বিদ্যুতে ভর্তুকির চাপ

প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:১৪ | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:০৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির চাপ সামলে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে অর্থ বিভাগ। গেল বছরের এপ্রিল মাসের ভর্তুকি পরিশোধ হয়েছে চলতি জানুয়ারি মাসে। চলতি বছর এ খাতের ভর্তুকি বাবদ ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও এতে বছর পার হয় না। ২০২১ সালের জুন মাস থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত ভর্তুকি লেগেছে ২০ হাজার কোটি টাকা। গত ১১ বছরে শুধু বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিদ্যুৎ বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী ভর্তুকির অর্থ ছাড় করা সম্ভব হচ্ছে না সরকারের অর্থ বিভাগের পক্ষে। চলতি বছরের বাজেট থেকে পূর্ববর্তী অর্থ বছরের ভর্তুকির টাকা দিতে হচ্ছে। ৯ মাস আগের ভর্তুকি পরিশোধ করা হচ্ছে চলতি অর্থ বছরের বরাদ্দ থেকে। 

সূত্র মতে, সর্বশেষ গত বছরের (২০২১-২২ অর্থ বছর) এপ্রিল মাসের ভর্তুকির টাকা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেওয়া হয়েছে। এই অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। যা একসঙ্গে দেওয়া হয়নি। তিন কিস্তিতে সেই টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রথম কিস্তিতে দেওয়া হয় দুই হাজার কোটি টাকা। দ্বিতীয় কিস্তিতে এক হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ কিস্তিতে দেওয়া হয়েছে ৯৩৬ কোটি টাকা। 

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে আরও তিন হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ভর্তুকির পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু তারপরও এই সীমায় ভর্তুকি বেঁধে রাখা সম্ভব হয়নি। অর্থ বছরের ১০ মাসেই (জুলাই ২০২১-এপিল ২০২২) বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বাকি দুই মাসে ভর্তুকির জন্য আরও ৭ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হতে পারে বলে সূত্র জানায়।

জানা গেছে, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ থেকে গত অর্থ বছরের কয়েক মাসের ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। প্রতি তিন মাস অন্তর বিউবোকে ভর্তুকির অর্থ ছাড় করে অর্থ বিভাগ। গত ১১ বছরে শুধু বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা। এর বেশির ভাগই বেসরকারি খাতে তৈরি হওয়া ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের বিউবোর পক্ষ থেকে ভর্তুকি খাতে ৩২ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত চাওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ভর্তুকির চাপ সামলাতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম শতকরা ৫ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন খুচরা পর্যায়েও দাম বাড়বে। কারণ বিপণন কোম্পানিগুলো বাড়তি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করবে তা হয় না। গত ১১ বছরে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে ১১৬ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ পর্যায়ে গ্রাহক পর্যায়ে বেড়েছে ৯০ শতাংশ। বর্তমানে পাইকারি বিদ্যুতের দাম কিলোওয়াট ঘণ্টা ৫ টাকা ১৭ পয়সা। সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে আরও ৩ টাকা ৩৯ পয়সা। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশ নতুন সংকটে পড়েছে।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে ফার্নেস অয়েলের দাম এখনো অনেক বেশি। আর এই ফার্নেস ওয়েলই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। অতিরিক্ত দামে ফার্নেস অয়েল কেনা হলেও সরকার কম দামে তা বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছে বিক্রি করছে। অন্যদিকে, বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকিও সমন্বয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকি ক্রমে বাড়ছে। ২০১০ সাল থেকে ভর্তুকির কারণে বিদ্যুৎ খাত লোকসানের দিকে চলতে থাকে। একই সঙ্গে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রেখে তাদের পেছনেও ভর্তুকির জন্য একটি বিশাল ব্যয় করতে হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র ১৫২টি। জানুয়ারি মাসে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু সরবরাহ করা যাচ্ছে ৯ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট। 

(ঢাকাটাইমস/৩০জানুয়ারি/আরআর/আরকেএইচ)