তদারকি সংস্থার অভিযান: তাৎক্ষণিক প্রভাব বাজারে, অনুপস্থিতিতেই সচল সিন্ডিকেট

অভিজিত রায় কৌশিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:১৮ | প্রকাশিত : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:১০

সিন্ডিকেট করে মূল্যবৃদ্ধির বাজারে প্রতিনিয়তই কাটা হচ্ছে ভোক্তাসাধারণের পকেট। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ‍অতিমুনাফার লোভে পড়ে বাড়িয়ে দেওয়া হয় নিত্যপণ্যের দাম। আর বাজারে এসব সিন্ডিকেট ও ভোক্তার ন্যায্য অধিকারের আশায় নিয়মিত কাজ করছে সরকারের বেশ বিছু তদারকি সংস্থা। প্রতিনিয়তই চালানো হচ্ছে অভিযান।

তবে অভিযান চলাকালে বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়লেও অভিযান শেষ হতে না হতেই সচল হয় সিন্ডিকেট। আগের অবস্থানে ফিরে যায় বাজার। আবারও ক্রেতা ঠকাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে দোকানিরা।

তবে এতো অসাধু ব্যবসায়ীর মাঝে অভিযোগের নিষ্পত্তির মধ্যেও অনেকটাই সফলতার মুখ দেখেছে তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। অভিযানের পর সব ব্যবসায়ী সতর্ক না হলেও কিছু ব্যবসায়ী ও ভোক্তার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদেরকে নিয়ম-নীতির মধ্যে আনতে পেরেছেন বলে মনে করছেন ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি মিরপুর এক নম্বর শাহ আলী মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে ইসলাম ট্রেডার্সের মালিক নুর হোসেনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে খাবারে ব্যবহৃত রঙয়ের নামে কাপড়ের রঙ বিক্রির কারণে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে সংস্থাটি। তবে অভিযানকালে অবাক করার মতো তথ্য জানতে পারে তদারককারীরা। এসব খাবারের অনুপযোগী রঙ মিশ্রিত খাবার খেয়ে ক্লোন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন ওই মার্কেট কমিটির সভাপতি তপন কাজী। ফলে তার মার্কেটে আর কোনো খাবারের অনুপযোগী কিছু বিক্রি করতে দেবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধেও সতর্ক হয়েছেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডলের ভাষ্য, একই অপরাধে পরবর্তীতে কোনো ব্যক্তি আবার অপরাধ করলে তাকে জেলসহ কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। সেই সঙ্গে তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’

বাজার তদারকির কারণে অনেকটাই সফলতা আসছে বলে জানান আব্দুল জব্বার মন্ডল। তিনি বলেন, নিয়মিত বাজার তদারকির কারণে মানুষ অনেক সচেতন হয়েছেন। ব্যবসায়ীরাও সচেতন হচ্ছেন। তবে কিছু ব্যবসায়ী বার বার অনিয়ম করেন। আমরা তাদের বিরুদ্ধে তথ্য পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেই। আমাদের জনবলের সংকট রয়েছে। যার ফলে অভিযান কাজে সফলতা কিছুটা ধীরগতি। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে সবার আগে সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সাধারণ মানুষ সচেতন হলে সবকিছু নিয়মের মধ্যে চলে আসবে।

এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেল ও ভোজ্য তেলে প্রভাব পড়েছে বিশ্ব বাজারে। আর বিশ্ববাজারের প্রভাবে কিছু পণ্যের দামে প্রভাব পরেছে দেশের বাজারেও। তবে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সব ধরনের পণ্যেই দাম বাড়ানো ও অনিরাপদ খাদ্যের ব্যাবহার করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাদেরকে রুখতেই নিয়মিত বাজারে অভিযান চালিয়েছে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থাগুলো।

সম্প্রতি রাজধানীর বাজারগুলোতে অভিযানে দেখা গেছে, বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত আদায়, নিবন্ধন না থাকা, নোংরা পরিবেশে মানহীন ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও পরিবেশনের অভিযোগ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এ সময় বেশকিছু প্রতিষ্ঠানকে তাৎক্ষণাৎ সাজা ও জরিমানার আওতায় আনা হয়। এর মধ্যে মুদি দোকানসহ নিত্যপণ্য বিক্রয়কারী পাইকারি ও খুচরা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও হোটেল-রেস্তোরাঁ শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

পূর্বনির্ধারিত অভিযান সম্পর্কে বাজারে না জানানো হলেও তদারককারী কর্মীরা বাজারে ঢুকতেই নড়েচরে বসেন ব্যাবসায়িরা। হয়ে ওঠেন সতর্ক। এর মাঝেও নানান অপরাধে শাস্তির আওতায় আনা হয় তাদের। এরপর অভিযান শেষে তদারককারী কর্মীরা বাজার ত্যাগ করতেই আবারও আগের অবস্থানে ফিরে নিজেদের ইচ্ছামত অনিয়মে মেতে ওঠেন তারা।

তবে এসব অভিযানের বেশ কিছু সুফলও এরই মাঝে লক্ষ্যণীয় হয়েছে। হঠাৎকরেই বাজারে বেশকিছু পণ্যের বেড়ে যাওয়া দাম নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে সংস্থাগুলো।

বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে ডিমের দামে অস্থিরতা শুরু হলে দফায় দফায় অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডেকে সতর্কও করে দেয় সংস্থাটি। ফলে কিছুটা দাম নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম হয় ভোক্তা অধিকার। এছাড়া ভৈজ্যতেল, চাল, চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের অরাজকতা ঠেঁকাতেই অভিযান চালিয়ে দাম নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করে।

তবে সে সময় সাময়িক ভাবে ডিমের দাম কমলেও আবারও বাজারে উদ্ধমূখীর আভাস দিচ্ছে দিমের দাম। এছাড়া বাজারে প্যাকেট চিনি সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রিতে লাভ কম হওয়ায় বর্তমানে বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে প্যাকেট চিনি। ইচ্ছামত দামে খোলা চিনি বিক্রিতে লাভ ভালো হওয়ায় বিক্রি হচ্ছে খোলা চিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৮জানুয়ারি/কেআর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :