ছয় বছর আগে যুবকের হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন পিবিআইয়ের

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:২১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ছয় বছর আগের রাজীব হোসেন কাজী নামের এক যুবকের হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে যশোর জেলা পুলিশ ব্যুরো ইনভেটিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটির দাবি, মাটির নিচে ড্রামে পাওয়া কঙ্কালের পরিচয় সনাক্ত করতে পেরেছেন। এই হত্যার সঙ্গে জড়িত মো. সালামকেও গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। 

গ্রেপ্তারকৃত মো. সালাম এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।  

বুধবার দুপুরে যশোরের পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

নিহত রাজীব হোসেন কাজী খুলনা জেলার দিঘলিয়া থানার চন্দোলি মহল গ্রামের মো. ফারুক হোসেনের ছেলে। 

পিবিআই জানায়, ২০২২ সালের ৩০ মে  যশোর কোতয়ালী মডেল থানার পুরাতন কসবা নিরিবিলি পাড়ার  বজলুর রহমানের বাউন্ডারী দেয়া ঘেরা জায়গায় ভবন নির্মাণের জন্য খোড়ার সময় পরিত্যাক্ত পুরাতন টয়লেটের রিং স্লাবের কুয়ার ভেতরে একটি নীল রংয়ের প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে মানুষের হাড়গোড় ও মাথার খুলি পাওয়া যায়। 

এ ঘটনায় যশোর জেলা পিবিআই ছায়া তদন্ত অব্যহত রাখে। তদন্তকালে জানা যায়, রাজীব হোসেন কাজী তার চাচা হাসমতের বাসায় থেকে এসে যশোরের শেখ সজিবুর রহমানের বাসায় ও অফিসে কাজ করতেন। ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ রাত আটটার দিকে রাজীব তার বাবাকে ফোন করে তাদের খুলনার বাড়িতে আসছেন বলে জানান। কিন্তু রাজীব খুলনায় তাদের বাড়িতে যাননি। রাজীব বাড়িতে না গেলে তার বাবা রাজীবের মোবাইল ফোনে কল করে মোবাইল ফোন বন্ধ পান।

তখন রাজীবের বাবা ফারুক হোসেন তার ভাই হাসমতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হাসমত জানান গত ২৯ মার্চ থেকে রাজীবকে তারাও পাচ্ছেনা। কয়েকদিন পর রাজীবের মা মাবিয়া বেগম তার ছেলের খোঁজে যশোরে আসেন। রাজীবের মা মাবিয়া বেগম ও চাচা হাসমত সজীবের বাসায় গিয়ে রাজিবের খোঁজ করলে সজীব জানায় রাজিব কোথায় গেছে তিনিও তা জানেন না। রাজীবের মা আরও বলেন, তারা যেন মামলা মোকদ্দমা করে ছেলেকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন। 

পিবিআইয়ের ভাষ্যমত, রাজীবের মা ও চাচা যশোরের বিভিন্ন জায়গায় রাজীবকে খোঁজ করতে থাকেন। সজীবের অফিস এবং বাড়িতে ও সম্ভব্য সকল জায়গায় খুঁজাখুঁজি করে কোনো সন্ধান না পেয়ে তারা নিরুপায় হয়ে পড়ে। রাজীবের মা নিরুপায় হয়ে বাড়িতে ফিরে যান। রাজীবের পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ফকির কবিরাজের কাছে যান। ওই কবিরাজ তাদেরকে জানায় রাজীব বেঁচে আছে সে ফিরে আসবে অপেক্ষা করতে হবে। রাজীব ফিরে আসবে ভেবে তারা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেন। মাঝেমধ্যে কবিরাজের কাছে গেলে সে তাদেরকে আশ্বাস দেন রাজীব বেঁচে আছে এবং সে ফিরে আসবে।

পিবিআইয়ের তদন্তকালীন সময়ে রাজীবের বাবা মো. ফারুক হোসেন যশোরের পিবিআই অফিসে আসেন। আর পুলিশ সুপার (এসপিকে) তার ছেলেকে সনাক্তকরণের জন্য অনুরোধ করেন। এ ঘটনায় যশোরের পিবিআইয়ের অফিসে একটি জিডি করা হয়। যার জিডি নম্বর-১৪৬, তারিখ  ১২/০৯/২০২২। ওই জিডির সূত্র ধরে পিবিআইয়ের এসআই (নিঃ) মো. জিয়াউর রহমান মো. ফারুক হোসেন এবং তার স্ত্রী মাবিয়া বেগমকে আদালতের নির্দেশ গ্রহণ করে কঙ্কালের সঙ্গে তাদের পরিচয় সনাক্তের নিমিত্তে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সিআইডির সদর দপ্তরে পাঠান।  

ডিএনএ পরীক্ষায় ড্রামের মধ্যে পাওয়া মানবদেহের কঙ্কালের সঙ্গে মো. ফারুক হোসেন ও তার স্ত্রী মাবিয়ার ডিএনএর মিল পাওয়া যায়। ড্রামের ভেতরে পাওয়া কঙ্কাল বাদীর ছেলের তা ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়। ড্রামের মধ্যে পাওয়া কঙ্কালের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর এ ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড বলে মনে হয়। 

তখন নিহত রাজীবের বাবা ফারুক হোসেন যশোরে এসে যশোর কোতয়ালী থানায় তার ছেলের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি মামলা করেন। কোতয়ালী মডেল থানার মামলা নম্বর-৩৪। 

এই মামলাটি পিবিআই স্ব-উদ্দ্যোগে গ্রহণ করে মামলার তদন্তভার এসআই জিয়াউর রহমানের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়। মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের তত্ত্ববধানে পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিনের নেতৃত্ত্বে পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মো. শামীম মুসা, এসআই  স্নেহাশিস দাশ, জিয়াউর রহমান, ডিএম নূর জামাল সহ যশোরের একটি দল সোমবার ঘটনার সঙ্গে জড়িত মো. সালাম মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃত মো. সালামের বরাত দিয়ে পিবিআই জানায়, সালামসহ অন্য ব্যক্তিরা মিলে রাজীবকে হত্যা করে। আর সালামের সহযোগিতায় লাশ গোপন করার জন্য ড্রামে ভরে তার ব্যবহৃত রিকশায় করে পুরাতন কসবা নিরিবিলি পাড়া শেখ সজিবুর রহমানের অফিসের টয়লেটের কুয়ার মধ্যে ফেলে দেয়। আর সালামকে মঙ্গলবার যশোরের জ্যেষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়। তিনি সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। 

গ্রেপ্তারকৃত মো. সালাম নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার মঙ্গলহাটা গ্রামের মৃত নুর মিয়ার ছেলে। 

(ঢাকাটাইমস/১৮জানুয়ারি/এএ/এসএম)