ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়ার অপব্যবহার বন্ধে সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর আইনি নোটিশ

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৫৭ | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:২৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের বেআইনিভাবে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরানো বন্ধ এবং এ সম্পর্কে একটি নীতিমালা করার জন্য আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, আইজিপি এবং কারা মহাপরিদর্শক বরাবর রবিবার ১০ আইনজীবীর পক্ষে এ নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন।

নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়ার অপব্যবহার বন্ধ এবং এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় নোটিশদাতাগণ উচ্চ আদালতের সম্মুখীন হবেন মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন জানান, একটি জাতীয় দৈনিকে ২০ ডিসেম্বর ছবিসহ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনে উঠে আসে গাজীপুরে একজন আসামি ডান্ডাবেড়ি পরিহিত অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়ছেন।

গত ১৭ জানুয়ারী ছবিসহ আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানেও দেখা যায়, শরীয়তপুরে আরেকজন আসামি একইভাবে ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়ছেন। এ সময়ের মধ্যেই একজন আইনজীবীসহ কয়েকজনকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে ঢাকা কোর্টে আনা হয়। এর কিছুদিন পূর্বে আরেকজন আইনজীবীকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে কোর্টে আনা হয়।

আসাদ উদ্দিন বলেন, ‘এসব ঘটনা পত্র-পত্রিকায় সংবাদের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কাছাকাছি সময়ে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, তানভীর হাসান তানু, প্রবীর শিকদার, শিল্পী জে কে মজলিস এবং কয়েকজন শিশুসহ অনেক আসামিকে হাতকড়া পরানোর ঘটনায় দেশব্যাপি সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। কিন্তু তারপরও আইন-শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’

বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশনের প্রবিধান ৩৩০-এ হাতকড়া সংক্রান্ত বিধান রয়েছে উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, ‘বিধানে কেবল পলায়ন রোধ করতে যতটুকু প্রয়োজন তার বেশি নিয়ন্ত্রন আরোপে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কোনো শক্তিশালী বন্দি সহিংস অপরাধে অভিযুক্ত হয় বা কুখ্যাত হিসাবে পূর্ব পরিচিত হয় বা অসুবিধা সৃষ্টিতে উন্মুখ থাকে বা রাস্তা দীর্ঘ হয় বা বন্দী সংখ্যা অনেক বেশি হয় সেক্ষেত্রে হাতকড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। হাতকড়া না থাকলে দড়ি বা কাপড় ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ প্রবিধানের কোথাও ডান্ডাবেড়ি ব্যবহারের কথা নেই।’

আসাদ উদ্দিন জানান, জেলকোড এবং কারা আইনে ‘কারা অপরাধের’ বর্ণনার পাশাপাশি শাস্তি হিসাবে অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে হাতকড়া এবং ডান্ডাবেড়ি ব্যবহারের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ কারাভ্যন্তরে কয়েদীরা সংশ্লিষ্ট ‘কারা অপরাধ’ করলে তার শাস্তি হিসাবে এর ব্যবহার করা যাবে।

এছাড়া যেসব কয়েদী পলায়ন করে বা পলায়নে উদ্যত হয় বা ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে হাতকড়া বা ডান্ডাবেড়ি পরানো যাবে। এর বাইরে এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে বন্দী স্থানান্তরের সময় ক্ষেত্র বিশেষে এর ব্যবহার করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘মূলত ডান্ডাবেড়ির ব্যবহার কেবলমাত্র জেল কোড এবং কারা আইনের আওতাধীন। আর বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশন অনুযায়ী প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কেবলমাত্র হাতকড়া ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কোনো ভাবেই ডান্ডাবেড়ি নয়।’

অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন জানান, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেবলমাত্র আইনানুযায়ী ব্যতিত ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির ক্ষতি করা নিষিদ্ধ। অনুচ্ছেদ ৩৫(৫) অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না বা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দন্ড দেওয়া যাবে না বা তার সাথে অনুরুপ ব্যবহার করা যাবে না।

কিন্তু আইনের এসব বিধানের বাইরে গিয়ে ডান্ডাবেড়ি এবং হাতকড়ার অপব্যবহার করা হচ্ছে। যা নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।

নোটিশ প্রেরণকারী অন্যান্য আইনজীবীরা হলেন—মীর এ কে এম নুরুন্নবী, মো. জোবায়দুর রহমান, মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন, আল রেজা মো. আমির, মো. রেজাউল ইসলাম, কে এম মামুনুর রশিদ, মো. আশরাফুল ইসলাম এবং শাহীনুর রহমান।

(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/এমআই/ডিএম)