মামলা না নিয়ে পাল্টা মামলার ভয় দেখালেন ওসি!

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:৪৭

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

বগুড়ায় অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলা না নিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীক মামলার ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে বগুড়া সদর থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী বগুড়া সদরের নাটাইপাড়া এলাকার সামিনুর ইসলাম পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক এবং রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বগুড়া জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি।

সুমন বগুড়া সদরের নাটাই দক্ষিণপাড়া এলাকার আব্দুল্লাহর ছেলে। তিনি নাটাই রিয়েল এস্টেট লি.-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এছাড়া তিনি বগুড়া বাউল গোষ্ঠীর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক।

পুলিশ সুপারের কাছে দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ১৪ তারিখে তার পূর্বপরিচিত এক নারী তাকে একাধিকবার ফোন দিয়ে সদরের উপশহর বাজারে যেতে বললে তিনি বিকাল ৪টায় সেখানে যান। এ সময় কয়েকজন ব্যক্তি তাকে ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি বটগাছের নিকট নিয়ে যায়। এরপর তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। পরে তার কাছে থাকা নগদ ১৭ হাজার টাকা এবং বিকাশে থাকা ১৩ হাজার টাকা বের করে নেয়। পরে ওই নারীর সাথে তাকে জড়িয়ে অশ্লীল ছবি এবং ভিডিও করে তারা। এরপর তারা সুমনের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার বোন পারভীন আক্তারের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত টাকা আনতে বলে। তার বোন টাকা আনতে দেরি করায় তাকে আবারও মারধর করা হয়। মারধরের ঘটনা দেখে বাজারে স্থানীয় লোকজন জড়ো হতে থাকলে তারা তাকে মোটরসাইকেল যোগে চারমাথা সিএনবির ভেতরে পুকুর পাড়ে নিয়ে বেঁধে রাখে। এর মধ্যে তার বোন ৯৯৯ এ ফোন করে বিষয়টি জানালে উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে। এ সময় ওই নারীসহ আরো একজনকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরে ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) সুজন মিয়া তার কাছে ঘটনা শুনে তাকে অপহরণ মামলা করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি আসামিদের ফাঁড়ি থেকে ছেড়ে দেন এবং মামলা নিতে অস্বীকৃত জানিয়ে সুমন এবং তার বোনের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়ে তাদের দ্রুত ফাঁড়ি থেকে চলে যেতে বলেন।

এরপর তিনি ওই দিন রাত ১২টায় থানায় মামলা করতে গিয়ে সদর থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকীকে বিষয়টি জানান। তিনি তাকে মামলা দেয়ার হুমকি দেন এবং উপশহর ফঁড়ির ইনচার্জ সুজন মিয়াকে ফোন দিয়ে তাকে ধর্ষণ মামলা দিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু দেয়া হয়নি কেন তাকে জিজ্ঞেস করেন। তখন ফাঁড়ির ইনচার্জ সুজন মিয়া ওসি নূরে আলম সিদ্দিকীকে জানান, ওই নারী ধর্ষণ মামলা দিতে রাজি না হওয়ায় সম্ভব হয়নি। পরে তাকে রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত থানা হাজতে আটকে রাখা হয় এবং থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী তাকে বলেন, তোকে কাল মাদক, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি মামলায় চালান করে দেব। এছাড়া ঘটনার সময় ৯৯৯-এ ফোন করায় ওসি তার বোনসহ আরো আত্মীয় স্বজনকে গালিগালাজ করে বের করে দেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী সামিনুর ইসলাম সুমন বলেন, তিনি এবং ওই নারী দুজনেই বগুড়ার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। সেই সুবাদে তাদের মধ্যে পরিচয় ঘটে। কাজের ক্ষেত্রে মতের অমিল হওয়ায় গত ৬ মাসে ওই নারী এবং তার পক্ষের লোকজন দিয়ে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছিল। যে কারণে সেসময় বগুড়ার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ‘ক’  অঞ্চল আদালতে মামলা করেন। মামলাটি এখনও চলমান আছে। ওই মামলার বিষয়ে মীমাংসার জন্য তাকে ডেকে অপহরণের পর হেনস্থা করা হয়। মুক্তিপণ চাওয়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

তিনি বলেন, এটি একটি চক্র- যারা এরকম করে অপহরণের পর অশ্লীল ছবি তোলার পর ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা আদায় করে। আমার কাছেও এমনটি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু যারা আমার সাথে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে আমাকেই হয়রানি করেছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে বগুড়া উপশহর ফাঁড়ির ইনচার্জ সুজন মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানার ওসি বলেন, একটি মৌখিক অভিযোগ সে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওই নারী আরো দুটো অভিযোগ দিয়েছে।  আমরা দুটো অভিযোগই তদন্ত করছি। সুমনের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা ছিল। সেই মামলায় চার্জশিট হয়েছে। তারা অভিযোগ করছে, সুমন ওই মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ বলেন, সুমনের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্তের জন্য সদর সার্কেলের কাছে দেয়া হয়েছে। তদন্তের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/এলএ)