সরিষায় কৃষকের স্বপ্ন পূরণের হাতছানি, ফুলের ঘ্রাণে মুগ্ধ প্রকৃতিপ্রেমীরা

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:০৫

ফরমান শেখ, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)

সরিষার হলুদের ফুলে ছেয়ে গেছে টাঙ্গাইলের গ্রামাঞ্চলের দিগন্ত জুড়ে ফসলের মাঠ। যতদুর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। যেন হলুদের রাজ্য। সরিষা ক্ষেতের এ হলুদ রাজ্যে লুকিয়ে আছে কৃষকের স্বপ্ন। প্রতিটি সরিষা ক্ষেতে পৌঁষের কনকনে হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন।

এ সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত যেমন ফসলের মাঠ, তেমনি বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখে মুখে ফুটেছে আনন্দের হাসি। এতে করে সরিষার হলুদ ফুলের হাসিতে স্বপ্ন দেখছেন সরিষাচাষিরা। ফলে এবার সরিষায় ভৈাজ্যতেলের অভাব কমে আসার অপার সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা।

এক দিকে স্বপ্নে বিভোর কৃষক, অন্যদিকে সরিষার হলুদ ফুলের গালিচা ও মৌ-মৌ ঘ্রাণে মুগ্ধ হচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষগুলো।

জেলার ১২ টি উপজেলার মধ্যে- মধুপুর, ধনবাড়ী, গোপালপুর, কালিহাতী, সদর, ভূঞাপুর ও গোপালপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন্যায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবাদি ও অনাবাদি আনাচে-কানাচে ও পরিত্যক্ত জমিগুলোতে গত বারের তুলনায় চলতি মৌসুমে প্রায় দ্বিগুণ হারে সরিষা চাষাবাদ করেছে কৃষকরা। এসব জমিতে সরিষা গাছে ফুল ও ফল এসেছে। হলুদ ফুলের জমির পাশে মৌ চাষিরা মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছে। এছাড়া পাশাপাশি সরিষা ক্ষেতে ছবি, সেলফি ও ভিডিও ধারণ করছে প্রকৃতিপ্রেমীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তর সূত্রে ১২ টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরিষায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ১২০ হেক্টর জমি। তারমধ্যে জেলা সদরে সাত হাজার ২৫৮ হেক্টর জমি এবং প্রণোদনা পেয়েছে দুই হাজার ৫০০ কৃষক, বাসাইলে ছয় হাজার ৫০ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে দুই হাজার ৬০০, কালিহাতীতে চার হাজার ১৪০ হেক্টর ও  প্রণোদনা পেয়েছে দুই হাজার ৫০০ কৃষক,  ঘাটাইলে তিন হাজার ৪৬৬ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে দুই হাজার ৪০০ কৃষক,  নাগরপুরে ১১ হাজার ৫৮৬ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছন দুই হাজার ৫০০ কৃষক।

 

এছাড়া মির্জাপুরে ১১ হাজার ৬১১ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে দুই হাজার ৬০০ কৃষক, মধুপুরে ৭১২ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে দুই হাজার ৪০০ কৃষক, ভূঞাপুরে দুই হাজার ৪৫০ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে দুই হাজার ৪০০ কৃষক, গোপালপুরে দুই হাজার ৬১০ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে দুই হাজার ৪০০ কৃষক, সখীপুরে দুই হাজার ৪৯০ হেক্টর ও  প্রণোদনা পেয়েছে দুই হাজার ৪০০ কৃষক, দেলদুয়ারে তিন হাজার ১৮৭ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে দুই হাজার ৪০০ কৃষক এবং ধনবাড়ীতে ৫৬০ হেক্টর ও প্রণোদনা পেয়েছে দুই হাজার ৪০০ কৃষক।

অপরদিকে, অতিরিক্ত আরও ৬ হাজার হেক্টর জমি সরিষা চাষের আওতায় আশায় জমির পরিমাণ বেড়ে ৫৮ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সরকারিভাবে উপজেলা ও পৌরসভায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ে ৩০ হাজার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরিষার বীজসহ সার বিতরণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সরিষা চাষে বিভিন্ন ধরণের রোগ বালাই ও ফসলের প্রাকৃতিক দুর্যোগরোধে সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে সব ধরণের সহযোগিতা করে আসছে কৃষি অধিদপ্তর। 

ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা গ্রামের কৃষক আব্দুল করিম ফালু জানান, বষা মৌসুমে পানির নিচে থাকে এ এলাকার জমিগুলো। তখন ধান চাষ করা যায় না। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রতিবারের মতো এবারও সরিষা চাষ করেছি। তবে, এ মৌসুমে কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে সরিষা বীজ ও সার পাওয়ায় গতবারের চেয়ে আরও ৬ বিঘা জমিতে বেশি সরিষা চাষ করেছি। সরিষাতে এখন ফুল ফুটেছে। সরিষার ভাল ফলন দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে সরিষায় চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।

 

ঝনঝনিয়া গ্রামের সরিষা চাষি আব্দুর রহীম মিঞা জানান, এবার সরিষার ফলন ভালো দেখা যাচ্ছে। ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। শুধু আমাদের নয়, আশেপাশের সকল চাষিদের ফসল ভাল দেখা যাচ্ছে। তবে, হাল চাষের খরচ বৃদ্ধি ও অন্যান্য খরচ বেশি হওয়ায় কাঙ্খিত দাম নিয়ে শঙ্কা। দাম ভাল হলে গত বারের চেয়ে লাভের অংক বেশি হতে পারে। সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এবং সরিষার ভাল মূল্য পেলে এ অঞ্চলে সরিষা চাষের পরিধি আগামীতে আরও বাড়বে বলে আশা করছি।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আহসানুল বাসার জানান, দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহতম জেলা হচ্ছে টাঙ্গাইল। ১২ টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরিষায় লক্ষ্যমাত্রা ৫২ হাজার ১২০ হেক্টর জমি। প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় ও কৃষিমন্ত্রীর মাধ্যমে ভৈাজ্যতেলের ঘাটতি পূরণে ১৫% সরিষা উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও ৬ হাজার হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত সরিষা চাষ করা হয়েছে। জেলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ে প্রায় ৩০ হাজার কৃষকদের মাঝে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষার বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে কৃষকরা কাঙ্খিত ফলন পাবে আশা করছি।

(ঢাকাটাইমস/১৮জানুয়ারি/এসএ)