যে নিয়মে ফল খেলে শরীরের উপকারে লাগবে

প্রকাশ | ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:১৫

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

চারিদিকে নতুন করে আবার করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী। চিকিৎসকেরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ফল খাওয়া জরুরি। বলছেন, এই সময় নানা ধরনের ফল খাওয়ার খুব প্রয়োজন। তাতে যে কোনও ধরনের শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের শরীর অনেক বেশি প্রস্তুত থাকতে পারবে।

পুষ্টিবিদ এবং চিকিৎসকদের মতে, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তত একটি করে ফল রাখা প্রয়োজন। ভিটামিন, মিনারেলস, কার্বোহাইড্রেটে সমৃদ্ধ ফল ওজন কমানো থেকে শুরু করে ত্বকের যত্ন— সবেতেই সিদ্ধহস্ত। ফলের উপকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের জায়গা নেই। কিন্তু সব কিছুরই তো খারাপ এবং ভাল দিক রয়েছে। ফল খেলে এমনিতে কোনও অপকারিতা নেই।

শরীরে পুষ্টি উপাদান পাওয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক উপায় হচ্ছে ফল। দিনের ঠিক কোন সময়ে ফল খাওয়া উচিত তা অনেকেই জানেন না।  বিশেষজ্ঞদের মতে, খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফল খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এতে শর্করার সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট আর ব্যাকটেরিয়া মিশে শরীরের হজমশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফল এমনিতে একটি পরিপূর্ণ খাবার। প্রধান খাবারের সঙ্গে এটা মেলানো ঠিক নয়। যদি ফলের সঙ্গে উচ্চমানের প্রোটিন খাওয়া হয় তাহলে ফলে থাকা শর্করা আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে ।তখন এটা হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তারা আরও বলেন, মুল খাবার ও ফল খাওয়ার মধ্যে অন্তত আধঘণ্টা ব্যবধান রাখা উচিত।

তবে কখন ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। সকাল না দুপুর? ভাতের আগে না পরে? ঘুরতে-ফিরতে ফল খেয়ে ফেলার অভ্যাস যাদের, তারা কি জানেন সময় মেনে ফল না খেলে তা আদতে কোনও কাজে লাগে না? ‘খালি পেটে পানি আর ভরা পেটে ফল’ এই বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে আছেন বেশির ভাগ মানুষ। কিন্তু হালের গবেষণা বলছে, মানে যতই ভাল হোক না কেন, ফলের পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে গেলে এবং ফল খেতে হবে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে। তবেই ফলে থাকা ভিটামিন, প্রোটিন এবং খনিজগুলো শরীরের উপকারে আসবে।

ফল খাওয়ার আদর্শ সময় হল সকাল। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে খালি পেটেই ফল খেলে অনেকেরই সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে মুখ ধুয়ে, জল খেয়ে, তার কিছু ক্ষণ পর ফল খেতেই পারেন। ঘুম থেকে ওঠার পর ফল খেলে তা হজম হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি। ফলে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং এনজাইমগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।

সকালের নাশতা এবং দুপুরের মধ্যাহ্নভোজের মাঝে খিদে পায়? এই সময় ফল খাওয়া উপকারী। কারণ সকালের খাবার খেয়ে পেট ভার হলে, ফল সেই খাবার হজম করিয়ে দিতে পারে খুব সহজেই। প্লেটভর্তি ফল সঙ্গে বাদাম এবং বিভিন্ন রকমের দানাশস্য সকালের নাস্তা হিসেবেও ভাল।

শারীরিক কসরত করতে যে পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন তা পেতে গেলে উচ্চ ক্যালরির খাবার খেতে হবে। কিন্তু জিম করার আগে বা পরে তেমন খাবার খেতে নিষেধ করেন প্রশিক্ষকরা। এই সময়েও খাওয়া যেতে পারে ফল।

একসঙ্গে ৪ থেকে ৬টি ফল মিশিয়ে খেতে হবে। রাতের খাবারে প্রচুর প্রোটিন থাকলে পরদিন সকালে পেঁপে খেতে হবে। কারণ এতে থাকে ‘পাপাইন’ যা প্রোটিন ভাঙতে সহায়ক। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া হলে পরদিন সকালে পানিসমৃদ্ধ ফল যেমন- তরমুজ খেতে হবে। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া পড়লে পরদিন সকালে খেতে হবে আপেল। কারণ এই ফল জটিল বা ‘কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেইট’ ভাঙতে শরীরকে সাহায্য করে। ফলে শরীরে ফোলাভাব দেখা দেয় না।

 

যে সময়ে ফল খাওয়া শরীরের জন্য খারাপ

ঘুমোতে যাওয়ার আগে ফল খাওয়ার অভ্যাস কিন্তু রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। শুধু তাই নয় পর্যাপ্ত ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে ফল।

সময় নেই, তাই মূল খাবারের সঙ্গেই ফল খেতে শুরু করেছেন? এই অভ্যাসে হজমশক্তি নষ্ট হয়। ফলের পুষ্টি শরীরে সঠিক ভাবে পৌঁছে দিতে খাবার একঘণ্টা আগে বা একঘণ্টা পরে ফল খান।

দুপুরের ভাতঘুম ফল খাওয়ার কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। বিকেলে তাই চা খেতে খেতেই কেটে রাখা ফলগুলি খেয়ে ফেললেন। এই অভ্যাস যে শুধু খারাপ তাই নয়। বিষক্রিয়ার কারণও।

 

যেসব ফল একসঙ্গে খেলে ক্ষতিকর

কমলালেবু এবং গাজর: এই দুটি ফলই শরীরের জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। তবে গাজর এবং কমলালেবু একসঙ্গে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। এতে গ্যাস, কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আঙুর এবং খেজুর: আঙুর এমনিতে শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে বেশি খেলে অম্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই সমস্যা আরও বড় আকারে দেখা দিতে পারে যদি আঙুরের সঙ্গে খেজুর খান। আঙুর এবং খেজুর একসঙ্গে খাওয়া ঠিক নয়।

পেয়ারা এবং কলা: পেয়ারাতে অ্যাসিড জাতীয় উপাদান থাকে। অন্য দিকে কলাতে শকর্রার ভাগ বেশি। শর্করা আর অ্যাসিড যদি একসঙ্গে জোট বাঁধে, সে ক্ষেত্রে গ্যাস, অম্বল, বদহজম, মাথা ঘোরা, এমনকি, ক্লান্তির মতো শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।

পেঁপে এবং লেবু: অনেকেই পেঁপের উপর লেবুর রস ছড়িয়ে খান। এতে স্বাদ অনেক গুণ বেড়ে গেলেও এই দু’টি ফল একসঙ্গে খাওয়া ঠিক নয়। পেঁপে এবং লেবু একসঙ্গে খেলে রক্তাল্পতা এবং হিমোগ্লোবিনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। সুস্থ থাকতে এই দু’টি ফল একসঙ্গে না খাওয়াই ভাল।

টকের সঙ্গে মিষ্টি নয়: টকজাতীয় ফল যেমন আঙুর, স্ট্রবেরি, আপেল, বেদানা ইত্যাদির সঙ্গে মিষ্টি ফল যেমন কলা বা কিশমিশ মেশানো যাবে না। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই মিশ্রণের কারণে বমিভাব, মাথাব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।

তরমুজ এবং অন্যান্য ফল: তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে তরমুজ। তরমুজের সঙ্গে অন্য কোনও ফল খেলে হজমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

শ্বেতসারজাতীয় ফলের সঙ্গে প্রোটিন-সমৃদ্ধ ফল নয়:  ‘স্টার্চ’ বা শ্বেতসারজাতীয় ফলের মধ্যে কাঁচাকলাই সবচাইতে সহজলভ্য, তবে এই স্বাদের সবজি আছে কয়েকটি যেমন- ভুট্টা, আলু, পানিফল ইত্যাদি। এদের সঙ্গে প্রোটিনসমৃদ্ধ ফল ও সবজি যেমন- কিশমিশ, পেয়ারা, পালংশাক, ব্রকলি ইত্যাদি কখনও মেশানো উচিত নয়। কারণ প্রোটিন হজম করতে শরীরে চাই ‘অ্যাসিডিক বেইস’ আর শ্বেতসারজাতীয় খাবার হজম করতে চাই ‘অ্যালকালাইন বেইস’।

ঢাকাটাইমস/৩১ জানুয়ারি/আরজেড)