স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত কেন্দুয়ার প্রান্তিক জনগণ

প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:০৭ | আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৪৬

আশরাফ গোলাপ, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা)

প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে সেবা প্রত্যাশী জনগোষ্ঠীকে নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন রকম সেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদানের নিয়ম থাকলেও ব্যতিক্রম চিত্র নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায়। জেলার বৃহৎ এ উপজেলায় রয়েছে ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন এবং জনসংখ্যা রয়েছে ৪ লাখেরও অধিক। ১৩টি ইউনিয়নে ১৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও মিলছে না আশানুরূপ সেবা। ফলে কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে সেবা না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে এলাকার সাধারণ লোকজনকে। আবার দিনের পর দিন পেরিয়ে গেলেও খোলা হয় না কোনো কোনো স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কোনোটি সপ্তাহে দু-একবার খুললেও পলকেই আবার তা বন্ধ করে চলে যান সংশ্লিষ্টরা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিয়মিতভাবে এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শনের কথা থাকলেও কয়েক মাসেও তিনি কোনো খোঁজখবর নেন না। নানারকম অনিয়ম, চিকিৎসক না থাকাসহ পর্যাপ্ত জনবল ও আসবাবপত্রের সংকটের কারণে বর্তমানে মুখ থুবড়ে পড়েছে এসব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোর স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া, বলাইশিমুলসহ কয়েকটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র সরজমিনে ঘুরে এসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।

বেলা ১১টার দিকে আশুজিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গেলে কেন্দ্রটি খোলা পাওয়া যায়। তবে কোনো চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। এ সময় কথা হয় ইউনিয়নটির স্বাস্থ্য পরিদর্শিকা নাজমা বেগম, মিডওয়াইফ লাকী আক্তার লাবনী ও সেবা নিতে আসা স্থানীয় আশুজিয়া মানিক মিয়া, সেলিম আকন্দ, সিংহেরগাঁও গ্রামের গর্ভবতী নারী খুকুমণি আক্তার, নার্গিস আক্তারসহ বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষের সঙ্গে। 

মানিক মিয়া বলেন, এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর জন্য সরকার লাখ লাখ টাকা খরচ করছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ডাক্তার নাই, ওষুধ নাই। মাঝে মাঝে খোলা থাকলেও প্রায় দিনই বন্ধ থাকে। এসব দেখার যেন কেউ নেই।

তিনি আরও বলেন, কিছুদিন পূর্বে আমার বাচ্চাটার জ্বর হলে আমি এখানে ওষুধ নিতে এসে পাইনি। পরে দোকান থেকে কিনে নিতে হয়েছে।

আশুজিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিদর্শিকা নাজমা বেগম বলেন, আজ আমি এবং মিডওয়াইফ লাকী আক্তার লাবনী আছি। শরীফ শাওন নামে একজন এমএলএসএস রয়েছে। তবে সে আজ নাই।  আমি পরিবার পরিকল্পনার বিষয়টা দেখি। সপ্তাহে ৪ দিন এখানে বসি। কিন্তু এখানে স্বাস্থ্য বিভাগের ডাক্তার ও অন্যরা না থাকায় আমাকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।

ব্যবহার অনুপযোগী টয়লেট ও আসবাবপত্র সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গর্ভবতী নারীদের প্রশ্রাব পরীক্ষার জন্য টয়লেটটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটি ব্যবহার অনুপযোগী। এছাড়া বসে কাজ করার মতো চেয়ার-টেবিলও নেই। যেগুলো আছে সেগুলো ভাঙা।

এদিকে দুপুর দেড়টার দিকে বলাইশিমুল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গেলে সেটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। এ সময় কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা কাজল মিয়া, তোফাজ্জল হোসেন ও ইউনিয়নটির ৪,৫,৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনের ইউপি সদস্য কলি আক্তারসহ বেশ কিছু মানুষের সাথে।

ইউপি সদস্য কলি আক্তার অভিযোগ করে বলেন, এটা মূলত হাসপাতাল হলেও হাসপাতালের কোনো পরিবেশ এখানে নেই। তাই আমরা এটাকে বলি ভূতের গলি। এখানে কোনো ডাক্তার নাই। ওষুধ নাই। কোনো সেবা নাই। উল্টো এখানে নানারকম অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যক্রম সংগঠিত হয়। বিষয়টা আমি উপজেলার মিটিংয়েও বলেছি। কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না।

একই অবস্থা উপজেলার কান্দিউড়া, পাইকুড়া, নওপাড়া, মাসকা, রোয়াইলবাড়ি, সান্দিকোনা, গন্ডা, দলপা, গড়াডোবা, চিরাং এবং মোজাফরপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেরও।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এবাদুর রহমান মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তবে নেত্রকোণার সিভিল সার্জন ডা. সেলিম মিঞার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার জানা মতে কিছু ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের স্থাপনা নেই। তাই সেগুলোতে সেবা প্রদানে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। তবে যেগুলোতে স্থাপনা রয়েছে সেখানে অবশ্যই ডাক্তার থাকার কথা এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিয়মিত এগুলো ভিজিট করারও নিয়ম রয়েছে। এসব বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।   

(ঢাকাটাইমস/১ফেব্রুয়ারি/এআর)