লুটপাট হয়ে যাচ্ছে পি কে হালদারের ক্রোক করা সম্পদ

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:৪১

মিজান মালিক, ঢাকাটাইমস

আর্থিক খাতের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ, চারটি লিজিং কোম্পানি থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লুটের সঙ্গে জড়িত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) বেশ কিছু সম্পদ বেহাত হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা টাইমসের কাছে আসা তথ্য বলছে, পি কে হালদারের অবৈধ সম্পদের তালিকায় ময়মনসিংহের ভালুকায় ৯ বিঘা জমির ওপর মুরগির খামার রয়েছে। এই সম্পদ আদালতের নির্দেশে ক্রোক অবস্থায় রয়েছে। এমনকি সেই সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কয়েকজনকে দায়িত্বও দেয়া আছে। এরমধ্যেই একটি সুবিধাবাদী মহলের চোখ পড়ে ওই সম্পদের ওপর।

সূত্র জানায়, তারা ওই ফার্মের সব মুরগি ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি করে টাকা নিয়ে গেছে। বিষয়টি তদন্তকারী সংস্থা দুদক জানতে পেরে লুটপাট বন্ধে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডিকে চিঠি দিয়ে এ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়েছে।

জানা গেছে, পি কে হালদারের লুটপাটের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আদালত থেকে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হলেও সেই কমিটি অনেকটা নিষ্ক্রিয়। অথচ উচ্চ আদালত থেকে তাদের কাজ ঠিক করে দেয়া ছিল।

জানা গেছে, কাজের কাজ কিছু না হলেও তারা বেতন-ভাতা ঠিকই নিচ্ছেন। এমনকি একজন কর্মকর্তাকে মোটা অংকের বেতন দিতে গিয়ে ঋণও করতে হয়েছে একটি লিজিং কোম্পানিকে। জানা গেছে, ওই লিজিংয়ের এমডির বেতন-ভাতা ৩০ লাখ টাকা।

এদিকে, তদন্ত সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, পি কে হালদারের ৯ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা মুরগির ফার্ম থেকে ৩০ লাখ টাকার মুরগি বিক্রি করে কারা টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এমনকি জড়িতদের একটি তালিকাও প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আজ রবিবার দুদকের তদন্ত টিমের পক্ষ থেকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইনান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত এমডির কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

‘রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ’ সংক্রান্ত ওই চিঠিতে সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রাদি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন’ মর্মে উল্লেখ করা হয়।

দুদকের উপপরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধানের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, দুদক কর্তৃক পি কে হালদারের সমস্ত সম্পত্তি এবং স্থাপনার ওপর আদালতের ক্রোক/ফ্রিজ আদেশ থাকা করার সত্ত্বেও কিছু সম্পত্তি বেহাত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সে কারণে অনুসন্ধানের স্বার্থে কিছু তথ্য জানা দরকার।

এরমধ্যে ভালুকায় অবস্থিত রেপটাইলস ফার্মের পাশে পি কে হালদারের সম্পত্তিতে অবস্থিত মুরগির ফার্মের আট হাজার মুরগির বর্তমান কী অবস্থা তা জানতে চায় দুদক।

চিঠিতে বলা হয়, এটা কি আদালত বা ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের বোর্ডের আদেশে বিক্রি করা হয়েছে কিনা, বিক্রি হয়ে থাকলে এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে কে কে জড়িত তার তথ্য দরকার। তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, বিক্রি লব্ধ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে কিনা বা কী অবস্থায় আছে তার বিবরণও জানাতে হবে।

এতে আরও জানতে চাওয়া হয়, পি কে হালদারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ‘রেপটাইল ফার্মে’র ভেতরে কোনো রেপটাইল ফার্মের মালিক পক্ষ ব্যতিত তৃতীয়পক্ষ কর্তৃক ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের বর্তমান বোর্ড কর্তৃক কোনো স্থাপনা নির্মাণ বা কনস্ট্রাকশনের কোনো অনুমোদন আছে কি না। প্রতিষ্ঠানের কুমির বিক্রির কোনো অনুমোদন বা আদেশ বোর্ড বা কোনো আদালত কর্তৃক সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে কি না। থাকলে তার কপি দুদককে সরবরাহ করতে হবে। আর না থাকলে উক্ত স্থানে প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপনা কীভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে বা এ সংক্রান্ত অর্থ কে দিল তার সুনির্দিষ্ট রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে হবে।

আগামী ১৭ জানুয়ারির মধ্যে দুদকের কাছে এসব রেকর্ড ও তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয় চিঠিতে।

পি কে হালদার বর্তমানে ভারতের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তিনি এবং তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুদক এ পর্যন্ত ৫২টি মামলা করেছে। এরমধ্যে ৩৮টি মামলা রয়েছে পি কে হালদারের বিরুদ্ধেই। ১৪ জনের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও পাচারের অভিযোগে দুদকের করা মামলার বিচারকাজ চলছে এখন।

দুদকের একজন মহাপরিচালক ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা পি কে হালদার ও তার সমস্ত চক্রটির বিরুদ্ধে জোরদার তদন্ত করছি। এই সময়ে তাদের যেসব সম্পদ তদন্তের আওতায় এসেছে তা ক্রোক অবস্থায় রয়েছে। সেই সম্পদের ওপর কাদের নজর পড়ল, কারা লোপাট করে নেয়ার রাস্তা করেছেন তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

(ঢাকাটাইমস/১৫জানুয়ারি/এমএম)