বায়ুদূষণে স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সঙ্গে আয়ুও কমছে, উত্তরণে করণীয়

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:৫৬

ড. আবদুস সালাম

বায়ুদূষণে রাজধানী ঢাকা বিশ্বসেরার আসন নিয়েছে। আমরা যদি কন্ট্রোল করতে পারি তাহলে কাজ করে কিছুটা বায়ুদূষণ কমিয়ে নিয়ে আসতে পারি। তবে এমন উদ্যোগ নেই। ফলে বায়ুদূষণ কমছে না। বরং বাড়ছে।

আবার উল্টো দেখছি, আগে যেখানে ১০ বাড়িতে কন্সট্রাকশন কাজ হতো, এখন সেখানে ৫০ বাড়িতে হচ্ছে। আগে ১টি গাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া বের হলে তা এখন ৪০ গাড়ি থেকে বের হচ্ছে। যেখানে সেখানে মাটি কেটে ফেলে রাখা হচ্ছে।

এই বিষয়গুলোতে আমাদের কোনো উন্নতি নেই। ফলে আমাদের বায়ুদূষণ কমে আসবে তেমন কোনো লক্ষণ নেই। এতে করে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। বায়ুদূষণও বেড়েই যাচ্ছে।

এই বছর শুধু ঢাকা শহরে বায়ুদূষণ বেড়েছে তাই নয়, ২০১৮ সাল থেকে প্রতি বছরই বাংলাদেশ প্রথম হচ্ছে। শুধু ঢাকা শহর বায়ুদূষণে প্রথম হচ্ছে তাও নয়, পুরো বাংলাদেশই পলিউটেড বায়ুর মধ্যে রয়েছে।

বায়ুদূষণের ফলে আমরা বড় ধরনের স্বাস্থ্যজনিত ঝুঁকির মধ্যে আছি। কত মানুষের হার্ট অ্যাটাক আছে, কত মানুষের ডাইবেটিক আছে, হসপিটালে গেলে বেড খালি নেই, তথ্য অবাক করবে।

বাংলাদেশে বর্তমানে দুটি ব্যবসা বাড়ছে—হাসপাতাল ও খাবারের দোকান। যেখানে-সেখানে খাবারের দোকান ও হাসপাতাল বসে গেছে রাস্তার ধারে। উদাহরণত, গ্রিনরোডের এক মাথা থেকে অন্য মাথা পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে কত কত হাসপাতাল। আর সেগুলো আরও বাড়ছে। কারণ, ব্যবসা ভালো।

বায়ুদূষণের কারণে স্বাস্থ্য সমস্যায় যেমন পড়ছি সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীনও হচ্ছি। এগুলো কেউ হিসাব করে না। ঢাকা শহরে ও বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে একজন মানুষের যত বছর বেঁচে থাকার কথা তার থেকে ৫-৭ বছর আগে মারা যাচ্ছে।

এই সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারলে অর্থনৈতিকভাবেও আমরা আরও সমৃদ্ধ থাকতে পারতাম। এসব কারণে আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া জলবায়ুর বিরাট হুমকির মুখে আছি আমরা।

আমাদের যে টেম্পারেচার বেজ আছে, দূষণের সঙ্গে জলবায়ু টেম্পারেচার বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক আছে। টেম্পারেচার কম থাকলে গরম দুই থেকে তিন ডিগ্রি কম হয়। ফলে দেশে এয়ার কন্ডিশনের ব্যবহারও অনেকটা কম থাকত।

একদিকে বায়ু দূষণ বাড়ছে, অন্যদিকে গরম কমছে না। এয়ার কন্ডিশন ব্যবহার বাড়ছে। আবার তা থেকে দূষণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবমিলিয়ে দূষণের একটা চক্রাকার বৃত্তে পড়ে গেছি আমরা।

উত্তরণে সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের যেমন করণীয় আছে, তেমনি সরকারেরও দায় আছে। প্রথমত, যেকোনো দেশেই সরকার নাগরিককে রক্ষার দায়িত্বে থাকে। সুতরাং দূষণ রোধে ষংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর বড় দায়িত্ব আছে।

একজন নাগরিক হিসেবে আমার আপনার দায়িত্বও আছে। আমার দ্বারা কোনো দূষণ যেন তৈরি না হয়। যদিও হয় সেটা ব্যক্তিগতভাবে মিনিমাইজ করা। আর যেসব জায়গায় দূষণ বেশি কিংবা যখন দূষণ বেশি মনে হচ্ছে, তখন আমরাদের সেটা এড়িয়ে চলা উচিত।

ড. আবদুস সালাম, অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়