পঞ্চগড়ে মেয়ের শ্লীলতাহানির বিচার না পেয়ে বাবার আত্মহত্যা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৪৩

পঞ্চগড়ে কলেজ পড়ুয়া একমাত্র মেয়ের শ্লীলতাহানির বিচার চেয়ে প্রতিকার না পেয়ে গজেন চন্দ্র বর্মন (৫০) নামে এক বাবা আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার মধ্যরাতে সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নে নিজ বাড়ির পাশে ওই ব্যক্তির গলায় ফাঁস দেওয়া গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন দুপুরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, মেয়ের শ্লীলতাহানির অভিযোগ করে ইউপি চেয়ারম্যানের গাফিলতির কারণে বিচার পাননি গজেন চন্দ্র বর্মন। এ কারণে হতাশা থেকে তিনি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন।

অপরদিকে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান।

মৃতের স্বজনরা জানান, গত ১৭ জানুয়ারি উপজেলা সদরের মাগুড়া ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি এলাকার শ্যামল চন্দ্র বর্মনের ছেলে পলাশ চন্দ্র বর্মন ওই কলেজ ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করে। এলাকায় আত্মসম্মানের ভয়ে থানায় না গিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে বিচার দাবি করেন বাবা গজেন চন্দ্র বর্মন। বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহার আশ্বাসও দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন। কিন্তু ঘটনার ১৫ দিনেও প্রতিকার না পেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করেন গজেন চন্দ্র বর্মনের পরিবার।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, নিহত গজেন চন্দ্র বর্মনের মেয়েকে প্রতিবেশী পলাশ বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তবে মেয়ের পরিবার বিয়েতে রাজি না হলে পলাশ ওই কলেজ ছাত্রীকে পালিয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় ১৭ জানুয়ারি রাতে পলাশ চন্দ্র তাকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাসহ শ্লীলতাহানি করেন। এ সময় বাধা দিলে তিনি কলেজ ছাত্রীসহ তার এক চাচাকে মারধর করে পালিয়ে যান।

পরে আহত অবস্থায় কলেজ ছাত্রীকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর থেকে আত্মসম্মানের ভয়ে থানায় অভিযোগ না করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিকার চান গজেন চন্দ্র বর্মন। কিন্তু দিনের পর দিন ঘুরেও প্রতিকার না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি।

নিহত গজেন বর্মনের ছেলে সুজন বর্মন বলেন, আত্মসম্মানের ভয়ে আমরা থানায় যাইনি। তবে আমরা পলাশের বিচার দাবি করলে চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন বিষয়টি সুরাহা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। এরপর থেকে বিচারের জন্য আমরা ঘুরতে থাকি। গত ১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু সেখানেও বৈঠক হয়নি। আমরা ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কিত ছিলাম। মূলত বিচার না পেয়ে আত্মসম্মানের কারণে রাতে আমার বাবা কাউকে কিছু না বলে আত্মহত্যা করেন। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন বলেন, ১৭ জানুয়ারির ঘটনা আমাকে ১৮ জানুয়ারি জানানো হয়। আমি অভিযোগ পেয়েই উভয় পক্ষকে নোটিশ করেছি। প্রথমে বৈঠকে পলাশ হাজির হয়নি। সর্বশেষ ১ ফেব্রুয়ারি উভয় পক্ষকে নিয়ে বসার কথা ছিল। কিন্তু এই বৈঠকে কোনো পক্ষই আসেননি। তারা না আসলে আমি কীভাবে কী করতে পারি। তাছাড়া ঘটনার পর থেকেই মেয়ের বাবাকে আমি আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেই। পরে জানতে পারি তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞা বলেন, আত্মহত্যার খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পূর্বের কোনো বিষয় ছিল কিনা আমরা কিছুই জানি না। কেউ কোনো অভিযোগও করেননি। অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/৩ফেব্রুয়ারি/এসএ/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :