কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ওটস খেলে
প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৩ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৮

স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই সকালের নাশতা না করে কাজে বেরিয়ে পড়েন। এর কারণে শরীরে হাজার রোগ বাসা বাঁধতে পারে। শুধু তা-ই নয়, ওজনও বেড়ে যেতে পারে অনেকটা। এ ক্ষেত্রেও ওটসের মাধ্যমেই হতে পারে মুশকিল আসান। কেবল ওজন ঝরাতেই নয়, হৃদ্যন্ত্র ভাল রাখতেও ওটস উপকারী। দিন দিন হার্টের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঘরে ঘরে উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেলরের রোগীও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ওটস খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এ ক্ষেত্রে পুষ্টিবিদরা ডায়েটে পানিতে ভেজানো ওটস খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
ওটস একটি দানা জাতীয় শস্য । ওটসের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাভিনা সাটিভা। ধান/গম পরিবারের অন্তর্ভুক্ত শস্য, মূলত শীতপ্রধান এলাকায় জন্মায়। ওটস খুব উপকারি। খাদ্য হিসাবে যেমন রয়েছে অনেক গুণাগুণ তেমনি প্রসাধন সামগ্রীতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
প্রাচীনকালে নিজেদের খাবারের জন্য এবং গৃহপালিত পশুদের খাবারের চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ প্রায় ৪০০০ বছর ধরে ওটস চাষ করে আসছে । ওটস আমাদের দেশে উৎপাদিত হয় না। এর কোনো বাংলা নাম নাই। ওটস নামেই সবাই জানে। ওটস একটি খাদ্যশস্য, জমিতে উৎপন্ন হয়। তারপর মিল বা কলে প্রসেস করা হয়। বিভিন্ন দেশে ওটস বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে পাওয়া যায়। বাজারজাতকৃত যেসব ধরন আমরা দেখি সেগুলো স্টিল কাট ওটস, রোলড ওটস, ইনস্ট্যান্ট ওটস ইত্যাদি।
ওটসের অনেক ভাগ আছে। এই শস্য তুলে তা ছাঁটাই করা হয়। আর এই কাটের উপরেই নির্ভর করে ওটসের টেক্সচার ও স্বাদ। তাই কাটের উপরে ভিত্তি করে এর নামও দেওয়া হয়েছে। খেত থেকে তোলার পরে এ শস্য অনেকটা পাকা ধানের মতো দেখতে হয়। হালকা সোনালি রঙের। আর এত গুণ থাকায় একে গোল্ডেন গ্রেন বা সোনালি শস্যও বলা হয়ে থাকে।
এই শস্য তুলে খোসা ছাড়িয়ে বিভিন্ন কাট দেওয়া হয়। গোটা ওটস অনেক সময় লাগে রাঁধতে। তাই স্টিল কাট বা রোলড ওটসের চাহিদাই বেশি। সাধারণত মেটাল ব্লেড দিয়ে এক-একটা শস্য দানা দু’তিন ভাগে কেটে নেওয়া হয়। একে বলে স্টিল কাট ওটস। এই ওটস সিদ্ধ হতে কুড়ি মিনিট মতো সময় লাগে। তবে এতে টেক্সচার বজায় থাকে।
ডায়াটিশিয়ানের মতে, ‘১০০ গ্রাম ওটসে ৩৮৯ ক্যালরি, ১৬.৯ গ্রাম প্রোটিন, ৬৬.৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১০.৬ গ্রাম ফাইবার, ৬.৯ গ্রাম ফ্যাট পাওয়া যায়। এ ছাড়াও জ়িঙ্ক, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, কপারের মতো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসে ভরপুর এই শস্য। ফলে এর গুণ অনেক।’
একে তো প্রচুর ফাইবার থাকে। তাই কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে ওটস কাজে দেবে। তা ছাড়া পেট ভরায়, ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ওটস গ্লুটেনফ্লি। শারীরিক সমস্যার জন্য যাদের গ্লুটেন খাওয়ায় বিধিনিষেধ আছে, তারা ওটস খেতে পারেন স্বচ্ছন্দে।
রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে ওটস। আর টাইপ-টু ডায়াবেটিসের রিস্কও কমাতে সাহায্য করে। এর হাই ফাইবার আর কমপ্লেক্স কার্বস গ্লাইকোজেনেসিস পদ্ধতি মন্থর করে। এতে বিটা-গ্লুকেন থাকে, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ওট্স ফাইবারে ভরপুর। কোলেস্টেরল রোগীদের জন্য ডায়েটে ফাইবার রাখা জরুরি। রোজের ডায়েটে ওটস রাখলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে ও ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
এটি লিপিড প্রোফাইল নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে কোলেস্টেরল লেভেল ঠিক রাখতেও ওটস খুব কার্যকর। হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তারাও নিয়মিত ওটস খেতে পারেন।
ওটসের বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট স্তন ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারী প্রতিদিন এক বাটি ওটস খান, তাঁদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ৪১ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়। পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ওটস। এসব অঙ্গ সুস্থ থাকলে কোলন ক্যানসার হওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না।
ওটসে যেহেতু ফাইবার বেশি, কার্বস ও ফ্যাটের পরিমাণ কম, তাই ওজন কমাতেও ওটস সিদ্ধহস্ত। তাই ওবেসিটির রোগীরা ডায়েটে রাখতেই পারেন ওটস। তবে তা খেতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে।
যেভাবে ওটস খেলে উপকার পাবেন
অনেকেই ওটস হজম করতে পারেন না। সারারাত ভিজিয়ে রেখে দিলে ওটসের মধ্যে উপস্থিত স্টার্চ জাতীয় পদার্থ ভেঙে যায় এবং প্রাকৃতিক ফাইটিক অ্যাসিডের মাত্রা কমে। ফলে শরীরে ওটসের পুষ্টিগুণ বেশি পরিমাণে শোষিত হয়। রান্না করা ওটসের তুলনায় ভিজিয়ে রেখে ওটস খেলে তা হজম করতে সুবিধা হয়।
শর্করাযুক্ত সব খাবারেই ‘রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ’ পাওয়া যায়। কিন্তু রান্না করা খাবারের পরিবর্তে ঠান্ডা স্টার্চযুক্ত খাবারে এটি ভরপুর মাত্রায় থাকে। ‘রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ’ হলো এক প্রকার প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট, যা হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে, ওজনও কমায়। তাই রাতে ওটস ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খেলে ওজন ঝরবে দ্রুত।
সকালে উঠে তাড়াহুড়ায় রান্না করার সময় থাকে না সব সময়। তাই বলে তো আর সকালে না খেয়ে থাকা যায় না! আলাদা করে নাস্তা বানাতে ইচ্ছা না করলে রাতে ভিজিয়ে রাখুন ওটস। সেটি দিয়েই বানিয়ে ফেলতে পারেন সুস্বাদু পদ। আপেল, কলা, আম কিংবা বিভিন্ন ধরনের বাদাম দিয়েই বানিয়ে ফেলুন এই নাস্তা।
স্বাদ বাড়াতে ওটস-এর সঙ্গে মধুও ব্যবহার করতে পারেন। সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন ওটস স্মুদিও। এভাবে নিয়ম মেনে প্রতিদিন ওটস খেলে দ্রুত ওজন ঝরতে বাধ্য। পূরণ হবে রোগা হওয়ার ইচ্ছাও।
বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ইনস্ট্যান্ট বা কুইক ওটস। স্টিল কাট বা রোলড ওটস খাওয়াই সবচেয়ে ভাল। আর ওটস কী ভাবে খাবেন, তার উপরেও এর পুষ্টিগুণ নির্ভর করে। পরিজ বা খিচুড়ির মতো রেঁধে খেলেই এর পুষ্টি পুরোটা বজায় থাকে। টক দইয়ের মধ্যে ফলের কুচি ও ওটস দিয়েও খাওয়া যায়।
শুধু খাদ্যগুণই নয়। ত্বক ভাল রাখতেও ওটস প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। তাই খাওয়ার মাঝেই সপ্তাহে এক দিন দুধ, মধু ও ওটস দিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে মেখে নিতে পারেন। এতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস থাকায় তা ত্বকে বলিরেখা পড়া রোধ করে। যৌবন ধরে রাখে ত্বকের। শরীর ও ত্বক, এই দুইয়েরই বন্ধু হয়ে উঠতে পারে ওটস।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কারণে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন খাদ্যশস্য ওটস। মন খারাপ থাকলে ওটস খেতে পারেন। এতে রয়েছে বিশেষ প্রাকৃতিক উপাদান যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।