ঝিনাগাতীতে শ্রমিক সংকটে পিছিয়ে যাচ্ছে বোর চাষ, কদর বাড়ছে নারী শ্রমিকের
শেরপুরের ঝিনাইগাতিতে অধিকাংশ লোক কৃষক ও প্রান্তিক চাষি। চাষাবাদ থেকে নিজেদের চাহিদার খাদ্য উৎপাদন করে এবং বাড়তি ফসল বাজারে বিক্রি করে পরিবারের অন্যান্য চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু এই বছর প্রকৃতির বৈরী আবহাওয়ার কারনে দির্ঘস্থায়ী হয় কুয়াশা এবং সেই সঙ্গে প্রচণ্ড ঠান্ডা। যে কারণে বোর চাষে মারাত্মক বাধা হয়ে উঠে প্রতিকূল পরিবেশ বর্তমানে ব্যাপক শ্রমিক সংকট হওয়ার কারণে পিছিয়ে পরছে বোর চাষ।
পুরুষ শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ার কারনে সীমান্তে বসবাস রত আদিবাসী নারী শ্রমিক দিয়ে বোর চাষের কাজ চলছে। আদিবাসী নারী শ্রমিকরা ধান রোপণে অনেক ভালো। কিন্তু চাহিদার তুলনায় নারী শ্রমিকের সংখ্যা তেমন একটা বেশি না। ৩০০-৪০০ নারী শ্রমিক রয়েছে। এসব নারী শ্রমিক হলো কোচ, হাজং ও গারো সম্প্রদায়ের প্রতিদিন বোর চাষিরা এই সমস্ত নারী শ্রমিকদের ধন্না ধরছে বোর চাষিরা।
উল্লেখ্য নারী শ্রমিকরা বোর ধানের চারা উত্তলন করতে পারে না। শুধু বোরো ধানের চারা রোপণ করতে পারে নারী শ্রমিকেরা। তাই বাধ্য হয়ে বোর চাষিরা পুরুষ শ্রমিকের দ্বারস্থ
হতে বাধ্য হচ্ছে। তাউ আবার নারী শ্রমিকের চাইতে ২০০ টাকা বেশি দিতে হয়। বর্তমানে প্রতিটি শ্রমিকের দৈনিক মুজুরি মহিলা ৫শ’ থেকে ৬০০ টাকা আর পুরুষ শ্রমিকের মুজুরি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। প্রকাশ থাকে যে যদি নারী শ্রমিক না পাওয়া যেত তাহলে চলতি বোর মৌসুম চাষাবাদ করা মারাত্বক ভাবে ব্যাহত হতো। বর্তমানে বোর চাষিরা পুরুষ শ্রমিক দিয়ে বোর চারা উত্তলন করে আর নারী শ্রমিক দিয়ে বোর চারা রোপণ করে। এই ধিরগতির কারণে চলতি বোর মৌসুম চাষাবাদে কৃষকরা পিছিয়ে পড়ছে। পুরুষ শ্রমিক সংকটের কারণ হিসাবে জানা যায় অধিকাংশ পুরুষ শ্রমিক বাড়তি আয়ের জন্য বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত হয়েছে।
পুরুষ শ্রমিকরা সংসারের অভাব অনটন পূরণ করতে অটো-বাইক, ভেন, সি.এন.জি, ট্রলি, ভটভটি, পিকআপ ভেন, রিকশাসহ বিভিন্ন পরিবহনে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে পুরুষ শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিকদের কাছে থেকে জানা যায় যে শুধু আমন ও বোর মৌসুমের সময় ধান কাটা আর লাগানো ছাড়া তাদের হাতে আর কোন কাজ থাকে না। তাই তারা মৌসুমিয় সময়ে কাজ করে তাদের পরিবারের ব্যয়ভার মেটানো সম্ভব হয় না।
তাই দৈনিক আয় করার জন্যই ধান কাটা মাড়াইয়ের পরিবর্তে বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত হয়েছে। তাই শ্রমিক সংকট কাটাতে হলে যান্ত্রিকভাবে ধান কাটা মাড়াইয়ের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু অত্র উপজেলা সিংহভাগ লোক দরিদ্র কৃষক ও প্রান্তিক চাষি। এই সমস্ত প্রান্তিক চাষি ও দরিদ্র কৃষক এর পক্ষে যান্ত্রিক মেশিন ক্রয় করা সম্ভব না। তাই দরিদ্র কৃষকদের উৎপাদনের সুবিধার্থে বিনামূল্যে বা অর্ধ-মূল্যে কিস্তির মাধ্যমে ধান কাটা মাড়াই রোপণ ও চাষের জন্য কৃষি যন্ত্রগুলো প্রদান করা জরুরি প্রয়োজন বলে বিজ্ঞমহল মনে করে। তাহলে এক দিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হবে অপর দিকে দেশের উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এই সব যান্ত্রিক সুবিধা। অনেক কৃষকের কাছে জানা যায় শ্রমিক সংকটে বোর মৌসুমে পাকা ধান কাটার অভাবে হঠাৎ বন্যায় সমস্ত ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যদি যান্ত্রিক সুবিধা গুলি কৃষকরা পায় তাহলে বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে দরিদ্র কৃষকরা।
(ঢাকাটাইমস/৩ফেব্রুয়ারি/এআর/এসএ)