পুলিশ বক্স উচ্ছেদ নিয়ে ডিএনসিসি-পুলিশ মুখোমুখি, এখন কী হবে...

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:২৩ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৫৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ঘটনার শুরু একটি পুলিশ বক্সের উচ্ছেদ নিয়ে। রাজধানীর আসাদ গেট এলাকায় ডাম্প ট্রাক ও পে-লোডার নিয়ে ওই পুলিশ বক্সটি উচ্ছেদ করতে যায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ। তবে বাদ সাধে পুলিশ। এ নিয়ে উভয়পক্ষের বাদানুবাদের পর আর সেটি উচ্ছেদ হয়নি।

পুলিশ বলছে, সড়ক থেকে বক্স উচ্ছেদ করতে হলে ডিএমপি কমিশনারের অনুমতি লাগবে। আর ডিএনসিসি বলছে, ওই ঘটনা ভুল বোঝাবুঝি থেকে হয়েছে। তাহলে এখন কি সেখানে পুলিশ বক্স থাকবে না কি উচ্ছেদ হবে? দুপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা টাইমস।

ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, মঙ্গলবারের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল। বরং সিটি কর্পোরেশন থেকে পুলিশের জন্য পুলিশ বক্স করে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। আর পুলিশ বলছে, হুট করে এসে বক্স ভাঙ্গার সুযোগ নেই। এরপর কেউ আসলে ডিএমপি কমিশনারের কাছ থেকে অনুমতি আনতে হবে।

কর্পোরেশন বলছে, অনুমতি ছাড়াই সেখানে পুলিশ বক্স গড়ে তোলা হয়েছে। ভাষা শহীদ আসাদ সরণির স্মৃতিস্তম্ভ বরাবর সড়কে প্রবেশ করতে (বিজয় ল্যান্ড) ওপরে ৬-৭ ফুট পাশে ৮-৯ ফুট লম্বা একটা কংক্রিটের ভবন; যেখানে একতলার একটা রুম করা হচ্ছে।

এসময় পুলিশ সদস্যরা তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তারা ভোররাতে চুরি করতে আসছে, তারা কি এখানে উচ্ছেদ করতে আসছে? উচ্ছেদ করতে আসার আগে কেন পুলিশকে জানায়নি। তারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এগুলো করছেন। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে। এর আগের দিনও (সোমবার) পুলিশ বক্সটি উচ্ছেদ করতে সেখানে যান ডিএনসিসি কর্মকর্তারা।

এখন ট্রাফিক বক্স ভেঙে ফেলার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে চাইলে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি। এখানে আমার সিদ্ধান্ত দেওয়ার কিছু নেই; প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মেয়র স্যার যেটা বলেন সেটাই পরবর্তীতে করণীয়। এবিষয়ে সিইও স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।’

পুলিশ বক্স উচ্ছেদের কোনো পরিকল্পনা নেই উল্লেখ করে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পুলিশ বক্স তো থাকতেই হবে। তা না থাকলে তারা (ট্রাফিক পুলিশ) কীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ এবং আমরা মিলে মিলেই কাজ করি। ওই দিনের ঘটনাকে আমি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলব।’

সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ট্রাফিক পুলিশের জন্য বক্স তৈরি করে দেওয়ার জন্য কাজ চলছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘উত্তর সিটির পক্ষ থেকে পুলিশ বক্স করে দেওয়ার জন্য ডিজাইন চূড়ান্ত হয়েছে। এখন পুলিশ বিভাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তারা (পুলিশ) ডিজাইন পছন্দ করলে আর মেয়র আতিকুল ইসলাম দেশে ফিরলে কাজ ফাইনাল হবে। আমরা পুলিশ বক্স করে দেওয়ার জন্য একটা প্রজেক্ট নিয়েছি। এর আলোকে বেশকিছু পুলিশ বক্স করে দিতে পারব।’

বক্স উচ্ছেদে দুদিন সিটি কর্পোরেশন সেখানে গেল এবং তা নিয়ে বাদানুবাদ সৃষ্টি হলো। কর্পোরেশনের মধ্যে সমন্বহীনতা এর জন্য দায়ী কি না প্রশ্নে সেলিম রেজা বলেন, ‘ব্যাপার তো এমন না। এটা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। পুলিশ এবং সিটি কর্পোরেশন একে অপরের পরিপূরক।’

‘আমরা ব্যাপকভাবে পুলিশি সহায়তা পেয়ে থাকি। পুলিশবিহীন তো কোনো কাজই করা যাবে না। পাশাপাশি আমরা নিজেরাও পুলিশ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে অনেক কাজ করি। যেমন- স্মার্ট পার্কিং, রাস্তার সিগন্যাল বাতি, নগর পরিবহনের শৃঙ্খলা, উচ্ছেদ, মোবাইল কোর্ট উল্লেখযোগ্য।’

ডিএমপির তেজঁগাও বিভাগের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) শাহেদ আল মাসুদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়ে দিয়েছি কমিশনার স্যারের (খন্দকার গোলাম ফারুক) সঙ্গে কথা বলে পুলিশ বক্স উচ্ছেদ করতে হবে।’

‘হুট করে এসে বক্স ভাঙ্গার সুযোগ নেই। আগের একটি ঘটনায় অনেক পুলিশ সদস্য ক্ষুব্ধ ছিল। মেয়র মহোদয়ের উপস্থিতিতে যে পুলিশ বক্স ভাঙা হয়েছিল সেখানে এখন পিঠার দোকান।’

আসাদ গেটের পুলিশ বক্সটি সংস্কার করা হয়েছে জানিয়ে শাহেদ আল মাসুদ বলেন, ‘সেখানে নতুন করে কোনো স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছিল না, আগের পুলিশ বক্সটি মেরামত করা হচ্ছিল। ডিএনসিসির কর্মকর্তারা পুলিশকে না জানিয়েই সেখানে উচ্ছেদ অভিযানে আসেন।’

‘তাছাড়া কোনো স্থাপনা ভাঙতে হলে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিসহ কিছু প্রক্রিয়া আছে। হুট করে কেউ এসে একটা ঘর ভেঙে দিয়ে গেল, এভাবে হয় না। তারা অভিযোগ করছেন, তাদেরকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আসলে এমন কোনো ঘটনা সে সময় ঘটেনি।’

(ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/এসএস/ডিএম)