‘ফারদিনের মৃত্যুতে কেউ দায়ী নয়’, বুশরাকে দায়মুক্তি দিয়ে ডিবির প্রতিবেদন যাচ্ছে আদালতে

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:২৭ | আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:৪৮

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেবে তদন্তকারী সংস্থা ডিবি পুলিশ। তবে প্রতিবেদনে ফারদিনের মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করা হচ্ছে না। বুশরাকেও আসামির তালিকা বা তার ওপর আনা অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে ইতোমধ্যেই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। 

প্রতিবেদনে ফারদিনের আত্মহত্যার বিষয়টি তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন সাপেক্ষে বর্ণনা করা হয়েছে। দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

এদিকে ধার্য্য দিন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘ফারদিনের মৃত্যু’ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়নি তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন আদালত। 

ফারদিনের পাকস্থলিতে বিষাক্ত কিছু মেলেনি 
--- ভিসেরা রিপোর্টের তথ্য

তবে আগামী ধার্য্য তারিখের আগেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে ঢাকা টাইমসকে বুধবার সন্ধ্যায় জানান তদন্ত দেখভালকারী, ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের মতিঝিল জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. রাজীব আল মাসুদ। 

তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এক সপ্তাহের আগেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। প্রতিবেদন প্রস্তুত হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ, নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার লক্ষ্যে শেষ মুহুর্তে সব তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে নেওয়া হচ্ছে। 

এদিকে ফারদিনকে বিষাক্ত কিছু খাওয়ানো বা বিষাক্ত কিছু পুশ করা হয়েছিল কিনা- সেই ‘ভিসেরা’ পরীক্ষার রিপোর্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ল্যাবরেটরি (পরীক্ষাগার) থেকে তদন্তকারী সংস্থা ডিবি পুলিশের হাতে এসেছে। তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে ওই ভিসেরা রিপোর্টও ডিবি পুলিশ আদালতে দাখিল করবে।  
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ‘বিষাক্ত কিছু খাওয়ানো, বিষ প্রয়োগ বা বিষক্রিয়ার কোনো আলামত বা এ ধরণের কারণ ফারদিনের মৃত্যুর জন্য দায়ী নয় বলে ভিসেরা প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। তার পাকস্থলিতে বিষাক্ত কিছু পাওয়া যায়নি। মাদক বা অ্যালকোহল ধরণেরও কিছু ছিল না পাকস্থলিতে।’

ফারদিনের ভিসেরা রিপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেন ডিসি রাজীব আল মাসুদ। তবে তদন্ত বিষয়ক আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় আদালতে ভিসেরা রিপোর্ট জমা দেওয়ার আগে রিপোর্টের তথ্য প্রকাশ না করার কথা জানান তিনি। 

ফারদিন আত্মহত্যা করেছে বলে তদন্তে প্রমাণ মিলেছে, তাই বুশরাকে আসামী করা হবে না বা তার নামে কোনো অভিযোগ থাকবে না তদন্ত প্রতিবেদনে 
--- ডিবি পুলিশ

ইতোমধ্যেই ফারদিনের ভিসেরা পরীক্ষার নিয়ে নতুন কোনো তথ্য আসেনি তদন্তকারী কিংবা ছায়া তদন্তকারী সংস্থার হাতে। তদন্তকারীদের উদঘাটন করা সর্বশেষ তথ্য বলছে, ‘আত্মহত্যা’ করেছেন ফারদিন। যদিও এখনও আত্মহত্যার হিসাব মেলাতে পারছে না ফারদিনের পরিবার।

ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের রামপুরা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (রামপুরা থানা) উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম রেজা ঢাকা টাইমসকে বলেন,  গত ১৫ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মজিবুর রহমান প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এদিন আদালতে হাজিরা দেন এ মামলায় জামিন পাওয়া আসামী আমাতুল্লাহ বুশরা। আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন দিন ধার্য করেন আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। 

এর আগে ৮ জানুয়ারি ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তার বান্ধবী বুশরার জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

প্রসঙ্গত, নিখোঁজের তিন দিন পর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে গত ৭ নভেম্বর ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। রাজধানীর রামপুরা থেকে নিখোঁজ হন ফারদিন। এরপর তার বাবা রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

ফারদিন নূর পরশ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবেরও যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন তিনি। তিন ভাইয়ের মধ্যে ফারদিন সবার বড়। তাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার কুতুবপুর ইউনিয়নের নয়ামাটি এলাকায়। তবে গত দুবছর ধরে তারা সপরিবারে রাজধানীর ডেমরা থানার শান্তিবাগ কোনাপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন। ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা একটি ইংরেজি পত্রিকায় দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছেন।

ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় ১০ নভেম্বর ভোর ৩টার দিকে বুশরার নাম উল্লেখসহ কয়েকজনকে আসামি করে তার বাবা মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই বুশরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পক্ষ থেকে প্রথমে জানানো হয়, মাদক কিনতে গিয়ে মাদক গ্যাংয়ের হাতে খুন হন ফারদিন। 

পরবর্তীতে বলা হয়, চনপাড়া বস্তিতে খুন হয়েছেন ফারদিন। একই দাবি করা হয় ছায়াতদন্তকারী সংস্থা র‌্যাবের পক্ষ থেকেও। গত ১৫ নভেম্বর র‌্যাব দাবি করে, ফারদিন হত্যায় জড়িত চনপাড়া বস্তির মাদক গ্যাং রায়হান গ্রুপ। এতে হত্যায় জড়িত থাকা ১০-১২ জনকে শনাক্ত করার কথাও বলা হয়।

গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়, মাদক কিনতে গিয়েই চনপাড়া বস্তিতে খুন হয়েছেন ফারদিন। খুন করার পর সাদা প্রাইভেটকারে মরদেহ বের করা হয় বস্তি থেকে। পরে ফেলে দেওয়া হয় শীতলক্ষ্যা নদীতে। একাধিক সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচারিত হয় এমন সংবাদ। আর এসব সংবাদের সোর্স হিসেবে উল্লেখ করা হয় গোপন সূত্র। পরে অবশ্য ডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, খুন করা হয়নি, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন। পরে র‌্যাবও একই কথা বলে।  

(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/এসএম)