ঝিনাইগাতীতে সুপেয় পানির সংকট

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১৫:৩২

মো. আব্বাস উদ্দিন, শেরপুর

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার অন্য যেকোনো এলাকার চেয়ে উচু ভূমি ও পাহাড়ি টিলা ভূমি এলাকা। উচু ভূমি ও পাহাড়ি এলাকা হওয়ার কারণে অগভীর নলকূপের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা যায় না।

ইতোপূর্বে অত্র এলাকায় ব্যক্তিগত, সরকারি-বেসরকারি (এন.জি.ও) এর মাধ্যমে সুপেয় পানির জন্য অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছিল, তা বর্তমানে অচল অবস্থা।

কারণ পানির স্তর অনেক নিচের লেভেলে চলে যাওয়ার কারণে স্থাপিত টিউবওয়েল গুলো সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যে কারণে গ্রাম অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামের ভাষায় একটি কথার প্রচলন আছে ‘প্রয়োজন নাকি আইন মানে না।’ তাই অনেকেই পানির চাহিদা পূরণ করতে ১৫-২০ ফুট অগভীর নলকূপ স্থাপন করে আয়রন যুক্ত অনিরাপদ খাবার পানি সংগ্রহ করছে এই অগভীর নলকূপ থেকে। যা পানের জন্য ঝুঁকি মুক্ত নয়। অনেক গ্রাম অঞ্চলের পরিবারের লোকেরা সুপেয় পানি সংগ্রহের জন্য প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভীর নলকূপের সুপেয় পানি কষ্ট করে সংগ্রহ করে। আগে গ্রাম অঞ্চলের লোকেরা সুপেয় পানির উৎস হিসাবে মাটির কুয়া পাকা কুয়া থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতো। এছাড়া পাহাড়ি এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা খাবার পানি সংগ্রহ করতো বিভিন্ন পাহাড়ের ঝর্ণা থেকে। বর্তমানে পাহাড়ি ঝর্ণা গুলোতে তেমন ভালো পানির প্রবাহ নেই। তাই সুপেয় পানির সংকট দূর করার জন্য সরকারি ভাবে পাহাড়ি অঞ্চলের রিংওয়েল টিউবওয়েল দিয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু এই সমস্ত সরকারি রিংওয়েল টিউবওয়েলগুলো কার্যত অধিকাংশই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। পানির স্তর অধিকতর নিচে নেমে যাওয়ায় প্রায় সব ধরনের অগভির নলকূপ থেকে সুপেয় পানি সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। উল্লেখ্য ঝিনাইগাতী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়ন উচু ভূমি এলাকা যথা-ক্রমে নলকুড়া, কাংশা, ধানশাইল, গৌরিপুর ও ঝিনাইগাতী। এই ৫টি ইউনিয়নের সিংহভাগ লোক দরিদ্র কৃষক শ্রমিক ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। এই সমস্ত পরিবারের পক্ষে গভীর নলকূপ স্থাপন করে সুপেয় পানি সংগ্রহ করা সম্ভব না। তাই এই সমস্ত দরিদ্র কৃষক শ্রমিক ও আদিবাসী সম্প্রদায়দের জন্য সরকারিভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন করে সুপেয় পানি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে অত্র এলাকাবাসীর দাবি। প্রকাশ থাকে যে, সরকারিভাবে প্রতি বছর প্রায় ২০০ গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।

ঝিনাইগাতী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রাধাবল্লভ সরকারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গভীর নলকূপ সরকারি বরাদ্দের চেয়ে এলাকায় চাহিদা অনেক বেশি। বরাদ্দকৃত গভীর নলকূপ বিতরণ করতে আমাদের অনেক হিমশিম খেতে হচ্ছে। অত্র উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ গ্রাম অঞ্চলের সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হলে বরাদ্দ বৃদ্ধি না হলে সুপেয় পানির সংকট কাটানো অনেকটা কঠিন।

এ ব্যাপারে সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহদাৎ হোসেন, নলকূড়া ইউপি চেয়ারম্যান রুকুন্নুজ্জামান ও গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান পলাশের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপের চাহিদা অনেক। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গ্রাম অঞ্চলের লোকের গভীর নলকূপের চাহিদা পূর্ণ করতে না পারায় আমাদের অনেক জবাব দিহিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাই আমাদের দাবি সরকারিভাবে গভীর নলকূপের বরাদ্দ বৃদ্ধি করে সুপেয় পানির সংকট দূর করার জন্য উধ্র্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানায়।   

(ঢাকাটাইমস/১৫জানুয়ারি/এসএ)