সুন্দরগঞ্জের আব্দুল জোব্বার ‘রাজাকার’, এ বিষয়ে দালিলিক প্রমাণ চাইলেন ইউএনও

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:২০ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:৫১

গাইবান্ধা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অঞ্চলভিত্তিক ইতিহাস এবং পরবর্তীতে জাতীয় ইতিহাসের পাতায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে যে কজন পাকিস্তানি হানাদারদের পক্ষে শান্তি কমিটি গঠন করে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ভূমিকায় ছিলেন আব্দুল জোব্বার। সে কারণে গাইবান্ধায় আব্দুল জোব্বারের নামে ডিগ্রি কলেজটির নাম ইতোমধ্যে পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন অনেকে। তবে রাজাকারের তালিকায় আব্দুল জোব্বারের নাম উল্লেখ না থাকায় অধ্যক্ষ সামিউল ইসলামের কাছে এই অভিযোগের দালিলিক প্রমাণ চেয়েছেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মারুফ। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।   

তাছাড়া আব্দুল জোব্বারের দ্বিতীয় সন্তান শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলামকে কেন ওই কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য করা হয়নি; ইউএনও তারও কৈফিয়ত তলব করেন।  

এতে স্বাধীনতাবিরোধী শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান রাজাকার আব্দুল জোব্বারের নামে ডিগ্রি কলেজটির নাম পরিবর্তন নাও হতে পারে বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়সহ কলেজের অধ্যক্ষ সামিউল ইসলাম।

সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুরের ধর্মপুর এলাকায় ৩৬ বছর আগে নির্মিত হয় ধর্মপুর আব্দুল জোব্বার ডিগ্রি কলেজটি। যেটি স্থানীয় এক রাজাকারের নামে বছরের পর বছর ধরে রয়েছে। এমন সংবাদ জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ঢাকা টাইমসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজাকার আব্দুল জোব্বার মারা গেলেও শ্রীপুর ইউনিয়নে এখনও জোব্বারের পরিবারের দাপট কমেনি। তারা বলেন, একাত্তরে ‘রাজত্ব’ করেছেন রাজাকার আব্দুল জোব্বার পরে তার বড় ছেলে রাজাকার রুহুল আমিন মঞ্জু। যিনি বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। আর বর্তমানে ‘রাজত্ব’ করে যাচ্ছেন তার আরেক সন্তান শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম। 

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম বলেন, 'আব্দুল জোব্বার ও তার ছেলে মঞ্জু যে রাজাকার ছিলেন এটি সর্বজন স্বীকৃত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এমন কলঙ্কময় দুইজন রাজাকারের পক্ষে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পক্ষ নিয়েছেন; এটি সত্যিই দুঃখজনক।'

এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'অতিসত্বর ধর্মপুরের এই ডিগ্রি কলেজটির তথাকথিত রাজাকার আব্দুল জোব্বারের নামে নামকরণটি পরিবর্তন করা এখন সময়ের দাবি।'

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রাজু মিয়া বলেন, 'আমি অবাক হয়েছি; আমি বিস্মিত হয়েছি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কীভাবে প্রিন্সিপালকে এমন কথা বলতে পারলেন! আমি শংকিত ধর্মপুর আব্দুল জোব্বার ডিগ্রি কলেজটি রাজাকারের নামে নামকরণ আদৌ পরিবর্তন হবে কি না?

এ বিষয়ে শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, 'আমার বাবা আব্দুল জোব্বার জামায়াতে ইসলামী পার্টি করতেন। তিনি যুদ্ধাপরাধী কিংবা রাজাকার ছিলেন না। তিনি রাজাকার ছিলেন; এমন প্রমাণ আমি ইউএনও সাহেবের কাছে চেয়েছিলাম- তিনি দালিলিক কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।'

কলেজের অধ্যক্ষ ছামিউল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'আব্দুল জোব্বার একজন চিহ্নিত রাজাকার এবং পিচ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এটি সর্বজন স্বীকৃত। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে রাজাকারের লিস্ট বের করে বলেন, এই দেখেন রাজাকারের তালিকা। এখানে জোব্বার ও তার ছেলের নাম কোথায়? তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, আব্দুল জোব্বার কোথায় রাজাকার আমাকে দেখান?'

ছামিউল বলেন, 'জোব্বারের ছেলে রুহুল আমিন মঞ্জু ফাঁসির আসামি, তিনি (আব্দুল জোব্বার) মারা গেছেন, এ জন্য তার নামে মামলা হয়নি। এমন কথা বললে ইউএনও বলেন, ছেলের অপরাধে বাবা অপরাধী হয় না। একজন সরল লোককে আপনারা রাজাকার বানাবেন এটা হয় নাকি!

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মারুফ ঢাকাটাইমসকে মুঠোফোনে বলেন, 'আপনি যে পিচ কমিটির চেয়ারম্যান বলছেন- এরকম একটা ডকুমেন্টস আমার দরকার। কিছুদিন আগে আমরা একটা রেজুলেশন করেছিলাম যে ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা রাজাকার। তার নাম কলেজ থেকে বাদ দেওয়া হোক। এমন রেজুলেশন উত্থাপন করায় আমি বিপদে আছি। একজন আমাকে চার্জ করেছেন আপনি যে ওনাকে রাজাকার বললেন, কি ডকুমেন্টের ভিত্তিতে বললেন? আমি কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে পারিনি।'

আপনি প্রিন্সিপাল সাহেবকে কলেজের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব এবং আজহারুল ইসলামকে কেন গভর্নিং বডিতে নেওয়া হয়নি এ বিষয়ে তলব করেছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাকে যখন একটি অথরিটি থেকে জিজ্ঞেস করা হলো তিনি রাজাকার তার প্রমাণ কী? তখন আমি উপজেলা রাজাকারের যে তালিকা আছে সেখানে খুঁজলাম, তাতে তার নাম না পেয়ে আমি একটু প্রশ্নবিদ্ধ হলাম। কোন অথরিটি আপনার কাছে জানতে চাইলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধরে নেন চেয়ারম্যান জানতে চেয়েছে!'

এ নিয়ে জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'আমরা যখন কোনো ইন্টারভিউ দেই তারপরে কিন্তু বসে থাকি না। আমরা এই কলেজের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে লিখেছিলাম এবং এই কলেজটির রাজাকারের নাম পরিবর্তনের কাজ অলরেডি শুরু হয়েছে।'

ইউএনও সাহেব কলেজের অধ্যক্ষের কাছে আব্দুল জোব্বার রাজাকার কি না এর দালিলিক প্রমাণ চেয়েছেন। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা ইউএনও বলতে পারেন না। এটা বলার তার এখতিয়ার নেই। ইউএনও এটা করতে পারেন না।'
 

(ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/এআর)