ঝামেলাবিহীন রান্নার আধুনিক সমাধান ইনডাকশন কুকার

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৫ | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৯

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ডিজিটাল যুগে সময়ের সাথে সাথে রান্না করার পদ্ধতিতে এসেছে ভিন্নতা। ডিজিটাল কুকিং-এর একটি অন্যতম পদ্ধতি হলো ইনডাকশন কুকার। বিশেষ করে গ্যাসের সংকটকালে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে ইনডাকশন কুকার। অনেকের বাসায় আবার গ্যাসের সংযোগ নেই। সেক্ষেত্রেও এটি সহজ সমাধান। ইনডাকশন কুকার দ্রুত গরম হয় বলে এতে রান্না করাও অনেক সহজ। আবার এর ব্যবহারে বিদ্যুৎও খুব বেশি খরচ হয় না। তাই রান্নার কাজে অনেকেরই পছন্দের তালিকায় থাকে এই ইনডাকশন কুকার।

ইনডাকশন কুকার প্রচলিত সব রন্ধন পদ্ধতি থেকে যথেষ্ট আলাদা এবং রীতিমত বিস্ময়কর। ইনডাকশন কুকিং বা আবেশ রন্ধন পদ্ধতিতে "আবেশিক তাপ" সৃষ্টি করে রন্ধন করা হয়৷ আবেশ রন্ধনপৃষ্ঠ হিসাবে একটি ফেরো চুম্বকীয় ধাতুর পাত ব্যবহার করা হয়, যা সমগ্র রন্ধন-পাত্রটি গরম না করে রন্ধন সমাধা করতে পারে৷

ইনডাকশন কুকারে রন্ধন পাত্রের তলায় তামার তারের একটি কুণ্ডলী জড়ানো থাকে৷ তারের তলায় থাকে একটি কুলিং ফ্যান৷ তামার তারের কুণ্ডলীটির মাঝে পরিবর্তী প্রবাহ প্রবাহিত করানো হয়৷ কুণ্ডলীটির কাছে থাকা একটা মূল এবং অন্য একটা সহকারী প্রবাহ উৎস জড়িয়ে তামার কুণ্ডলীর মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহের সৃষ্টি করা হয়৷ সেই প্রবাহ একটি পরিবর্তী চুম্বকীয় ক্ষেত্র উৎপন্ন করে৷ সেই চুম্বকীয় ক্ষেত্রই আবার পাত্রটিতে আবেশিক বৈদ্যুতিক প্রবাহের সৃষ্টি করে৷ ধাতুর পাত্রটির মধ্য দিয়ে যাওয়া বিদ্যুত প্রবাহ একটি "রোধকীয় তাপ" সৃষ্টি করে এবং সেই খাদ্যবস্তুকে উত্তপ্ত করে তোলে৷ এই তাপের সহায়তায় রান্নাবান্না করা, ঠাণ্ডা খাদ্য গরম করা ইত্যাদি সকল রন্ধন কার্য করা যায়।

ইনডাকশন বলতে হিট বা তাপ তৈরির একটি নিয়মকে বুঝানো হয়। ট্রেডিশনাল ইলেকট্রিক স্টোভ রেডিয়েন্ট হিট ব্যবহার করে খাবার রান্না করে। মাইক্রোওয়েভ মাইক্রো বা ছোট এনার্জি ওয়েভ ব্যবহার করে একই কাজ করে। ইনডাকশন রেঞ্জ মূলত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্যান বা পটে থাকা খাবার রান্না করে।

ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সাইকেল এর দ্রুত রেসপন্স এর কারণে সাধারণ রান্নার চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে ইনডাকশন চুলা ৫০% দ্রুত রান্না করতে পারে। ইনডাকশন কুকটপ পট ও প্যানে থাকা অণুগুলোকে উত্তেজিত করে যা থেকে ম্যাগনেটিক ফিল্ড ভাইব্রেশন তৈরী হয় ও খাবার রান্না হয়। ইনডাকশন চুলাতে মাত্র দুই মিনিটে এক পট পানি গরম করা যাবে যা অন্য যেকোনো মাধ্যমে কিছুটা সময়সাপেক্ষ বটে।

ইনডাকশন রান্নার ক্ষেত্রে বার্নার এবং পট বা প্যান এর মধ্যে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রিয়েকশনের মাধ্যমে কাজ করে। তবে কোনো বার্নারে কোনো পট বা প্যান না থাকলে কোনো ধরনের হিট জেনারেট করে না ইনডাকশন কুকার।

ইনডাকশন কুকারে রান্নার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। নয়তো রান্না সঠিক হবে না, কুকারটিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আপনার অসতর্কতায় ঘটতে পারে কোনো দুর্ঘটনাও। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক ইনডাকশন কুকারে রান্নার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন

আপনার ইনডাকশন কুকারে যদি ঢাকনা থাকে তবে সেটি যথাযথভাবে আটকে তারপরই রান্না বসান। এভাবে খাবারের পুষ্টিগুণ ও গন্ধ দুই-ই বজায় থাকবে।

অনেকে ইনডাকশন কুকারে রান্নার পর হাঁড়ি-বাসন টেনে নামান। এমনটি করবেন না। কারণ ঘষা লাগলে চুলাটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই রান্নার পর চুলা বন্ধ করে এরপর রান্নার পাত্রটি উঠিয়ে নিন।

রান্নার সময় অনেকে ভুলে খালি হাতে ধরে ফেলতে পারেন। তবে এসময় ভুলেও গরম সিরামিকে হাত দেবেন না। কারণ এতে হাত পুড়ে ফোসকা পড়ে যেতে পারে।

ইনডাকশন কুকারে রান্নার সময় ভাঙা কিংবা ফেটে যাওয়া কাঁচের ঢাকনা ব্যবহার করবেন না। এসময় চুলায় কিছু পড়লে সাথে সাথে তা মুছবেন না। রান্না শেষ হলে চুলা বন্ধ করে তারপর মুছে নেবেন।

কুকারে ব্যবহৃত তার দূরে সরিয়ে রান্না করবেন। চুলায় পোড়া দাগ লাগলে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করে পরিষ্কার করবেন। গরম কোনো পাত্র ইনডাকশনে বসাবেন না। সব সময় ঠান্ডা পাত্র বসিয়ে এরপর রান্না করবেন।

স্টোরেজে রাখার সময় বাসনের মাঝে পেপার টাওয়েল দিয়ে রাখবেন। এতে স্ক্র্যাচ পড়ার ভয় থাকবে না।

ইনডাকশন কুকটপ সব সময় শুকনো রাখবেন। এমন কোনো বাসন কুকটপে বসাবেন না যার কোণায় ধার আছে, এতেও কুকটপে স্ক্র্যাচ পড়তে পারে। ভারি কোনো জিনিস কুকটপের ওপরে বসিয়ে রাখবেন না।

বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ইনডাকশন কুকার পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ব্র্যান্ড- ওয়ালটন, কনকা, নোভা, মেগা, ভিশন, সিঙ্গার, মিয়াকো, জেব্রা, পালসন, কোনিয়ন, ওশান ইত্যাদি। বাজারে যেসব প্রচলিত ব্র্যান্ডের ইনডাকশন কুকার রয়েছে সেগুলোর দাম সাধারণত ৩ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ঢাকাটাইমস/১৮ জানুয়ারি/আরজেড)