ধূমপানের নেশা ছাড়তে কার্যকরী কৌশল

প্রকাশ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৬

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। ধূমপান করলে যে কেবল শুধু ধূমপায়ীর ক্ষতি হয় তাই নয় বরং তার আশপাশে থাকা লোকজনেরও ক্ষতি হয় সমানভাবে। সিগারেটে ৫৭টি মারাত্মক রাসায়নিক উপাদানের সন্ধান পাওয়া গেছে যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তেমনি একটি হলো নিকোটিন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে দুটি সিগারেট এ যে পরিমাণ নিকোটিন আছে তা যদি একটি সুস্থ মানুষ এর দেহে ইঞ্জেক্ট করে দেয় তাহলে সে মানুষটি তখনি মারা যাবে। ধূমপানের অভ্যাস থেকে দূরে থাকুন।

কোনও ব্যক্তি সারাদিনে ১টা মাত্র সিগারেটও খান, তাহলেও তার মধ্যে হৃদরোগের হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সেই ব্যক্তির মধ্যে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক এবং ফুসফুসের ক্যানসারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু তার পরও এই বদঅভ্যাস ত্যাগ করতে পারেন না অনেকেই।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ধুমপান এমন একটা অভ্যাস, যা একবার শুরু করলে, ছাড়া মুশকিল হয় কিন্তু অসম্ভব নয়। তারপরও তারা জানাচ্ছেন, যেকোনও অভ্যাসই যদি মানুষ মনে করে ত্যাগ করবে, তাহলে তা ত্যাগ করা সম্ভব। তার জন্য কিছু সহজ পদ্ধতি মেনে চলা প্রয়োজন।

অধিংকাংশ লোক সিগারেটের কুফল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। অনেকে এমনও আছেন, যারা ধূমপান মন থেকে ছাড়তে চান। তবু পেরে ওঠেন না। অফিসে কোনও রকম সমস্যা হলেই নীচে গিয়ে একটা সিগারেটে টান না দিলে নাকি উদ্বেগ কমে না। কর্মক্ষেত্রে চাপ, সংসারিক টানাপড়েনের কারণে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে জীবনে। মানসিক চাপ কমাতে পারলেই ধূমপানের আসক্তিও কমবে। মানসিক চাপ কমতে পারে যোগাসনের গুণে। কিন্তু নিয়মিত কোন আসন করলে এবং যেসব পন্থা অবলম্বন করলে আপনি নিত্য জীবনের উদ্বেগ কমাতে পারেন, তা জেনে নিন।

 

উষ্ট্রাসন

উষ্ট্রাসন আসন রক্ত চলাচল বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে মস্তিস্কে বেশি অক্সিজেন যায়। মন অনেক শান্ত হয়। মাটিতে হাঁটুর উপর ভর করে বসে শরীর পিছনের দিকে হেলিয়ে দিয়ে দু’হাত দিয়ে দুই পায়ের গোড়ালি ধরুন। আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন।

 

সেতু বন্ধাসন

সেতু বন্ধাসন আসনও শরীরের রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। শিরদাঁড়ার জন্যেও এ আসন খুব ভাল। মাটিতে শুয়ে পড়ুন। তার পর হাঁটু ভাঁজ করে সামনের দিকে নিয়ে আসুন। এ বার শরীরটা হাওয়ায় তুলে দু’হাত দিয়ে দুই পায়ের গোড়ালি ধরুন। কয়েক সেকেন্ড এই অবস্থায় থেকে শবাসনে ফিরে আসুন।

 

ভদ্রাসন

যোগব্যায়ামের অন্যতম সহজ ও সাধারণ আসন ভদ্রাসন। কিন্তু আপনার পায়ের মাংসপেশিগুলি স্ট্রেচ করার জন্য দারুণ ব্যায়াম এটি। নিয়মিত করলে মনও অনেক শান্ত হবে। মাটিতে বসে দু’পায়ের পাতা একে অপরের সঙ্গে জুড়ে নিন। হাতের পাতা দু’টিও রাখুন পায়ের পাতার উপর।

 

বালাসন

যোগাসনের সবচেয়ে রিল্যাক্সিং আসন বালাসন। ইংরেজিতে এর নাম ‘চাইল্ডস পোজ’। মন শান্ত করার জন্য এই আসনের জুড়ি মেলা ভার। হাঁটু মুড়ে গোড়ালির উপর বসুন। এ বার শরীরটা বেঁকান। শরীরটা এমন ভাবে বেঁকান যাতে বুক গিয়ে উরুতে ঠেকে। মাথা মেঝেতে রাখুন। আর হাত দু’টি সামনের দিকে প্রসারিত করে রাখুন। এই আসন স্নায়ুতন্ত্রের জন্য খুব উপকারী। সেই সঙ্গে ঘাড় ও পিঠের ব্যথা কমাতেও এর জুড়ি নেই।

 

ধ্যান

শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করলে মনের দুশ্চিন্তাগুলো অনেকটা কমানো সম্ভব। ১০-১৫ মিনিট চুপ করে ধ্যান করলেও উপকার পাবেন।

 

'কুইট শিওর' অ্যাপ

'কুইট শিওর' অ্যাপের মাধ্যমেও ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনের মতো ক্ষতিকর অভ্যাস খুব সহজেই ত্যাগ করা সম্ভব।  অ্যাপটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, খুব সহজেই মাত্র ৬ দিনেই ছাড়া যাবে ধূমপানের ক্ষতিকর অভ্যাস। ধূমপান ছাড়ার জন্য প্রতিদিন তাদের অ্যাপে ঘণ্টা দেড়েক সময় কাটাতে হবে। এই অ্যাপে দেওয়া কিছু আর্টিকেল পড়তে হবে। ভিডিও দেখতে হবে এবং যেমন নির্দেশ দেওয়া থাকবে, তেমন শরীরচর্চাও করতে হবে। আর এর মাধ্যমেই ধূমপানের মতো ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে মুক্তি পেতে পারবেন ধূমপায়ীরা।

 

যেসব খাবার ধূমপানের নেশা থেকে মুক্তিলাভ সম্ভব

মধু: মধুর বেশ কিছু ভিটামিন, উত্সেচক এবং প্রোটিন শরীর থেকে নিকোটিন বের করে দেওয়ার পাশাপাশি সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছাকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণ মধু সেবনের মাধ্যমে ধূমপান ছাড়তে কোনও অসুবিধাই হয় না।

আদা: ধূমপানের নেশা ছাড়াতে চাইলে আদার ব্যবহার করা যেতে পারে। আদা চা বা কাঁচা আদা নিয়মিত খেলে ধীরে ধীরে ধূমপানের ইচ্ছে কমে যায়। ধূমপানের ইচ্ছে হলেই যদি এক টুকরো কাঁচা আদা মুখে দেওয়া যায় তাহলে ধূমপানের ইচ্ছা প্রশমিত হবে অনেকটাই।

মূলা: ১ গ্লাস মূলার রসের সঙ্গে পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে দিনে দু'বার করে নিয়মিত খেলে ধূমপানের ইচ্ছা একেবারে কমে যায়। শুধু ধূমপানের অভ্যাসই নয়, যে কোনও ধরনের নেশামুক্তির ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞরা মূলার উপরই ভরসা রাখেন।

মরিচের গুঁড়া: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নানাভাবে যদি নিয়মিত মরিচের গুঁড়া খাওয়া যায়, তাহলে ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ধূমপান করার ইচ্ছাও কমতে থাকে। এক গ্লাস পানিতে অল্প পরিমাণ (এক চিমটে) মরিচের গুঁড়া ফেলে সেই পানি পান করা যায়, সেক্ষেত্রে দারুন উপকার পাওয়া যেতে পারে।

আঙুরের রস: ধূমপানের ফলে শরীরের ভিতরে নিকোটিনের মাধ্যমে জমতে থাকা টক্সিন বেরিয়ে গেলেই ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, ধূমপানের ইচ্ছাও কমতে শুরু করে। আর আঙুরের রস ফুসফুসকে টক্সিন-মুক্ত করতে সাহায্য করে।

 

এছাড়া ধূমপান থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে চিকিৎসকের মতে নিম্নোক্ত পন্থাগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।

আজ এখুনি ধূমপান ছাড়ার প্রতিজ্ঞা করুন। টেবিল কিংবা পকেটে রাখা সিগারেটের প্যাকেট ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলুন।

একদিন ধূমপান না করে দেখুন। এরপর পার্থক্য অনুভব করার চেষ্টা করুন। এরপর দুইদিন , তিনদিন ধূমপান থেকে দূরে থাকুন। তাহলে অভ্যাস গড়ে উঠবে।

আপনার আশপাশে যারা ধূমপান বর্জন করেছে তাদের অনুসরণ করুন। তাদের স্বাস্থ্যগত কী পরিবর্তন এসেছে সেটি জানার চেষ্টা করুন।

একটা হিসেবে করে দেখুন তো সিগারেট কিংবা তামাকজাত পণ্যের জন্য প্রতিমাসে আপনার কত টাকা খরচ হয়? হিসেব করে দেখলে ধূমপান ছাড়া আপনার জন্য সহজ হবে। সে টাকা জমিয়ে অন্য খাতে খরচ করতে পারেন।

আপনার ধূমপায়ী বন্ধুদের সঙ্গ সুকৌশলে এড়িয়ে চলুন। সিগারেট ছাড়ার পর মুখে চুইংগাম কিংবা আদা চিবোতে পারেন। তাহলে ধূমপানের প্রতি আকর্ষণ কমে আসবে।

যে সময়টিতে আপনার ধূমপান করতে ইচ্ছা করবে সে সময়ে রাস্তায় হাঁটুন। তাহলে ধূমপানের চাহিদা থাকবে না। যে কোন জায়গায় ধূমপান কর্নার থেকে দূরে থাকুন।

ধূমপান বিরোধী এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার বই পড়তে পারেন। নিরুপায় হলে সর্বশেষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে কাউন্সেলিং-এর সহায়তা নিতে পারেন।

ঢাকাটাইমস/০৪ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)