ভালো নেই দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের হকাররা

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৩৩

লিটন মাহমুদ, ঢাকাটাইমস

পদ্মার বুকে সেতু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সুখ-সমৃদ্ধির দ্বার খুললেও ভালো নেই দৌলতদিয়ার ফেরিঘাটের হকাররা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতের অন্যতম অবলম্বন রাজবাড়ীর এই ফেরিঘাটকে কেন্দ্র করে যাদের সংসার চলত, ঘাটে জটলা বাঁধলেই যাদের মুখে হাসি ফুটত তাদের পড়তে হয়েছে অনটনে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দূরপাল্লার বাসের চাপ কমে যাওয়ায় অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে একসময়ের তুমুল ব্যস্ততম দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। আর বাসের চাপ কমাতে এ ফেরিঘাটে আসা যাত্রীসংখ্যা নেমেছে অর্ধেকেরও নিচে। ফলে চরম বিপদে পড়েছে এ এলাকার হকাররা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ট্রাফিক পরিদর্শক আফতাব উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'পদ্মাসেতু চালুর পর গাড়ির চাপ কমে যাওয়ায় কমে গেছে ফেরির সংখ্যাও। আর এখনতো আরো শীতকাল। যাওবা কিছু যাত্রী এঘাট দিয়ে পারাপার হতো শীতকাল আসাতে ফেরি ছাড়তেও দেরি হয়৷ যার কারণে যাত্রী সংখ্যা আরও কমেছে।'

৬৭ বছর ধরে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন ৭৮ বছর বয়সী আব্দুল লফিত মুন্সি। জুবুথুবু শীতেও এক দিন বাদ দেননি  ঝালমুড়ি বিক্রি করা। ঝালমুড়ির টিন ঘাড়ে করে প্রতিদিন সকাল ৭টায় চলে আসেন ফেরিঘাটে আর বিক্রি করেন রাত ১২টা পর্যন্ত। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দৌলতদিয়া ৫নং ফেরিঘাটের পল্টনে দাঁড়িয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। ঢাকাটাইমসকে এ বৃদ্ধ বলেন, 'আগে দিনে ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকার ঝালমুড়ি বিক্রি হতো। মশলা, মুড়ি, চানাচুরের দাম বাদ দিয়ে ৫-৭ শ টাকা পকেটে ঢুকত। আর এখন টেনেটুনে হাজার টাকা বিক্রি করন লাগে। একে তো বেচাবিক্রি কম তার ওপর আবার সব মালের দাম বাড়ছে। সব মিলিয়ে পেরে উঠতে পারি না।'

স্ত্রী, একমাত্র ছেলে ও তার বউকে নিয়ে হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা গ্রামে বাস করেন তিনি। এ বৃদ্ধ জানান, মানিকগঞ্জ শহরে তার ছেলে আব্দুক রাজ্জাক একটি মোবাইল দোকানে কাজ করেন। তবে ছেলে আয় পর্যাপ্ত না হওয়ায় এই বয়সেও ঝালমুড়ি বিক্রি করেন তিনি।

ছেলের অসুস্থতার কথা বলে তার একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে ৫বছরের অধিক সময় ধরে ফেরিতে ভিক্ষা করেন জালাল মোল্লা (৫৮)। তবে তার অভিযোগটা একটু আলাদা। তিনি বলেন, 'আগে ফেরিতে ভিক্ষুক কম উঠতো। এখন অনেকে নেশা করার জন্য টাকার জোগার করতে ভিক্ষুকবেসে ফেরিতে আসেন। এজন্য কমেছে আয়।' আগে সারাদিন ঘুরে ঘুরে হাজার টাকা উঠলেও এখন সর্বোচ্চ ৫ শ টাকা পান বলে ঢাকাটাইমসকে জানান তিনি।

দৌলতদিয়া সদর ইউনিয়ন বাসিন্দা মেহেদি হাসান(২৯)। ২০১২ সাল থেকে ফেরিতে বাচ্চাদের বিভিন্ন ছড়া, গল্পের বই, নামাজ শিক্ষার বই, বিশ্বনবীর ও হাদিসসহ নানা ধরনের বই বিক্রি করে আসছেন। পদ্মাসেতু চালুর পর আগে যা বিক্রি হতো তার অর্ধেকও হয়না বলে জানান তিনি। বলেন, 'আগে ফেরিভর্তি গাড়ি থাকতো। ঘাটের দুপাশে বাসের চাপ থাকতো। বেচাবিক্রিও হতো খুব ভালো। আর এখন বাসই নেই। সব লোক পদ্মা সেতু দিয়ে যায় এখন।'

 

দৌলতদিয়া ১ নাম্বার ঘাট এলাকার বাসিন্দা আক্কাস মৃধা। মাসের ১৫ দিন তিনি ফেরিতে ডিম বিক্রি করেন। বাকি ১৫দিন অন্য গ্রুপ বিক্রি করে। জানান আগে ২০০ থেকে বেশি ডিম বিক্রি করেন। জানান ঘাটে ৬ শতাধিক ডিম বিক্রিতা আছে। এখন ১০০ ডিম বিক্রি করা কষ্ট। বলেন, ফেরি ই এখন কম ছাড়ে। আগে এই ঘাটে অনেক চাপ ছিল। দূরপাল্লার লোকজন এই ঘাট দিয়েই যাতায়াত করতেন। ২৪ ঘণ্টা ডিম বিক্রি করতাম। বউ-বাচ্চা নিয়ে সংসার ভালো চলত। কিন্তু এখন বেচাবিক্রির যেই অবস্থা, এতে খুব কষ্টে দিন যায়। মাসে ১৫ দিন এই ঘাটে ডিম বিক্রি করি। বাকি ১৫ দিন মাঠে ঘাটে কাম করি।'

এই ঘাটে আপনাদের বেচাকেনা কখনো বাড়বে? উত্তরে বলেন, বাড়ার কোনোই সম্ভাবনা নাই। দিন দিন আরও কমবে। কারণ বেশির ভাগ গাড়িই পদ্মা সেতু দিতেই যাবে। এই যে কুয়াশা বেশি পড়তেছে। ফেরিও ছাড়ছে না। এরকম হলে বাসতো ঠিকই পদ্মাসেতু দিয়ে যাবি। কিন্তু আমাদের কি হবি। আমাগের (হকারগের) খুব কষ্টে দিন কাটতেছে। খালি হকার না। ফেরিঘাটের আশেপাশে যাদের দোকান ছিল। ফেরিতে যাদের দোকান ছিল সবাই কষ্টে আছে খুব।'

(ঢাকাটাইমস/২৩জানুয়ারি/এলএম/এআর)