ডলার সংকট: ২০০ কোটি টাকার দেশি-বিদেশি জালনোট ছড়ানোর পরিকল্পনা ছিল জালিয়াত চক্রের
ডলার সংকটের সুযোগে ডলার ও রুপির জাল নোট তৈরি করে বাজারে ছাড়ছে একটি চক্র। অনেকেই কম দামে এসব জাল মুদ্রা কিনে হচ্ছেন প্রতারিত। জাল রুপি ও ডলার তৈরি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ( গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
সবাইকে ব্যাংক অথবা অনুমোদিত জায়গা থেকে ডলার কেনার অনুরোধ জানিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, ‘শুধু জাল ডলার ও রুপি ভারতে পাচার করাই নয়, রমজান ও ঈদুল ফিতর সামনে রেখে প্রায় ২০০ কোটি টাকার দেশি-বিদেশি জাল নোট বাজারে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল চক্রটি।’
তিনি বলেন, গত বুধবার রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা-তেজগাঁও বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ, গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিম। গ্রেপ্তাররা হলেন- উজ্জল দাস ওরফে সোবহান শিকদার, আব্দুর রশিদ, মমিনুল ইসলাম ও শাহ মো. তুহিন আহমেদ ওরফে জামাল। তাদের কাছ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, ২৭ লাখ টাকার বাংলাদেশি জাল নোট, বাংলাদেশি ২০০ টাকার নোট সদৃশ জাল টাকা বানানোর ২টি তামার প্লেট, ১৩টি জাল টাকা তৈরির স্ক্রিন ফ্রেম, বিভিন্ন সাইজের জাল টাকা তৈরির সিকিউরিটি সুতা, ২টি জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির পজিটিভ (ফর্মা), ৯টি ফয়েল পেপার, ২টি জাল টাকা কাটার কাজে ব্যবহৃত গ্লাস, ১০টি ট্রেচিং পেপার, ২৫টি রঙের কৌটা, ১টি হটগান, ১টি লেমিনেটিং মেশিন, ১টি ল্যাপটপ, ১টি প্রিন্টার, ২টি ডাইস, ১০টি স্ক্রিন তৈরির কাপড়, ১০০০ পাতা সিকিউরিটি সুতাযুক্ত সাদা কাগজ, ১,২১০ পাতা সাদা কাগজসহ জাল টাকা, রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও বিদেশি জাল মুদ্রা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ আরও বলেন, গোপন সংবাদে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল নোট ও জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির জালিয়াতিচক্রের মূলহোতা উজ্জ্বল দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যেরভিত্তিতে দারুস সালাম থানার একটি বহুতল ভবনের ৫ম তলার ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন দেশের জাল মুদ্রা, রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও তৈরির সরঞ্জামাদিসহ রশিদ, মমিনুল ও তুহিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তাররা মতিঝিল থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ, নয়াবাজার ও মিটফোর্ট থেকে রঙ, ফয়েল ও পজিটিভ সংগ্রহ করে জাল নোট ও জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করে থাকে। বিশ্ববাজারে ডলার সংকট চলমান থাকায় গ্রেপ্তাররা ভারতীয় জাল রুপি ও মার্কিন জাল ডলার বিদেশে পাচার করছে। কম মূল্যমানের ১০০ ও ২০০ টাকার নোটও জাল হচ্ছে, যা প্রায় খালি চোখে ধরা অসম্ভব। বিশেষত ২০০ টাকা সদৃশ পিতল বা তামার তৈরি প্লেট দিয়ে প্রস্তুতকৃত জাল টাকা আসল টাকার মতোই নিখুঁত বলেও জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তাররা দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধভাবে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় স্বল্প মেয়াদে বাসা ভাড়া নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করে। এরপর তারা বাংলাদেশি বিভিন্ন মূল্যমানের জাল নোট, ভারতীয় রুপি, মার্কিন ডলার, বিভিন্ন মূল্যমানের জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তেরি করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় করত। গ্রেপ্তারদের কাছে যে পরিমাণ জাল টাকা তৈরির কাগজ ও অন্যান্য উপকরণ পাওয়া গেছে, তা দিয়ে তারা আগামী ঈদুল ফিতরের আগে প্রায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যমানের দেশি ও বিদেশি জাল মূদ্রা এবং রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করে বাজারজাত করতে চেয়েছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় একটি মামলা করা হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
(ঢাকাটাইমস/০৪ফেব্রুয়ারি/এএ/কেএম/আরআর/আরকেএইচ)