জরায়ুমুখ ক্যানসার কী? জানুন লক্ষণ ও চিকিৎসাসহ বিস্তারিত

প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:১০

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

২০১৮ সালের International Agency for Research on Cancer (IARC)-এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১২ হাজারের বেশি নারী জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং প্রায় সাড়ে ছয় হাজার নারী এই রোগে মারা যান। প্রতি বছর এত মৃত্যু হওয়া সত্ত্বেও জরায়ুমুখ ক্যানসার নিয়ে অনেকেরই খুব একটা ধারণা নেই।

সার্ভিক্স হলো জরায়ুর নিচের দিকের অংশ, যা নারী দেহের যোনি এবং জরায়ুকে সংযুক্ত করে। যখন এই জায়গার কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হতে শুরু করে তখন ব্যাপারটি ক্যানসারে রূপ নেয়। অনেক সময় ক্যানসার সার্ভিক্স থেকে শুরু হয়ে পরবর্তীতে ফুসফুস, যকৃত, মূত্রথলি, যোনি, পায়ুপথেও ছড়িয়ে যেতে থাকে।

জরায়ুমুখ ক্যান্সার হয় এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে, যার নাম ‘হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস’। এটি ছড়ায় ওই ভাইরাস আছে এমন কারও সঙ্গে যৌনমিলনের মাধ্যমে। যৌনমিলনের সময় পুরুষের কাছ থেকে নারীদেহে এই ভাইরাস ঢুকে যায়। ভাইরাসটি ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যানসার হয় না, বেশ কয়েক বছরও লাগতে পারে। যখন নারীর শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তখনই এই ভাইরাসটি ক্যানসারের সৃষ্টি করে।

জরায়ুমুখের ক্যানসারের মূল অসুবিধাটি হলো এটি শেষ পর্যায়ে গেলেই শুধুমাত্র ব্যথা দেখা দেয়। এর আগপর্যন্ত এর লক্ষণগুলোকে অনেকেই মাসিকের মেয়েলি সমস্যা বলে মনে করেন। ক্যানসার যখন একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে যায়, তখন রোগটা অনেক দূর ছড়িয়ে যায়।

প্রাথমিকভাবে কোনো ব্যথা থাকে না দেখেই নারীরা চিকিৎসকের কাছে যান না। এমনকি যখন হয়, হওয়ার পরেও তারা অপেক্ষা করেন। দেখা যায় দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব যাচ্ছে কিন্তু লজ্জায় কাউকে বলছেন না। স্বামীর সঙ্গে মেলামেশায় রক্ত যাচ্ছে সেটিও তিনি বলছেন না। ফলে যখন হাসপাতালে যান তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।

অথচ এতদূর পর্যন্ত এটি গড়ানোরই কথা নয়। কারণ অন্য ধরনের ক্যানসারের তুলনায় জরায়ুমুখের ক্যানসার সবচাইতে সহজে নির্ণয় করা যায়। এমনকি হওয়ার আগেই খুব সহজ একটি পরীক্ষায় ধরা যায় ক্যানসার হওয়ার আগের অবস্থা আছে কি না। এই পরীক্ষাকে বলে ভায়া টেস্ট। যৌন সম্পর্কে আছেন, এমন নারীরা ভায়া টেস্ট করিয়ে নিলেই জানতে পারবেন, তার জরায়ুমুখ ক্যানসার হওয়ার আগের অবস্থায় আছে কি না।

এছাড়া নিয়মিত ভায়া টেস্ট করালে ক্যানসার হওয়ার আগেই তা নির্ণয় করা সম্ভব। এমনকি যদি কারও জরায়ুমুখ ক্যানসার হয়, প্রাথমিক অবস্থায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা করলে তা ভালো হয়ে যায়।

জরায়ুমুখের ক্যানসার নির্ণয়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ধাপ, অর্থাৎ ভায়া টেস্ট করানোটা অত্যন্ত সহজ। কোনো ব্যথা লাগে না। সময়ও লাগে মাত্র এক মিনিট। যেসব নারীর বয়স ৩০ থেকে ৬০-এর মধ্যে, তাদের প্রতি পাঁচ বছর পরপর ভায়া টেস্ট করানো দরকার। ৩৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী নারীরা সবচেয়ে বেশি সার্ভিক্যাল ক্যানসারে আক্রান্ত হন।

যারা ঝুঁকিতে আছেন

১৬ বছর বয়স হওয়ার আগেই যৌনসঙ্গমের অভিজ্ঞতা থাকলে কিংবা পিরিয়ড শুরুর এক বছরের মধ্যেই যৌনসঙ্গম শুরু করে থাকলে। স্বামী বা যৌনসঙ্গীর শরীরে ভাইরাসটি থাকলে। অনেকজন যৌনসঙ্গী থাকলে। জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘদিন, বিশেষত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বড়ি সেবন করলে। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি থাকলে।

এছাড়া যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে ছড়ায় এমন কোনো রোগ থেকে থাকলে। যেমন–এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, ইত্যাদি।

যেসব লক্ষণ দেখা দেয়

যৌনসংগমের সময় ব্যথার অনুভূতি। অস্বাভাবিকভাবে যোনিদেশ থেকে রক্তপাত হলে। যেমন–যৌনসঙ্গমের পরবর্তী সময়ে, দুটি পিরিয়ডের মধ্যবর্তী সময়ে, পিরিয়ড বা রজঃশ্রাব বন্ধ হওয়ার পরে, শ্রোণিদেশের কোনো পরীক্ষার পরে। যোনিদেশ থেকে অস্বাভাবিকভাবে কোনো পদার্থ বের হতে থাকলে।

ক্যানসার ছড়িয়ে যেতে থাকলে যে সমস্ত লক্ষণ দেখা যায়

শ্রোণিদেশে ব্যথা, প্রস্রাবে সমস্যা, পা ফুলে যেতে থাকা, কিডনি ফেইলিউর, হাড়ে ব্যথা হওয়া, ওজন কমতে থাকা এবং ক্ষুধামন্দা, দুর্বলতা অনুভব করা।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

রজঃনিবৃতির পরেও রক্তপাত হওয়া কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এমনটি ঘটলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হলে কিংবা দুটি পিরিয়ডের মাঝে প্রায়ই রক্তপাত হলে চিকিৎসককে জানান।

বাংলাদেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি জেলা সদর হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, এমনকি নির্বাচিত কিছু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে, এনজিও ক্লিনিকগুলোতে জরায়ুমুখ ক্যানসারের পূর্বাবস্থা বোঝার ভায়া টেস্ট বিনামূল্যে করা হয়।

তাই অবহেলা বা সংকোচ না করে নিজের ও আপনার পরিবারের প্রতি পাঁচ বছর পরপর নিয়মিত জরায়ুমুখ ক্যানাসারের প্রাথমিক পরীক্ষা অর্থাৎ ভায়া টেস্ট করুন। এছাড়া এটি একমাত্র ক্যানসার যার টিকা আছে। মাসিক শুরুর পরপরই এবং যৌন সম্পর্ক শুরু কিংবা বিয়ের আগে টিকা নিলে এই রোগ থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।

(ঢাকাটাইমস/৩০জানুয়ারি/এজে)