দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের শেষ পাঁচ মাসের পৌনে ছয়শ মামলার নথি তলব

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:৪০ | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:৪৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের অবসরের আগের পাঁচ মাসে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটিতে দায়ের ও নিষ্পত্তি হওয়া প্রায় পৌনে ছয়শ মামলার নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। একই সময়ে ৪০৮টি অভিযোগের তদন্ত শেষে দুদকের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের পুরো নথি ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রবিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদালতে দুদকের পক্ষে আর রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক শুনানিতে অংশ নেন।

উল্লেখ্য, ইকবাল মাহমুদ ২০১৬ সালের ১০ মার্চ দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। ২০২১ সালের ১০ মার্চ তিনি অবসরে যান।

জাতীয় দৈনিক ইনকিলাবে ২০২১ সালের ১৪ মার্চ ‘দুদকে অনুসন্ধান-বাণিজ্য/বহু রাঘব বোয়ালকে ছেড়ে দেন ইকবাল মাহমুদ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ১৬ মার্চ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন।

একইসঙ্গে ইকবাল মাহমুদ কমিশন ‘দায়মুক্তি’ দিয়ে থাকলে কেন তা দেয়া হয়েছে, তাদের নাম, ঠিকানাসহ তালিকা ওইবছর ১১ এপ্রিলের মধ্যে দুদককে দাখিল করতে বলা হয়েছিলো।

এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার সকালে রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট দায়মুক্তি পাওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধান সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র তলব করেন বলে ওই জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধির পক্ষের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির জানিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, ‘এ আদেশের ফলে দায়মুক্তি দেয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের রেকর্ডপত্র দুদককে আদালতে দাখিল করতে হবে।’

ওই জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদায়ের আগে দুর্নীতির বহু রাঘব বোয়ালকে ছেড়ে দেন দুর্নীতি দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তাদের দায়মুক্তি আড়াল করতে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন কিছু নিরীহ ও দুর্বল ব্যক্তিকে। সব মিলিয়ে শেষ ৫ মাসে তিনি ২ শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (দায়মুক্তি) দেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইকবাল মাহমুদ বিদায় নেয়ার আগে স্বীয় কৃতকর্মের অনেক দালিলিক প্রমাণই যথাসম্ভব ‘নিশ্চিহ্ন’ করে যান। এরপরও এ প্রতিবেদকের হস্তগত হয় বেশকিছু নথি।

সে অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই শতাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলো সত্যিকারার্থে কোনো অনুসন্ধান হয়নি। হয়েছে অনুসন্ধান-বাণিজ্য। কথিত ‘নথিভুক্তি’ কিংবা ‘অনুসন্ধান পরিসমাপ্তি’র নেপথ্যে রয়েছে কোটি কোটি টাকার লেনদেন।

এ দুর্নীতিকে আড়াল করতেই একদিকে ধামরাই বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অবসরপ্রাপ্ত এমএলএসএস মো. দীন ইসলাম ভুইয়াকে (প্রধান কার্যালয়ের নথি নং-০০.০১.২৬০০.৬১৩.০১.০২০.১৯) ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে (ঢাকার নথি নং-০০.০১.০০০০.৫০২.০১.০১৪.১৯) টেন্ডার-জালিয়াতির মাধ্যমে চীনা কোম্পানিকে আড়াইশ’ কোটি টাকার কার্যাদেশ প্রদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরকেও। ‘অভিযোগ পরিসমাপ্তি’ সংক্রান্ত বেশিরভাগ নথিতে স্বাক্ষর করেন তৎকালিন মহাপরিচালক (বিশেষ অনু:-তদন্ত-১) সাঈদ মাহবুব খান।

প্রতিবেদনে দায়মুক্তি প্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের বিস্তারিত তথ্যও তুলে ধরা হয়।

(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/ডিএম)