‘জাপান-বন্ধু’ বিচারপতি ড. রাধাবিনোদ পালের জন্মদিন আজ
প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০১
জাপান বন্ধু খ্যাত বিচারপতি ড. রাধাবিনোদ পালের ১৩৭তম জন্মবার্ষিকী আজ। জাপানের ইতিহাসে বিচারপতি রাধাবিনোদ পালের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। ড. রাধাবিনোদ পালের কর্মবহুল ও বৈচিত্র্যময় জীবনের শুরু বাংলার এক অখ্যাত গাঁয়ে।
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের তারাগুনিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে জন্ম গ্রহণ করেন ড. রাধাবিনোদ পাল। তার পিতার নাম বিপিন বিহারি পাল। ওই এলাকা এখন জজপাড়া নামে পরিচিত।
ড. রাধাবিনোদ পাল আইন সম্পর্কিত বহু গ্রন্থের রচয়িতা। জাপানে তার নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। টোকিও শহরে তার নামে জাদুঘর, সড়ক ও স্ট্যাচু রয়েছে। জাপান বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি রিসার্চ সেন্টার রয়েছে।
রাধাবিনোদের প্রথম জীবন চরম দারিদ্রের মধ্যে অতিবাহিত করতে হয়েছে। শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি হয় কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের ছাতিয়ান গ্রামের গোলাম রহমান পণ্ডিতের হাতে। তিনি তৎকালীন নদিয়া জেলার (বর্তমান কুষ্টিয়া) তারাগুনিয়া এল.পি স্কুলে (বর্তমানে তারাগুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়) ও পরে কুষ্টিয়া হাই স্কুলে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। রাজশাহী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯২০ সালে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ও ১৯২৫ সালে আইনে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৯-২০ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে তার কর্মজীবনের শুরু। ১৯২৫-১৯৩০ মেয়াদে এবং পরবর্তীতে ১৯৩৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। পরে কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশায় যোগদান করেন। ১৯৪১-৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৪-৪৬ মেয়াদে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব রাধাবিনোদ পালের সুখ্যাতি শুধু পাকিস্তান-ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ১৯৪৬-৪৮ সাল পর্যন্ত জাপানের রাজধানী টোকিও মহানগরে জাপানকে নানচিং গণহত্যাসহ দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধে চীনাদের ওপর জাপানি সেনাবাহিনীর দীর্ঘ কয়েক দশকের নৃশংসতার অভিযোগে যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করে যে বিশেষ আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হয়, তিনি ছিলেন সেই আদালতের অন্যতম বিচারপতি। তিনি তার ৮০০ পৃষ্ঠার বিচক্ষণ রায় দিয়ে জাপানকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থেকে মুক্ত করেন। এ রায় বিশ্বনন্দিত ঐতিহাসিক রায়ের মর্যাদা লাভ করে। তার এ রায় জাপানকে সহিংসতার দীর্ঘ পরম্পরা ত্যাগ করে সভ্য ও উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশে প্রধানতম সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল।
তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দূরপ্রাচ্যে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারে স্থাপিত আন্তর্জাতিক সামরিক আদালতের বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ‘জাপান-বন্ধু ভারতীয়’ বলে খ্যাতি রয়েছে তার।
১৯৬৬ সালে নিহোন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাধাবিনোদ পালকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি দেওয়া হয়। জাপান সম্রাট হিরোহিতোর কাছ থেকে জাপানের সর্বোচ্চ সম্মানীয় পদক কোক্কা কুনশো গ্রহণ করেছিলেন তিনি। টোকিওতে তার নামে রাস্তা রয়েছে। কিয়োটো শহরে তার নামে রয়েছে জাদুঘর, রাস্তার নামকরণ ও স্ট্যাচু। তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদক ‘পদ্মবিভূষণ– এ ভূষিত হন। টোকিও ট্রায়াল টেলিসিরিয়ালটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের ট্রায়াল নিয়ে নির্মিত হলে তার চরিত্রে অভিনয় করেন ভারতীয় অভিনেতা ইরফান খান।
ড. রাধাবিনোদ পাল ১৯৬৭ সালের ১০ জানুয়ারি কলকাতায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বিনোদ পাল নয় কন্যা ও পাঁচ পুত্রের জনক। নয় কন্যা হলন- শান্তি রানী, আশা রানী, লীলা রানী, বেলা রানী, নীলিমা, রমা রানী, রেনুকনা, লক্ষ্মী রানী এবং স্মৃতি কণা। পাঁচ পুত্র হলন- প্রশান্ত কুমার, প্রদ্যুত কুমার, প্রণব কুমার, প্রতিপ বিজয় এবং প্রতুল কুমার। তাদের মদ্যে এক পুত্র প্রণব কুমার পাল আইনজীবী (ব্যারিস্টার) হয়েছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/এনএস/এফএ)