ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচন: আবদুস সাত্তারের পক্ষে ভোটারদের কাছে আ.লীগের ওকালতি

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:৫১ | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:২৯

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। বিএনপির সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়। তবে এই আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী চারজন প্রার্থীর মধ্যে উকিল আবদুস সাত্তারও রয়েছেন। অন্য তিনজন হলেন আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি (সদ্য বহিষ্কৃত) ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানী ও জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম।

 

নির্বাচনে মোট ১৩জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। বাছাইয়ে পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। অবশিষ্ট আটজনের মধ্যে  মহাজোট থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা এবং আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র তিন প্রার্থী মঈন উদ্দিন মঈন, মাহবুবুল বারী চৌধুরী ও শাহজাহান আলম সাজু ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ায়। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে থাকা চার প্রার্থীর মধ্যে নানা বিবেচনায় উকিল সাত্তার শক্তিশালী প্রার্থী হয়ে উঠেছেন। তার নির্বাচনী প্রচারনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সরাসরি মাঠে কাজ করছেন।

 

প্রতিদ্বন্ধিতায় থাকা সরকার দলীয় প্রভাবশালী প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে ভোটের আমেজে ভাটা পড়েছে। এমনকি আলোচিত প্রার্থী সাংসদ এবং বিএনপি থেকে পদত্যাগী ও পরবর্তীতে বহিষ্কৃত উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়াও মাঠে নেই। দুই-চার দিন গণসংযোগের পর ঢাকায় ফিরে গেছেন প্রায় ৮৪ বছর বয়স্ক এই প্রবীন নেতা। অবশ্য তার ছেলে বাবার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন নির্বাচনী এলাকায়। তবে উকিল আবদুস সাত্তারের প্রচারে আছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জাতীয় পার্টির একাংশ।

 

প্রতিদ্বন্ধিতার মাঠে থাকা চার প্রার্থীর মধ্যে নানা বিবেচনায় উকিল সাত্তার শক্তিশালী প্রার্থী হয়ে উঠেন। তার নির্বাচনী প্রচারনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সরাসরি মাঠে কাজ করছেন। পাশাপাশি স্থানীয় বিএনপি সাংসদ ও দলত্যাগী নেতার বিপক্ষে পত্রিকায় বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ্যে অবস্থান নিলেও বাস্তবে দলটির অধিকাংশই নেতাকর্মীরা সাত্তারের পক্ষেই নির্বাচন করছেন। বিএনপির কমিটি নিয়ে বিরোধের কারণে দলের একটি অংশ নির্বাচনের শুরু থেকেই তার হয়ে কাজ করছে। উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সরাইল সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার জানান, প্রথমে দলের পদ বঞ্চিতরা মাঠে নামলেও এখন বিএনপির প্রায় সবাই উকিল সাত্তারের নির্বাচন করছেন। তবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিসুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, ‘আমার এমন খবর জানা নেই।’

 

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হন দলটির বর্ষীয়ান নেতা আব্দুস সাত্তার ভূইয়া। তবে গত ডিসেম্বরে দলীয় সিদ্ধান্তে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর দলের চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা থেকেও পদত্যাগ করেন সাত্তার। পরবর্তীতে তিনি তার ছেড়ে দেওয়া আসনের উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতার জন্য মনোনয়ন ফরম কিনলে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ থেকে তাকে বহিস্কার করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

 

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, যেহেতু এ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল সাত্তার ভুইয়া একজন সৎ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ এবং ৫ বারের এমপি হওয়ায় সকল নেতাকর্মীরা তাকে স্বাধীনভাবে সমর্থন করছে। সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন। বিএনপি ভোট বানচাল করলে তা প্রতিহত করা হবে। তিনি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে ভোটারদের আহ্বান জানান।

 

বিএনপি ত্যাগী নেতা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূইয়ার দল ত্যাগ প্রসঙ্গে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাব্বি বলেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সাত্তার সাহেবকে তার দল মূল্যায়ন করেনি। তাই তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি ভালো মানুষ। আমরা তার পাশে আছি। আমরা আশা করি জনগণের ভোটে সাত্তার সাহেবই বিজয়ী হবেন।

 

যদিও ঘরে-বাইরে সব হারানো সাত্তারকে টেনে তুলতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। সমর্থন থেকে শুরু করে কর্মীসভা এমনকি তার পক্ষে মানুষের কাছে ভোটও চাইছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।

 

এদিকে গত মঙ্গলবার বিকালে উকিল আব্দুস সাত্তার ভুইয়ার সমর্থনে আব্দুস সাত্তার সমর্থক গোষ্ঠীর ব্যানারে কর্মীসভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. নাজমুল হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। তিনি বলেন, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে আবারও নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন উকিল সাত্তার ভুইয়া। তার একটি মাত্র কারণ তারেক জিয়া সাত্তার উকিলের সঙ্গে যে বেয়াদবি করেছে সরাইল-আশুগঞ্জবাসী তার জবাব দেবে।  সভায় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সব ভোটার ও জণগণের কাছে দোয়া ও ভোট চেয়েছেন উকিল আবদুস সাত্তার ভুইয়া।

 

গত সোমবার আশুগঞ্জেও এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। সেই সভায়ও উকিল আবদুস সাত্তার ভুইয়ার জন্য ভোট চাওয়া হয়।

 

অন্যদিকে দল থেকে বহিষ্কারের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপনির্বাচনের এলাকায় আবদুস সাত্তারকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি। কিন্তু ঘোষণা দেওয়ার পর বিএনপির নেতাকর্মীরাই এখন কোণঠাসা। এই আসনের নির্বাচনী এলাকায় কোথাও বিএনপির নেতাকর্মীদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

(ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/এমএম/কেএম)