আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন চাপিয়ে দিচ্ছে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:৫৮ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৫:৫৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন চাপিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কৌশল হলো বিরোধী দলকে তারা কর্মসূচি করতে দেবে না। আর তারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন যন্ত্রকে ব্যবহার করে তাদেরটা করতেই থাকবে।’

১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ও যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে রবিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি ও ১২ দলীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুখে বলে একটা, কাজ করে আরেকটা। আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে। এদেশের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সেটা তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।’

১২ দলীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বৈঠকে বর্তমান দেশের রাজনীতির যে প্রেক্ষিত সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। এই আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য ভবিষ্যতে কি কর্মসূচি হওয়া উচিত আর কি ধরনের কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে এবং কীভাবে জনগণকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করা যেতে পারে সেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি।’

‘আমরা অনির্বাচিত সরকার পতনের লক্ষ্যে যে যুগপৎ আন্দোলন করছি। সামনের দিকে আরো জনগণকে বেশি সম্পৃক্ত করে আন্দোলনকে বেগবান করে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আমাদের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী মামলার আসামি তা প্রত্যাহার ও অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবিতে একমত হয়েছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছিল, তখন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে বাংলাদেশে একটি চিরস্থায়ীভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হলো। দেশে একটি অস্থিতিশীল অনিশ্চয়তা এবং সহিংসতার দ্বার উন্মুক্ত করা হলো। এর প্রমাণ ২০১৪ ও ’১৮ সালের নির্বাচন।’

‘এদেশে মানুষ জানে না কীভাবে নির্বাচন হয়। তারা জানে না তাদের ভোট দিতে পারবে কি পারবে না। আওয়ামী লীগ অতীতে যে কাজগুলো করেছে, তাতে দেশে জনগণ নিশ্চিত এদের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু হয় না।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের সমাবেশের আগে তিন দিন আগে থেকেই স্ট্রাইক করে। পুলিশকে নামিয়ে দিয়ে রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে মোবাইল ফোন পর্যন্ত তারা চেক করতে থাকে।’

‘বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের আগে পুলিশ দিয়ে ১৫ দিন আগে থেকেই বিশেষ অভিযান চালিয়েছে। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের কৌশল। বিরোধীদলকে তারা কর্মসূচি করতে দেবে না, বাধা দেবে। ভিন্ন মত সহ্য করবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ তাদের কথা বলতেই থাকবে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই জবরদখলকারী ফ্যাসিবাদী, অনির্বাচিত সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা যে ১০ দফা দাবি দিয়েছি সেই দাবি আদায় করার জন্য আমরা যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছি।’

‘বিএনপির এই যুগপৎ আন্দোলনে মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে আজকে আমরা ১২ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বসেছি। এরপর যে সকল দল এবং জোট রয়েছে তাদের সঙ্গেও বসবো।’

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘এই অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সরকারবিরোধী শক্তি আজ মনে মনে সংকল্পবদ্ধ। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে এই স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটানো হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতাদের মধ্যে লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আব্দুল আউয়াল মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে ১২ দলীয় জোটের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনডিপির চেয়ারম্যান ক্বারী মো. আবু তাহের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাগপার সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগের যুগ্ম মহাসচিব মো. তফাজ্জল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/জেবি/ডিএম)