বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে ‘অবৈধ’ বিদেশিরা

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:২৩ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৫৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশে চাকরিরত বিদেশি নাগরিকদের সিংহভাগ সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছেন না। এদের অনেকেই ওয়ার্কপারমিট ছাড়াই কাজ করছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আর এ দেশ থেকে উপার্জিত অর্থ কোনো ধরনের বৈধ চ্যানেল ছাড়াই নিজ দেশে সরিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 
  
এছাড়া এ দেশে কর্মরত অনেক বিদেশি নাগরিকই নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন জাল-জালিয়াতিতেও ইতোমধ্যেই বেশকিছু বিদেশি নাগরিকের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

এদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের- টিআইবির এক গবেষণা বলছে, এদেশের ২১টি খাতে ৪৪টি দেশের ২ লাখ ৫০ হাজার বিদেশি নাগরিক কাজ করছে। তার মধ্যে মাত্র ৯ হাজার ৫শ কর দিচ্ছে। বাকি ২ লাখ ৪১ হাজার বিদেশিই অবৈধ। তারা এদেশ থেকে বছরে ২৬ হাজার ৪শ কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। ফলে ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে বৈধ বিদেশিদের সংখ্যা ৮৫ হাজার ৪৮৬। তার মধ্যে ব্যবসায়ী ৬৭ হাজার ৮৫৩, বিশেষজ্ঞ ৮ হাজার ৩শ, কর্মকর্তা ৩ হাজার ৬৮২, কারিগরি পেশাজীবী ৭২৭, খেলোয়াড় বা ক্রীড়া সংগঠক ২ হাজার ১০৫, বিনিয়োগকারী ৯২২, ব্যক্তিগত কর্মচারী ৮০৪, এনজিও কর্মী ৫৬১, প্রশিক্ষক বা গবেষক ৪শ এবং গৃহকর্মী ১৩২ জন। আর ব্যবসায়ী বাদে ১৭ হাজার ৬৩৩ জন। আর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে মোট বিদেশি নাগরিক ৩৩ হাজার ৫০৪। তার মধ্যে ৯ হাজার ৬৬১ জন ব্যবসায়ী বাদে ২৩ হাজার ৭৮৮ জন। আর দেশগুলো হলো ভারত, শ্রীলংকা এবং মালয়েশিয়া।
সূত্র মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রয়েছে ভারতের নাগরিক। তাছাড়া চীন, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, নরওয়ে এবং নাইজেরিয়ার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নাগরিক এদেশে রয়েছে। বিদেশি নাগরিকদের ন্যূনতম মাসিক বেতন ১ হাজার ৫শ মার্কিন ডলার। আর সব মিলিয়ে বিদেশি কর্মীদের মোট বার্ষিক আয় ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

আর এদেশে যেসব খাতে বিদেশি শ্রমিকরা কাজ করছে সেগুলো হলো- তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, বায়িং হাউজ, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, মোবাইল ফোন কোম্পানি, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া শিল্প, চিকিৎসাসেবা, কার্গো সেবা, আন্তর্জাতিক এনজিও, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, তেল ও গ্যাস কোম্পানি, অডিট ফার্ম, হোটেল ও রেস্তোরাঁ, প্রকৌশল, ফ্যাশন ডিজাইন, খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন, পোলট্রি খাদ্য উৎপাদন এবং আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এদিকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সম্প্রতি ৩টি দেশের ৩৩ জন নাগরিক ও দুটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য তলব করেছে। তার আগে ব্যাংকের এটিএম বুথে জালিয়াতি এবং জালনোট ছাপানোর কারণে নাইজেরিয়াসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশের বেশ কয়েকজন নাগরিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিদেশি কর্মী দরকার আছে। তবে তার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা জরুরি। আর ওই নীতিমালার ভিত্তিতেই বিদেশি নাগরিক নিয়োগ দিতে হবে। যেসব বিদেশি কর্মী এদেশে কাজ করছে তার সিংহভাগই অবৈধ। তারা পর্যটক হিসাবে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে কাজ করে। তারপর যে অর্থ আয় করে তা অবৈধভাবে নিজ দেশে নিয়ে যায়। ওই অপরাধের জন্য শুধু বিদেশি কর্মী দায়ী নয়, বরং দেশে যারা তাদের নিয়োগ দেয় তাদেরও দায় রয়েছে। কারণ তারা সরকারের নিয়মনীতি মেনে নিয়োগ দেয় না। 

পাশাপাশি রাজস্ব বোর্ড, বিভিন্ন সংস্থা এবং ইমিগ্রেশন অফিসারদেরও দায় রয়েছে। দেশে এ সংক্রান্ত নীতিমালার অভাব রয়েছে। আর যেসব নীতিমালা রয়েছে তারও বাস্তবায়ন নেই। এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন নয়। সেজন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করতে হবে এবং সেগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/আরআর/আরকেএইচ)