মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আলোচিত ২৫ লাখ জাল টাকার মামলায় দুই আসামি খালাস

প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:০৯ | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:৩৫

আদালত প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ছয় বছর আগে ঢাকার মতিঝিলে দুই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২৫ লাখ জাল টাকা পাওয়ার মামলা মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। আজ তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার ১৫ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক তেহসিন ইফতেখার এ রায় ঘোষণা করেন।

খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- পল্টনের ‘হোটেল বন্ধু’র ম্যানেজার হাসান মজুমদার ও ওই হোটেলের বাবুর্চি সোহেল রানা।

ভুক্তভোগীরা জানান, তিন লাখ টাকা চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা করেন মতিঝিল থানার ডিবি পুলিশের তৎকালীন এসআই দেওয়ান উজ্জ্বল। এ ঘটনায় আরও জড়িত আছেন ডিবির মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী ও সহকারী কমিশনার জুয়েল রানা। পরে পুলিশ সদরদপ্তরের তদন্তে মামলাটি ভুয়া প্রমাণিত হয়।

পুলিশের দায়ের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাদী মতিঝিল জোনাল টিম ডিবি (পূর্ব) এর পুলিশ পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী সংগীয় ফোর্স নিয়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর মতিঝিল থানাধীন ফকিরাপুলস্থ পশ্চিম পাশের গলিতে বিকাল সাড়ে ৪টায় পৌঁছালে পালানোর চেষ্টাকালে হাসান মজুমদার ও সোহেল রানাকে আটক করেন। তাদের দেহ তল্লাশিকালে হাতে থাকা ব্যাগে ২৫ লাখ টাকার জাল টাকা পায়।

ওই ঘটনার মামলায় আসামিদের ২ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। মামলাটি তদন্তের পর মতিঝিল জোনাল টিম ডিবি (পূর্ব) এর পুলিশের এসআই দেওয়ান উজ্বল হোসেন ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলায় আসামিরা ৫ মাস জেলহাজতে থাকার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।

এদিকে খালাসের পর আসামি ‘হোটেল বন্ধু’র ম্যানেজার হাসান মজুমদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সকাল সোয়া ১১টায় পুরানা পল্টনের ‘হোটেল বন্ধু-এর তৃতীয় তলায় ডিবির মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী ও এসআই দেওয়ান উজ্জ্বল হোসেনের নেতৃত্বে সাদা পোশাকের একটি টিম প্রবেশ করেন। তারা হোটেলের কাউন্টারে বাবুর্চি সোহেল রানাকে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাতকড়া পরিয়ে দেন। আমি হোটেলের ম্যানেজার হওয়ায় বিষয়টি জানতে চাইলে আমাকেও হাতকড়া পরিয়ে দেন। এরপর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে সহকারী কমিশনার জুয়েল রানা ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় এসআই দেওয়ান উজ্জ্বল হোসেন আমাদের আরেকটি কক্ষে ডেকে নিয়ে বলেন, ৩ লাখ টাকা না দিলে আমাদের বিরুদ্ধে জাল টাকার মামলা দেওয়া হবে। ওই দিন রাতেই মতিঝিল থানায় পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী বাদী হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার দেখিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশ সদরদপ্তরে আইজিপির কাছে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়। পুলিশ সদরদপ্তরের সিকিউরিটি সেলের এএসপি ওমর ফারুক ঘটনাটি তদন্ত করে মিথ্যা মামলা দায়েরের সত্যতা পান। তদন্ত রিপোর্টে মতিঝিল জোনাল টিমের পুলিশ সদস্যদের দায়ী করা হয়। ৫ মাস ২৭ দিন পর ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল আমরা জামিন পাই। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর আমাদের আবার ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে আইজিপির কাছে করা অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাদের বলেন, অভিযোগ প্রত্যাহার করা না হলে আমাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে। প্রত্যাহার না করায় আমাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

হাসান মজুমদার বলেন, মামলায় দেখানো হয় ফকিরাপুলস্থ পশ্চিমপাশের গলি থেকে আমাদের জাল টাকাসহ আটক করা হয়েছে। তাই এ মামলায় আমরা আদালতে ভিডিও ফুটেজ দাখিল করেছি। আদালতে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক আমাদের খালাস দিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৪জানুয়ারি/ইএস)