম সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

এ জন্য গেল বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কমিশন সভায় দুই লাখ নতুন ইভিএম কেনাসহ তা রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণের জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এতে প্রতিটি ইভিএম এর দাম ধরা হয় ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। এছাড়া ৫৩৪টি গাড়ি, ১০টি গুদাম তৈরি ও এক হাজারের মতো লোকবল নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়।

নির্বাচন কমিশনের প্রকল্পে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকায় দুই লাখ ইভিএম এবং যন্ত্রগুলো বিভিন্ন জায়গায় আনা-নেওয়ার জন্য ২৬৪ কোটি টাকায় ৫৩৪টি যানবাহন (ডাবল কেবিন পিকআপ) কেনার কথা বলা হয়েছে। ইভিএম রাখতে ৩৭০ কোটি টাকায় ১০টি গুদাম (ওয়্যারহাউস) নির্মাণ করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়। এর বাইরে ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়ে প্রচারে ২০৬ কোটি টাকা, নির্বাচনে ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম ভাড়ায় ১৩২ কোটি টাকা এবং অন্য আরও খাতে ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

‘নির্বাচনি ব্যবস্থায় ইভিএম ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্প গত ২০ অক্টোবর সরকারের অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে গত ৮ নভেম্বর সেই প্রস্তাবটি ইসিতে ফেরত পাঠায় পরিকল্পনা কমিশন।

পর্যবেক্ষণে কয়েকটি ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন ব্যয় কমানোসহ ফিজিবিলিটি স্টাডির কথা বলা হলেও ইসি বলছে, যেহেতু তারা আগে থেকেই ইভিএম ব্যবহার করছে, তাই একই যন্ত্রের ওপর ফিজিবিলিটি স্টাডির প্রয়োজন নেই। এ ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ নিয়েই প্রস্তাবটি ফের পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরবর্তীকালে ইসি ও পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে কয়েক দফা চিঠি চালাচালি শেষে পরিকল্পনা কমিশনের শর্ত পূরণ করে গত বুধবার (১১ জানুয়ারি) পুনর্গঠিত প্রকল্প প্রস্তাব আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

আগে থেকেই ইসি জানিয়েছিল, জানুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে প্রকল্প পাস না হলে তাদের পক্ষে ইভিএম কেনাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে দেড়শ’ আসনে ইভিএম ব্যবহার অসম্ভব হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে ব্যালটে ভোট করার প্রস্তুতি নেবে ইসি।

ইসির এমন বক্তব্যের পর পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান গণমাধ্যমকে জানান, ‘এটা ১৫ জানুয়ারিই হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। এটা ১৮ কিংবা ২০ জানুয়ারি হতে পারে, আবার আগামীকালও হতে পারে। আমরা খোলা মন নিয়ে আইন-কানুনের আওতায় কথা বলছি।’

বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গণমাধ্যমকে জানান, ‘ইভিএম প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা গত বুধবার পাঠিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, সিদ্ধান্ত যা-ই হোক না কেন, পরবর্তী বৈঠকে এটা একনেকে উঠবে।’

এদিকে ইভিএমে ভোট গ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। গত জুলাই মাসে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ করে, সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট চায়। অন্যদিকে বিএনপি ইভিএমকে ‘কারচুপির যন্ত্র’ বলে অভিযোগ করে আসছে। সংলাপে ২২টি দল ইভিএম নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছিল। জাতীয় পার্টিসহ ১৪টি দল ইভিএম নিয়ে তাদের সংশয় ও সন্দেহের কথা স্পষ্টভাবেই বলেছে। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেও সংলাপে বলেছিলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করছে না।

(ঢাকাটাইমস/১৫জানুয়ারি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :