করোনার কারণে ঝুঁকিতে ক্রনিক কিডনি রোগীরা, আক্রান্তদের ১২ শতাংশের ডিপ্রেশন

প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:০৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের শরীরে রোগটির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের প্রমাণ পেয়েছেন বাংলাদেশের চিকিৎসক ও গবেষকদের একটি দল। গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীদের মধ্যে ১২ শতাংশ মানসিক অবসাদে ভুগছেন। করোনা হলে ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। করোনায় যাদের ডায়াবেটিস ছিল না তাদের অনেকের ডায়াবেটিস হয়েছে। অনেকের আবার মায়োপ্যাথি (হাড়ের সঙ্গে যুক্ত পেশির রোগ) হয়েছে।

সোমবার দুপুরে বিএসএমএমইউর শহীদ ডা. মিলন হলে 'মাল্টিটিউড অব ইস্যুজ ইন কোভিড: রেনাল, কার্ডিয়াক এন্ড মেটাবোলিক ইনফ্লুয়েন্স' ও 'লং টার্ম হেলথ কনসিকোয়েন্সেস অ্যাজ এ পোস্ট কোভিড-১৯ সিকোয়াল ইন হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার্স' শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিএসএমএমইউর অর্থায়নে ২০২২ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ৮০৪ জন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। সিম্পোজিয়াম আয়োজন করে কিডনি ডিজিজ রিসার্চ গ্রুপ।

 

গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার টিকার কার্যকারিতা কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের অনেক কম। করোনার টিকা ডায়ালাইসিস রোগীদের কার্যকারিতা শতকরা ৮৭ ভাগ। অন্যদিকে করোনার টিকা নেফ্রাইটিস রোগের পুনরাগম ঘটাতে পারে।

 

অনুষ্ঠানে এ গবেষণার প্রধান গবেষক ও প্রধান অতিথি বিএসএমএমইউর উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনায় আক্রান্তদের ১২ শতাংশ ডিপ্রেশনে ভুগছেন। তাদের এ অবস্থা থেকে চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। করোনায় বাংলাদেশে পেশাজীবীদের মাঝে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশী মৃত্যুবরণ করেছেন।

তিনি জানান, কোভিড আক্রান্ত চিকিৎসকদের শতকরা ৪০ ভাগ চিকিৎসক এবং  শতকরা ৩৪ ভাগ নার্সেরা লং কোভিডে ভুগছেন। করোনায় যাদের ডায়াবেটিস ছিল না তাদের ডায়াবেটিস হয়েছে। এছাড়া, করোনায় অনেকের মাসল শুকিয়ে যাওয়ার রোগ মায়োপ্যাথিও হয়েছে।

গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতে চিকিৎসক গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএসএমএমইউর সকল চিকিৎসকদের গবেষণার কাজ করতে হবে। একবার গবেষণার কাজ করলেই হবে না। ধারাবাহিকভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।

সিম্পোজিয়ামে আরও জানানো হয়, ডায়াবেটিস, ওজনাধিক্য, উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘ মেয়াদী অসংক্রামক রোগ, অন্যদিকে কোভিড নিউমোনিয়া, একটি সংক্রামক রোগ। কোভিড হলে এই দুই ধরণের রোগের কিছু জটিলতা দেখা যায় এবং একটি রোগের দ¦ারা অন্যটি প্রভাবিত হয়। তাই কোভিড নিউমোনিয়া হলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অপরদিকে যাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের কোভিড জটিলতাও বেশী হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সব কোভিড আক্রান্ত রোগীর মাঝে শতকরা ১০ ভাগের ডায়াবেটিস আছে এবং এদের শতকরা ১৫ ভাগের চিকিৎসাধীন থাকার প্রয়োজন হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিআইসি’র মতে যাদের ওজনাধিক্য, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা কোভিডের টিকা গ্রহণ করবে। তবে অবশ্যই টিকা গ্রহণের সময় রক্তের গ্লোকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকতে হবে। তবেই টিকা প্রদানের পর একজন ব্যক্তি কোভিড থেকে সুরক্ষা পাবে।

গবেষকরা জানান, কোভিড পরবর্তী কিছু জটিলতা নিয়েও কিছু রোগী পেয়েছেন। তাকে পোস্ট কোভিড অথবা লং কোভিড সিনড্রম বলা হয়। দুর্বলতা, গায়ে ব্যথা, মাথা ধরা ঘুম কম হওয়া ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে কোভিড টিকা গ্রহণের মাধ্যমে কোভিড জটিলতা প্রতিরোধ অনেকাংশে কমানো সম্ভব বলে জানান চিকিৎসকরা।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী বলেন, কোভিড শেষ হয়ে যায়নি। বিশ্বের অনেক দেশেই কোভিড রয়েছে। কোভিডের সংক্রমণের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।

সিম্পোজিয়ামে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু সালেহ আহমেদ, বার্ডেমের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া আফসানা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কানসালট্যান্ট ডা. মীর ইসারাকুজ্জামান একটি করে গবেষণা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে গবেষণা ফল প্রকাশ করেন অধ্যাপক ডা. মাসুদ ইকবাল।

সিম্পোজিয়ামে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু সালেহ আহমেদ, বার্ডেমের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া আফসানা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কানসালট্যান্ট ডা. মীর ইসারাকুজ্জামান একটি করে গবেষণা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে গবেষণা ফল প্রকাশ করেন অধ্যাপক ডা. মাসুদ ইকবাল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিএসএমএমইউর হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. দিপল কৃষ্ণ অধিকারী।

সিম্পোজিয়ামে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউর নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের  অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী ও বার্ডেমের অধ্যাপক ডা. ফারুক পাঠান, অধ্যাপক ডা. এম আইয়ুব আলী চৌধুরী।

(ঢাকাটাইমস/৩০ জানুয়ারি/এএ/ইএস/কেএম)