মানুষের টাকা মেরে ৭৮টি ফ্ল্যাট করার অভিযোগ এমপি বাহারের, যা বলছেন সাক্কু

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:৫৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তার ভাষ্য, সাক্কু সরলতার ভাব দেখান। কিন্তু দুর্নীতি ও অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি অনন্ত ৭৮টি ফ্ল্যাট করেছেন।

দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কৃত সাক্কু বলছেন, এমপি বাহারের কাছে প্রমাণ থাকলে তিনি যেন আইনের আশ্রয় নেন। বাহারের অভিযোগের জবাব দেওয়াকে অবান্তর মনে করেন বলেও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত ব্যবসায়ী সমিতির মতবিনিময় সভায় সাক্কুর বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ আনেন এমপি বাহার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে  তিনি বলেন, আমি যখন পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করি তখনও আমাকে অনেকে হতাশ করেছে। কিন্তু জনগণ আমাকে শক্তি দিয়েছে। তাদের শক্তিতে আমি পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন করেছি। আমার পরে আসলো কে? আকবর ভাই, সাক্কু ভাই। তারা কি করেছে? প্ল্যান পাস করিয়েছে, আর টাকা খেয়েছে। সাক্কু সহজ-সরল মানুষের মতো কথা বলে। অথচ সে মানুষের টাকা মেরে ৭৮ টা ফ্ল্যাট করেছে। আমি সবই জানছি পরে। রূপায়ণ টাওয়ার করতে ৭৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। প্ল্যানেট এসআর এর প্ল্যান পাস করতে ৭৫ লাখ টাকা নিয়েছে। এই সাক্কু তার নিজের পকেটে ঢুকিয়েছে টাকা।

সাক্কু নিয়ম-নীতি না মেনে কুমিল্লা শহরকে নষ্ট করেছে অভিযোগ করে বাহার আরও বলেন, কুমিল্লা সিটিকে ওভারলোড করে দিয়েছে সাক্কু। আজ যানজটের জন্য শহরে হাঁটা যায় না। ভবনের পর ভবনের প্ল্যান পাস হয়েছে নিয়ম না মেনেই। আমি রিফাতকে তিল তিল করে কুমিল্লার মানুষের জন্য গড়ে তুলেছি। রিফাতের ৬ মাস হয়েছে মেয়র হওয়ার। আপনারা ৬ টাকা ঘুষের কোনো প্রমাণ পেয়েছেন? পেলে আমাকে বলুন। আমি তখন আর এখানে (মঞ্চে) থাকব না। আমি চলে যাব ওখানে (জনগণের কাতারে)। তখন আর রিফাতকে চেয়ারে থাকতে দেব না।

এমপি বাহার আরও বলেন, কুমিল্লা এখন আগের কুমিল্লা নেই। আমাকে সবাই বলে সংস্কৃতিবান্ধব, অনেকে বলে শিক্ষকবান্ধব, আর এই অনুষ্ঠানে আসার পর বলছেন, আমি নাকি ব্যবসায়ীবান্ধব। আমি আসলে কোনো বান্ধবই নই। আমি কুমিল্লাবান্ধব, জণগণের বান্ধব।

‘আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, জাতীয় অর্থনীতিতে আমাদের প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছেন। আমরা মাছ উৎপাদনে এখন দেশজুড়ে ভালো অবস্থানে। যারা ১৯৭১ এর যুদ্ধের পর আমাদের তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিল তারা এখন হিংসা করে। আপনারা মুরগি খান কত করে? দেড়শ টাকা। আর পাকিস্তানে মুরগির কেজি ৬০০ টাকা। আমরা কি ভালো নেই?’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. সানাউল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত। সমন্বয়ক ছিলেন দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন। অনুষ্ঠানে দোকান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে এমপি বাহারের অভিযোগের বিষয়ে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, তিনি একটা দল করেন আমি আরেকটা দল করি। তাকে আমি এখনও বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করি। উন্নয়নের স্বার্থ আমরা একসঙ্গে চলেছি। তিনি যেসব কথা এখন বলেছেন, সেগুলো আগে বলেননি কেন? আমি দুর্নীতি করে থাকলে তিনি মামলা করেন না কেন? আমাদের একটা বংশ মর্যাদা আছে। আমরা মানুষের বিরুদ্ধে বলতে পছন্দ করি না।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় গণসমাবেশে আসা নেতা-কর্মীদের থাকার জন্য সাক্কুর ৭৮টি ফ্ল্যাট প্রস্তুত করার বিষয় আলোচনায় আসে। সেসময় সাক্কু গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ৭৮টি ফ্ল্যাট ব্যবস্থা করেছি। ইতোমধ্যে ২৫ হাজার নেতাকর্মীর খাবারের ব্যবস্থা করেছি। যত নেতাকর্মী আসবে সবার ব্যবস্থা করা হবে। এই নিয়ে কোনো টেনশন নাই আমার।

উল্লেখ্য, দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় মনিরুল হক সাক্কুকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

(ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/ইএস)