প্রতিদিন ডিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৩৯ | প্রকাশিত : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:০০

মানুষের হার্ট বা হৃদয় একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত নিরন্তর কাজ করে এই অঙ্গটি। রক্ত পাম্প করার কাজটি করে হার্ট। এই অঙ্গের দৌলতেই সারা শরীরে পৌঁছে যায় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত। তবেই কোষ বেঁচে থাকে। এহেন জরুরি একটি অঙ্গের প্রতি আমাদের উদাসীন মনোভাব যে বিপদ বাড়ায়, তা তো বলাই বাহুল্য়। চিকিৎসকের মতে, প্রচুর মানুষ এই অঙ্গের অসুখে ভুগছেন। বিশেষত হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক। কম বয়সে হার্ট ফেলিওরের ঘটনাও দিন দিন বাড়ছে। এই সমস্যার পিছনে রয়েছে আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা। হৃদযন্ত্রের সুস্থতার জন্য উপকারী হচ্ছে প্রোটিনসমৃদ্ধ ডিম। হার্ট জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতিদিন ডিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

সারা বিশ্বে পুষ্টি ঘাটতি নিয়ে পুষ্টিবিদরা দাবি করছেন, শুধু ডিমের কুসুমই পারে পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করতে। কেননা এতে রয়েছে কপার, প্রায় সব ধরনের ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, সেলিনিয়াম, থিয়ামিন, ফোলেট, বি৬, বি১২, শতভাগ ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই এবং প্যানথোথেনিক এসিড।

অন্যদিকে ক্যারেটিনয়েডের খুব সহজলভ্য একটি উৎস হচ্ছে ডিম। এতে রয়েছে সহজেই পাচনযোগ্য লিউটিন এবং জিউজ্যানথিন- যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্যারোটিনয়েড চোখের কালো অংশ গঠন করে এবং বার্ধক্যজনিত ম্যাকুলার ডি- জেনারেশন বা বার্ধক্যজনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

অনেকের ধারণা, ডিমের কুসুম খেলে হার্টের ক্ষতি হয়। তাই স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ ডিমের কুসুম ফেলে দিয়ে শুধু সাদা অংশটুকু খেতেন। কিন্তু এখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ডিম হার্টের জন্য ক্ষতিকর’ কথাটি সত্য নয়। গবেষকদের মতে, ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল আছে, এ কথা সত্য। তবে যে ধরনের বা যে মাত্রার কোলেস্টেরল আছে; তার জন্য আর্টারি ব্লক কিংবা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হিসেবে ডিমের কুসুমকে দায়ী করা যায় না।

পুষ্টিবিদদের মতে, বেশিরভাগ সুস্থ মানুষ কোনো সমস্যা ছাড়াই প্রতিদিন একটি করে ডিম নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। তার মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ খাদ্যের মাধ্যমে যে ধরনের কোলেস্টেরল গ্রহণ করেন; তা রক্তের কোলেস্টেরল বাড়াতে তেমন কার্যকর ভূমিকা পালন করে না। কারণ মানুষের শরীর নিজ থেকেই কম মাত্রার কোলেস্টেরল উৎপাদন করে তা পুষিয়ে নেয়। তার মতে, স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স-ফ্যাট রক্তের কোলেস্টেরল বাড়াতে জোরালো ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আশার কথা হলো, একটি বড় মাপের ডিমে খুবই সামান্য পরিমাণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে এবং কোনোই ট্রান্স-ফ্যাট থাকে না।

চিকিৎসকের মতে, ডিম থেকে মেলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ। তাই ডিম খেতে হবে। ডিমের সাদা অংশে থাকে প্রোটিন। আর এই প্রোটিনের বায়োলজিক্যাল ভ্যালু বেশি। ফলে শরীরে সহজেই গৃহীত হয়। এছাড়া ডিমের কুসুমে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি। এই দুই ভিটামিন খুবই প্রয়োজন। পাশাপাশি নানা জরুরি খনিজ পূর্ণ হওয়ায় এই খাদ্য অত্যন্ত উপকারী। তাই ডিমের কুসুম নিয়ে ভয় পেলে চলবে না।

ডিমের কুসুম একটি উপকারী খাবার হওয়ার পরও কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। এই যেমন কিছু মানুষ মনে করেন যে ডিমের কুসুম খেলে হার্টের রোগ হয়। কথাটা একবারেই সত্যি নয়। এই জিনিস খেলে তেমন একটা সমস্যা হয় না বললেই চলে। বরং এই খাবার শরীরের জন্য উপকারী। তাই ডিমের কুসুম খেলে যে হার্টের অসুখ হয়, এই তথ্য ভুল। আসলে এই খাদ্যে কোলেস্টেরল থাকে বলে মানুষ এমন মনে করেন। যদিও তার থেকে সুস্থ শরীরে কোনো সমস্যা হয় না।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে যখন তুলনা আসে, তখন একই রকম উপকারী ডিমের কুসুমও। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং হৃৎপিন্ডের জন্য স্বাস্থ্যকর আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। তারা জানাচ্ছেন যে, সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী ডিমের কুসুম। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২। যা হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে এবং রক্তে লোহিত কণিকার বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। ডিমের কুসুম স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। এতে থাকা উপকারী উপাদান হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। ওজন দ্রুত কমাতে সাহায্য করে। ডায়েট মেনে যারা খাবার খাচ্ছেন, তাদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। ডিমের কুসুম হৃৎপিন্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।

চিকিৎসকের মতে, কিছু মানুষের হার্টের করোনারি আর্টারিতে প্লাক বা সহজে বললে নোংরা জমে। এই কারণে সেখানে রক্ত চলাচল হয় না। ফলে রোগীর করোনারি আর্টারি ডিজিজ হয়। এবার ডিমের কুসুমে রয়েছে কোলেস্টেরল। সেই উপাদান রক্তে মিশে আরও সমস্যা তৈরি করতে পারে। এমনকি হার্টে জমে খারাপ ফ্যাট। তাই হার্টের রোগ থাকলে ডিমের কুসুম এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কিন্তু ডিমের সাদা অংশ খেতে কোনো মানা নেই। এই অংশ খেতে পারেন।

সুস্থ মানুষ গোটা ডিম খেতেই পারেন। তবে বেশি খেলে শরীরে কোলেস্টরল বাড়ার আশঙ্কা তাকে। তাই দিনে একটার বেশি ডিমের কুসুম নয়। কিন্তু ডিমের সাদায় রয়েছে প্রোটিন। সেই অংশ খেতে পারেন নিজের প্রোটিনের চাহিদা অনুযায়ী।

শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়াটা হার্টের পক্ষে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কোলেস্টেরলের মধ্যে আবার ভাল-খারাপের ভাগ আছে। যদি শরীরে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে চান তাহলে নির্ভয়ে প্রতিদিন ২টা করে ডিম খান। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

হার্ট ভালো রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শ হলো- বাইরের তেল, ঝাল, মশলা নয়। মাখন, ঘি, বনস্পতি, চিজ বারণ। খান ফল, শাক, সবজি। এছাড়া দিনে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা চাই। তবেই ভালো থাকতে পারবেন অনায়াসে। তাই চিন্তার কোনো কারণ নেই বললেই চলে।

ঢাকাটাইমস/০১ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :