মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতার সামনে কী বলেছিলেন কাদের সিদ্দিকী? অস্বস্তি টাঙ্গাইল জেলা আ.লীগে

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

অস্বস্তিতে পড়েছেন টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। কাদের সিদ্দিকীর এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় এক নেতার যোগ দেওয়াই অস্বস্তির কারণ।

তাছাড়া ওই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকীর বিশেষ অবদানের জন্য ভূয়সী প্রশংসা করেন। অন্যদিকে কাদের সিদ্দিকী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলার সংসদ সদস্যদের নিয়ে করেন নেতিবাচক মন্তব্য।

মঙ্গলবার জেলা শহীদ মিনার চত্বরে ওই অনুষ্ঠানটি ছিল মুক্তিযুদ্ধকালে কাদেরিয়া বাহিনীর বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেওয়ার ঘটনার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে। সেখানেই যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, কাদের সিদ্দিকীর অনুষ্ঠানে একজন মন্ত্রী ও একজন কেন্দ্রীয় নেতা এলেও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের এ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানতেন না।

মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার জন্য কাদের সিদ্দিকীর ভূয়সী প্রশংসা করেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকী ইতিহাসের গর্বিত সন্তান। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্বগাথা ইতিহাসে বিরল। যুদ্ধ শেষে বিজয়ী হয়ে তিনি এক লাখ চার হাজার অস্ত্র বঙ্গবন্ধুর কাছে জমা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে কাদেরিয়া বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে।’

অনুষ্ঠানে মৃণাল কান্তি দাস বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাকে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই তিনি টাঙ্গাইলে এসেছেন।

বক্তৃতায় কাদের সিদ্দিকীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক বলেন, বলেন, ‘আসুন, আমরা আপনাকে নিয়ে পথ চলতে চাই। ২০২৪ সালে যে নির্বাচন হবে, ওই নির্বাচনে এক বৃত্তে থাকবেন মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীরা। সার্থক পিতার সার্থক উত্তরসূরি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়ব।’

এদিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলার সংসদ সদস্যদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন কাদের সিদ্দিকী।

তার বক্তৃতায় কাদের সিদ্দিকী বলেন, অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খানকে আমন্ত্রণ জানালেও তিনি অনুষ্ঠানে আসতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এ জন্য আর শ্রদ্ধা করেন না।

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ফজলুর রহমান খানকে একুশে পদক দেওয়া সঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য করেন কাদের সিদ্দিকী। এছাড়া তিনি জেলার সংসদ সদস্যদের অযোগ্য বলেও উল্লেখ করেন।

একদিকে জেলার নেতাদের না জানিয়ে কাদের সিদ্দিকীর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতার যোগদান এবং কাদের সিদ্দিকীর প্রশংসা। অন্য দিকে কাদের সিদ্দিকী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করায় ক্ষোভ জানাচ্ছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

তারা বলছেন, মৃণাল কান্তি দাস তার বক্তব্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে কাদের সিদ্দিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বলেছেন। অথচ কেন্দ্র থেকে জেলার নেতাদের এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এটাই তাদের অস্বস্তির কারণ।

কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদানের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে একজন মন্ত্রী ও একজন কেন্দ্রীয় নেতা কীভাবে এলেন, সে সম্পর্কে তার কিছু জানা নেই বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি। জেলায় দলের শৃঙ্খলা যাতে বজায় থাকে, সে বিষয়ও কেন্দ্রীয় নেতারা লক্ষ রাখবেন বলেই তার প্রত্যাশা।

জেলার সংসদ সদস্যদের নিয়ে কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্য প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের এমপি হাসান ইমাম খান ওরফে সোহেল হাজারী বলেন, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ সদস্যদের মনোননয়ন দিয়েছেন। তাদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা মানে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করা।

(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/ডিএম)